মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫
ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত আনুপাতিক হারে বাড়ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি এবং বিভিন্ন গবেষণা। এবার স্কটল্যান্ডের গবেষকেরা তৈরি করেছেন একটি বিশেষভাবে তৈরিকৃত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) টুল।
যার সাহায্যে চোখ পরীক্ষা করেই শনাক্ত করা যাবে ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। চোখের রেটিনার ছবির মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। একইসাথে এসব ছবি বিশ্লেষণ করে এআই সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা রোগের লক্ষণ আগেই শনাক্ত করতে পারবেন।
গবেষণাটির জন্য স্কটল্যান্ডে প্রায় এক মিলিয়ন (১০লক্ষ) চোখের স্ক্যান সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকেরা। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় চোখের তথ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এসব তথ্যকে কাজে লাগিয়ে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে একটি অ্যালগরিদম তৈরি করা হয়েছে। সেটি চোখের রক্তনালিগুলোর অবস্থা মূল্যায়ন করতে পারে।
স্কটিশ এ গবেষণা দল আশা করছে, ২০২৬ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তি স্কটল্যান্ডের অপটিশিয়ানদের কাছে আরও বিস্তৃতভাবে চালু হবে। এর মাধ্যমে ডিমেনশিয়ার মতো গুরুতর রোগগুলো আরও দ্রুত এবং আগাম শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এতে রোগীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আগেই সচেতন হওয়া সম্ভব হবে।
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অপথালমোলজি বিভাগের অধ্যাপক বালজিয়ান ধিলন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘চোখ থেকে আমরা অনেক ধরনের তথ্য পেতে পারি, যা আগে জানা ছিল না। রেটিনায় মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক তথ্য থাকে। চোখের একটি সাধারণ ছবি দিয়েই আমরা ভবিষ্যতে মস্তিষ্কে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, সেটি বলতে পারব।’
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বিশেষজ্ঞ ইয়ন ক্যামেরন বলেন, ‘চোখ একটি বিশেষ অঙ্গ। এর মাধ্যমে শুধু শরীরের অন্যান্য অংশ; যেমন হার্ট, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও মস্তিষ্কের সমস্যার লক্ষণ বোঝা যায়। চোখের মাধ্যমে আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।’
ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলোর সঠিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে স্মৃতি, চিন্তা এবং ভাষার সমস্যা হয়। এই রোগের কোনো নিরাময় পদ্ধতি নেই। তবে দ্রুততম সময়ে শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। পাশাপাশি রোগীর পরিবারও এ বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারে।
উল্লেখ্য, ডিমেনশিয়া মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত রোগ। এ রোগে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি, স্মৃতিশক্তি এবং ব্যক্তিত্বের ধরন পরিবর্তন হয়ে যায়। সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের পর ডিমেনশিয়া সমস্যাটি শুরু হয়।
অনেক ধরনের ডিমেনশিয়া রয়েছে, যার মধ্যে আলঝেইমার্স ডিজিজ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের যে স্নায়ুকোষগুলো আছে তার মধ্যে এক ধরনের প্রোটিন জমা হয়, এক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু প্লাক বসে। ফলে মানুষের ভেতরে চিন্তার ক্ষমতা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব এবং ভুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
প্ল্যাটফর্ম/