১৫ এপ্রিল ২০২০
ডা. শায়লা সুলতানা
আমি একজন অপরাধী মা। অপরাধী কারণ আমি আমার সন্তানকে তার মায়ের আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত করছি।
আমি একজন মেডিকেল সনোলজিস্ট- মানে এক্সরে, ইকুকার্ডিওগ্রাম, আল্ট্রাসনোগ্রাম এসব পেশেন্টের সাথেই আমার বাস। উল্লেখ্য এই যে আমি করোনায় একজন ফ্রন্টলাইন ফাইটারের কেউইনা।
এক বেসরকারি হাসপাতালে আমার এই সনোলজিস্টের চাকরি। করোনা আতংক শুরু হবার পর আমাদের প্রোটেকশন লাগতে পারে বিষয়টি বার বার অবহিত করার পরও জিনিস টা কারো মাথায় ছিল না।
চাইলেই, বহিঃবিভাগ সেবাগুলো বন্ধ করা যেতো, হয়তো সেটাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় নি। আমাদের কাজ চলছিলো নিজেদের কেনা মাস্ক আর হাসপাতালের ডিজপোজেবল গাউন দিয়ে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস বহিঃবিভাগে রোগী দেখতে গিয়েই সংস্পর্শে আসি করোনা পজিটিভ রোগীর। যেহেতু লিম্ব ডপ্লার (আল্ট্রায় ব্যবহৃত যন্ত্র) কাজেই সংস্পর্শে ছিলামও বেশিক্ষণ ধরে। এরপরও হাসপাতাল কতৃপক্ষ কর্ণপাত না করায় কাজ চালিয়ে যাই।
আমি জানি না কেন সবাই জিনিসটাকে সিরিয়াসলি নিতে চাচ্ছিলেন না। গতকাল পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে দুইজন সিস্টার পজিটিভ যারা আমার সাথেই ছিলো। আমি এখনো টেস্ট করি নি। আমার নিজের এবং হাসপাতালের ইনফেকশন কন্ট্রোল এর পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় আইসোলেশনে আছি। ২০ই এপ্রিল টেস্ট করাবে তারা বলল। আমারও নিজের জন্য আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা কতজন কে ইনফেকটেড করে ফেললাম জানিনা-এর দায় কার আমার জানা নেই।
আপাতত বাসায় মা-কন্যা ভিডিও কলে কথা বলছি; যদিও বাচ্চাটা মন খারাপ করছিলো মাঝে মাঝেই। সে তার মাকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। কেমনে বুঝাই রোগীর আল্ট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে তার মা অস্পৃশ্য হয়ে গিয়েছে?
কাজেই আমার মত যারা সনোলজিস্ট আছেন একটু বুঝে শুনে কাজ করবেন। নিজের সেফটি মাথায় রেখে; কারন মাথার উপরে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ আছে কিনা জানা নেই। ভালো থাকুন সবাই। সাবধানে থাকুন।
দিনশেষে বাচ্চাটার কাছে আসার আকুতির কাছে আমি অপরাধী মা।