অতি সাম্প্রতিক সময়ের গবেষনায় দেখা গেছে, ডেন্টাল সার্জনদের মাঝে “পেশাগত অবসাদগ্রস্থতা (professional stress)” সহ শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য পেশাজীবিদের থেকে তুলনায় অনেক বেশি। ডেন্টাল সার্জনদের মাঝে শারীরিক ও মানসিক রোগগুলো হলো cardiovascular disease, ulcer, colitis, hypertension, lower back pain, eye strain, marital disharmony, alcoholism, drug addiction, mental depression ও suicide এর প্রবণতা।
আসুন দেখি গবেষনা ও পরিসংখ্যান কি বলছে,
১। সুইসাইড রেটঃ- সাধারন মানুষের তুলনায় ডেন্টাল সার্জনদের মাঝে সুইসাইড রেট দুই গুন এবং মেডিকেলের অন্যান্য শাখার পেশাজীবীদের তুলনায় তিন গুন বেশি।
২। মানসিক অসুস্থ্যতাঃ- মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার তালিকায় ডেন্টাল সার্জনরা আছে তিন নম্বরে, যেখানে জেনারেল পিপলরা আছে ১০ নম্বরে।
৩। করনারী ডিজিজ ও উচ্চ রক্তচাপঃ- সাধারন জনগনের তুলনায় ২৫% ভাগ বেশি আক্রান্ত হয় ডেন্টাল সার্জনরা।
২। মানসিক অসুস্থ্যতাঃ- মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার তালিকায় ডেন্টাল সার্জনরা আছে তিন নম্বরে, যেখানে জেনারেল পিপলরা আছে ১০ নম্বরে।
৩। করনারী ডিজিজ ও উচ্চ রক্তচাপঃ- সাধারন জনগনের তুলনায় ২৫% ভাগ বেশি আক্রান্ত হয় ডেন্টাল সার্জনরা।
৪। সাইকো-নিউরোটিক ডিজঅর্ডারঃ- মেডিকেলের অন্যান্য শাখার পেশাজীবীদের তুলনায় ডেন্টাল সার্জনরা দেড়গুন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
৫। স্ট্রেস রিলেটেড কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজঃ- পৃথিবীতে এই রোগে ডেন্টাল সার্জনরাই সর্বাধিক মারা যাচ্ছে, তাই একে বলা হয় #১ কিলার অফ ডেন্টিষ্ট।
কেন আমাদের এই প্রফেশনে এতো স্ট্রেস রিলেটেড মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক সমস্যা? আসুন এর কারনগুলো দেখি-
১। Confinement বা কারাবাসঃ
একজন ডেন্টাল সার্জন তার জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করে একটা ছোট্ট ১০x১০ ফিট, ক্ষেত্র বিশেষে জানালাবিহীন, প্রজনসেল এর মত বদ্ধ পরিসর কক্ষে এবং তাদের কাজের জায়গাটাও স্যাতস্যাতে, খুবই ছোট ও ক্ষুদ্র ছিদ্র বিশিষ্ট মুখ গহবরে। কাজ করতে হয় প্রচন্ড মানসিক ও শারীরিক ভাবে চাপ নিয়ে। ফল সরূপ, স্ট্রেইন, পিঠের ব্যথা, সারকুলারি ডিজঅর্ডার এবং মাথা ব্যাথা ও মাথা ঘুরা হয়ে যায় নিত্য দিনের সঙ্গী এবং পরিশেষে একটা সময় পর এসে ডেন্টাল সার্জনরা হয়ে যায় মানসিক ও শারীরিক ভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত (Burnout)।
২। Isolation বা বিচ্ছিন্নতা
বেশির ভাগ ডেন্টাল সার্জন একা প্র্যাকটিস করে থাকে। ফল সরূপ, একটা সমস্যা নিয়ে তারা মেডিকেলের অন্যান্য শাখার ডাক্তারদের মত পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আলোচনা ও সমস্যার সমাধান করতে পারেন না।
এই একাকিত্বের একটি বড় কারন এই যে বেশির ভাগ ডেন্টাল সার্জন অন্য ডেন্টাল সার্জনদের তার প্রতিপক্ষ মনে করে। অন্যকে প্রতিপক্ষ মনে করার এই শিক্ষা আমরা আমাদের ডেন্টাল কলেজের শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শেখার প্রতিদন্দিতামুলক পরিবেশ থেকেই পেয়ে থাকি এবং গ্রেজুয়েশন শেষ করার পরেও এই মানসিকতা চলতে থাকে, ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামুলক বাজার এই মানসিকতাকে আরও উসকে দেয়।
৩। Stress of perfection:
পেশেন্টের মুখ ও দাঁতের সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে ভাল সেবা দেওয়ার মানসিকতা ডেন্টাল সার্জনদের মনে অতিরিক্ত চাপ ও অস্থিরতা তৈরি করে। এই ভাল সেবা দেওয়ার মানসিকতা ডেন্টাল কলেজগুলোতেই তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু প্রফেশনে নিয়মিত হওয়ার পর ভাল মানের সেবা দেওয়ার ইচ্ছার সাথে অসামঞ্জস্যতা, রোগিদের দ্বারা অবহেলার স্বীকার, কোয়ালিটি সম্পন্য কাজের বিপরীতে প্রাপ্ত আয়ের অপূর্ণতা সহ আরও অনেক বাস্তবধর্মী সমস্যা সামনে আসে।
৪। অর্থনৈতিক চাপঃ
পেশাগত জীবন শুরু করার আগে মানে শিক্ষা জীবনে এবং পেশাগত জীবন শুরু করার সময় একজন ডেন্টাল সার্জনকে একটি বড় পরিমাণের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় এবং একটি প্রাইভেট চেম্বার চালু করার পর তা জমে উঠতে যথেষ্ট সময় লাগে। অনেক সময় এই অর্থ লোনের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়ে থাকে যা লগ্নিকৃত অর্থের চেয়ে অনেক বেশি। জীবনের অনেকটা সময় অর্থ শোধ করতেই একজন ডেন্টাল সার্জনকে ব্যয় করতে হয়।
ঠিক ভাবে চেম্বার স্থাপন ও পরিচালনার পরেও নিত্য নতুন ক্রমবর্ধমান উন্নত প্রযুক্তি ও আপগ্রেডেশন এর জন্য চেম্বারের উপর নতুন করে বিনিয়োগ করতে হয়। যার ফলে একজন ডেন্টাল সার্জনকে তার স্বাভাবিক কর্ম ঘণ্টার পরেও কাজ করতে হয় যা তাকে মানসিক ভাবে অসুস্থ্য করে তুলে। এই চাপ তাকে খিটমিটে মেজাজি করে তুলে যার ফলে তার পেশেন্ট ও কর্মচারি ও পরিবারের লোকদের সাথে দুরত্ব তৈরি হয়।
৫। Time pressure:
এটা আমরা সবাই জানি, ৮০% পেশেন্ট তাদের ইচ্ছামত সময়ে আসে এবং এপোয়েন্টমেন্ট টাইম ফলো করে না। ডেন্টাল পেশায় Murphy’s Law খুব চলে, “if anything can go wrong, it will go wrong and usually at the wrong possible time”. ডেন্টিষ্ট্রিতে এটা তো খুব কমন একটা জিনিস যে আপনি একটা ট্রিটমেন্ট প্লান এর জন্য যে সময় ধরে রাখবেন ৯০% ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি সময় লাগবে এবং পরবর্তী কাজে আপনি পিছিয়ে যাবেন।
৬। Compromise treatment frustration:
ডেন্টাল কলেজে চার বছর ধরে পড়ার সময় আমরা শিখি কিভাবে সর্বোচ্চ ভাল সেবাটা আমরা পেশেন্টদের দিতে পারবো। কিন্তু প্রাইভেট প্র্যাকটিস জীবনে এসে যার প্রতিফলন ঘটানো অসম্ভব হয়ে পরে। মধ্যম আয়ের সংখ্যা গরিষ্ঠতা, দাঁতের চিকিৎসার প্রতি অবহেলা ও দাঁতের যত্ন এর পিছনে অর্থ ব্যয়ের না করার মানসিকতা ব্যয়বহুল ট্রিটমেন্ট প্লান থেকে ডেন্টাল সার্জনদের সড়ে আসতে বাধ্য করে। ভাল ট্রিটমেন্ট দেওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এসেও ডেন্টাল সার্জনরা তাদের ইচ্ছা সত্যেও কোয়ালিটি ট্রিটমেন্ট দিতে পারে না এবং কোয়ালিটির সাথে অর্থের সমঝোতা করে।
৭। Patient anxiety:
নতুন একটি এভিডেন্স বেইজড গবেষনায় দেখা গেছে যে, ডেন্টাল ট্রিটমেন্ট চলা কালে পেশেন্ট ভয় ও দুশ্চিন্তায় যে সকল Physiological Stress Responses এর ভিতর দিয়ে যায়, যেমন, increase heart rate, high blood pressure, sweating etc , তা ওই ডেন্টাল সার্জন এর ভিতরও সঞ্চালিত হয়। এর কারনে ডেন্টাল সার্জনরা early heart attack এ আক্রান্ত হতে পারে।
৮। Dentist’s personality
গবেষকরা একজন ভাল ডেন্টাল সার্জন এর যে বৈশিষ্ট তুলে ধরেছে সেই বৈশিষ্টের আধিক্যকেই ডেন্টাল সার্জনদের নারভাস ব্রেকডাউনের কারন হিসাবে চিহৃত করেছে। বৈশিষ্ট গুলো নিন্মরুপঃ
-খুটিনাটি জিনিসের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ
– অতিরিক্ত সচেতনতা
– সযত্নে আবেগকে নিয়ন্ত্রন করা বা প্রকাশ না করা
– পেশেন্ট বা কর্মচারীদের থেকে অতিরিক্ত আশা করা
– অতিরিক্ত ফুটানি বা ফলস এক্টিভিটি প্রদর্শন, অন্যদের থেকে নিজেকে উন্নত প্রমান করার চেষ্টা।
৯। সামাজিকভাবে অবমূল্যায়ন
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ডেন্টাল সার্জনদের প্রাপ্য সম্মান অর্জন করতে যথেষ্ট সময় লেগে যায়। অনেক সময় ডেন্টাল সার্জনদের “ডাক্তার” হিসাবেও মুল্যায়ন করা হয় না। কর্মজীবনে অহরহ কটু কথা ডেন্টাল সার্জনদের মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুলে।
১০। সঠিক ও সম্পূর্ণ জ্ঞানের অভাব
অনেক সময় পেশাগত জীবনে এসে ডেন্টাল সার্জনরা প্রাত্যহিক প্রেকটিসে অনেক জ্ঞানের অভাব ফিল করে। এছাড়া আর্থিক ভাবে দুর্বল ডেন্টাল সার্জনরা উন্নত ও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ থেকে দূরে থেকে যায়, যা তাকে অন্যান্য ডেন্টাল সার্জনদের থেকে পিছিয়ে দেয়। অন্যদের এগিয়ে যাওয়া দেখতে থাকা ডেন্টাল সার্জনরা সবসময় বিষণ্ণতায় ভোগে সবচেয়ে বেশি।
প্রতিকারের উপায়ঃ
ডেন্টাল প্র্যাকটিস জনিত বিষণ্ণতা থেকে একেবারে মুক্তির কোন উপায় নাই। তবে একে নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে। কোন সমস্যার সমাধান বের করতে হলে আগে সমস্যার কারন বুঝতে হবে ভাল করে। যখন সমস্যাগুলো চিহৃত করা যাবে তখন প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা যাবে।।
বিষণ্ণতা কাটানোর জন্য নিন্মক্ত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারেঃ-
– চেম্বারের আভ্যন্তরীণ কাজের পরিবেশ উন্নত করা। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
– নিজস্ব গন্ডি থেকে বের হয়ে আসতে হবে, সমস্যার সমাধানে অন্যান্য ডেন্টাল সার্জনদের সহযোগিতা নিতে হবে, সহ ডেন্টাল সার্জনদের সাথে ভাল সম্পর্ক ও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
– নির্দিষ্ট সময় বেধে কাজ করা উচিত। অতিরিক্ত কাজের প্রেশার মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়।
– নিয়মিত বিরতিতে ছুটি কাটাতে যাওয়া উচিত।
– পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর উপর ভাল জ্ঞান ও উন্নত ট্রেনিং নেওয়া উচির।
– সবচেয়ে জরুরী হলো, নিজের প্রতি দয়াশীল হওয়া, নিজের প্রতি অতিরিক্ত দাবী না করা, নিজের চাহিদার লাগাম টেনে ধরা। জীবনকে সহজ ও সরল ভাবে উপস্থাপন করা।
রেফারেন্সঃ
· ADA Bureau of Public Information News Release. Temple University School of Dentistry Study of dentist suicide rates.
· Alexander RE. Stress-related suicide by dentists and other health care workers: fact or folklore? 132:786-94.
· American Psychiatric Association. Diagnostic and statistical manual of mental disorders, fourth edition (DSM-IV). Washington: American Psychiatric Press.
· ADA (Australia)
· Oral Health group
লিখেছেন ঃ ডাঃ আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ (নাঈম)
Dental Surgeon/Owner at The Royal Dental and Consultant Dental Surgeonat KC Hospital & Diagnostic Center
Dental Surgeon/Owner at The Royal Dental and Consultant Dental Surgeonat KC Hospital & Diagnostic Center
নিলয় ষুভ দেখ এভাবে নিউজগুলো আস্তেসে… ছবি ক্লিক করলে টেক্সট পাওয়া যায়… ঠিক করা যায় কিনা দেখ
আমি একজন ডেন্টাল সার্জন। ২০০৮ এর শেষের দিকে ইন্টার্নশীপ শেষ করেছি। এর পর ঢাকায় কয়েকটি চেম্বারে কাজ করতাম, শিখতাম। ২০১০ এর ডিসেম্বর থেকে সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি ব্যাক্তিগত চেম্বারে নিয়মিত ডেন্টাল প্রাকটিস করছি।
প্রায় ৮ বছর হতে চলেছে ডেন্টাল প্রাকটিস। বর্তমানে আমি ক্লোনাজিপাম খেয়ে খেয়ে ঘুমাই। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হয়, কারন কিছুদিন থেকেই আমার বুকে পিঠে অস্বস্তি ও ব্যাথা হচ্ছিল। ব্লাড প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল। কয়েকদিন আগে ইসিজি, ইকো, ইটিটি, এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি করিয়েছি। এখন আমাকে কম খেতে হয়। অনেক মাস ধরে আমি খাটের বিছানায় ঘুমাই না। মেঝেতে শক্ত বিছানা করে ঘুমাই।
।।।।।।। এই হলো ডেন্টালের ফিউচার।
অথচ আমি ছাত্র বয়সে খুব সুস্থ্য ছিলাম।
>> আমি দীর্ঘদিন ধরে ডেন্টাল প্র্যাক্টিস করি । কাজ করতে করতে হাত-পিঠে ব্যাথা ধরে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনও সমস্যা-ই নেই । যতোগুলো সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তার কিছুই আমার উপর প্রতিক্রিয়া করেনা, বরং আমি আমার পেশাকে এনজয় করি । হ্যাঁ, আমি অবশ্য কখনও ই একঘেঁয়ে নই । কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময় বের করে আমি লাইফ-কে এনজয় করতে ভালোবাসি ।
সরি গবেষক— I made you fool…! 😀
Times changing our country is moving forward,public perception of dental treatment will also change, amader o din paltabe In Sha Allah (I’m hopeful)