রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে ওষুধ কোম্পানির দালালদের দৌরাত্ম্য। সম্পূর্ণ চিকিৎসাসেবা হয়ে উঠেছে দালালনির্ভর। হাসপাতালের ভেতরে সক্রিয় একটি ওষুধ কোম্পানির দালাল চক্রের হাতে রোগীদের পাশাপাশি জিম্মি হয়ে আছেন চিকিৎসকরা। স্বাধীনভাবে ভালো ও মানসম্পন্ন ওষুধ লিখতে পারছেন না। এতে সাধারণ রোগীরা যেমন মানসম্পন্ন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
দালালদের স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তি থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস করছেন না কেউ!
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারী এবং বাইরের একাধিক ওষুধ কোম্পানির দালাল একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলেছে। তারা প্রভাব খাটিয়ে চিকিৎসকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে অনেক সময় রোগীদের প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ওষুধের পরিবর্তে কম কার্যকর ও নিম্নমানের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, যা রোগীদের সুস্থতার পরিবর্তে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দালালদের ভয়ে তটস্থ একজন ভুক্তভোগী রোগীর অভিভাবক প্ল্যাটফর্মকে জানান, ডাক্তার সাহেব ওষুধ লিখে দিয়েছেন, কিন্তু বাইরে গিয়ে দেখি সেই ওষুধ সাপ্লাই করে মাত্র একটা ফার্মেসি। তাও অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। অন্য দোকানে গেলে বলে ওষুধ নেই। কিন্তু নিম্নমানের এক কোম্পানির ওষুধ আমাকে নিতে বাধ্য করছে। এটা কি রোগীর জন্য ন্যায্য?
এ বিষয়ে তাকে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করার পরামর্শ দিলে তিনি জানান, তখন তার এলাকায় থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক প্ল্যাটফর্মকে বলেন, “আমরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি; কিন্তু দালালরা আমাদের ওপর চাপ দেয়। ভালো ওষুধ লিখলেই নানা কথা শুনতে হয়, এমনকি বদলি কিংবা চাকরি হারানোর হুমকিও দেওয়া হয়। আমি গণমাধ্যমে কথা বলেছি জানলে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।”
এ বিষয়ে প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন চিত্র দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দূর্দশার বহিঃপ্রকাশ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ অনিয়ম আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস