প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -৪১
” দুই টুকরা মাংস “
লেখকঃ
ডা.ফাহমিদা শিরীন নীলা
এমবিবিএস; এফসিপিএস(গাইনী এন্ড অবস); ফিগো ফেলো(ইটালি)
গাইনী কনসালটেন্ট,
শাহজাহানপুর, বগুড়া।
(১)
‘আম্মা, সত্যি সত্যি এবার আমাদের কুরবানি দেয়া হবেনা?’
খেতে খেতে শরিফা বেগমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে দশ বছর বয়সী ছোট ছেলে সজীব। চুপ করে থাকেন মা। ছেলে নাছোড়বান্দা।
‘ও আম্মা, বল না? আমরা কুরবানি দেব না?’
‘না বাবা। খেতে খেতে এত কথা বলতে হয়না। খাও।’
‘কেন? কেন বল? একটা গরুর ভাগাও তো দিতে পারি আমরা! জানো, পাশের বাসার রহিম আঙ্কেলরা ইয়া বিশাল সাইজের একটা ছাগল কিনে এনেছে।’
সজীবের মাথায় টোকা দিয়ে পাশের চেয়ার টেনে বসতে বসতে সজল বলল,
‘ওটাকে ছাগল বলে না রে ছাগল। ওইটারে বলে খাসী।’
‘আম-মা দেখো। তোকে আম্মা বলেছে না, মাথায় মারবি না। আম্মা দেখো,ভাইয়া আবার মাথায় মারছে।’
সজল সজীব পিঠাপিঠি ভাই। সজল সজীবের থেকে ছয় বছরের বড়। সজলের জন্মের পর আর ছেলেপুলে নিবে না বলেই ভেবে রেখেছিলেন শরীফা বেগম। ছোট চাকুরের অভাবের সংসারে তিন বাচ্চা নিয়েই টানাটানি, নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। নীতু,ইতু দুই মেয়ের পর আল্লাহ্ যখন মুখ তুলে চেয়ে একটা ছেলে দিয়েছেন, তখন আর বাচ্চা নেয়ার প্রয়োজন পড়েনা। কিন্তু পাঁচ বছর পরে কিভাবে যেন হঠাৎ সজীব পেটে চলে এল। একবার ভেবেছিলেন নষ্ট করে ফেলবেন,কিন্তু মন সায় দিল না। তাছাড়া শরীফার স্বামী লতিফ সাহেব তো শুনেই খুশী হয়ে গেলেন। বাচ্চাকাচ্চা তিনি খুব পছন্দ করেন। ছোট বাচ্চা বিছানার মাঝখানে হাত-পা ছুড়ে খেলে,এটা দেখতেই নাকি তার মজা লাগে। এই ছোট ছেলেটাকে দেখে অবশ্য এখন শরীফা মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। কি যে আদুরে মা ঘেঁষা হয়েছে ছেলেটা!
‘আম্মা, ও আম্মা, তুমি কিছু বলছো না যে, ভাইয়া আবার মাথায় মারল!’
‘মাথায় মারিস কেন বাবা? বারবার না করি তোদের। মাথায় মারতে হয় না।’ শরীফা বেগম সজলের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে সজীবের দিকে মুখ ফেরালেন, ‘যা তো বাপ, এখন ঝগড়াঝাঁটি না করে পড়তে বস। ঈদের ছুটি শেষ হলেই তো ফাইনাল পরীক্ষা।’
খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যায় সজীব। সজল চোখমুখ কু্ঁচকিয়ে খেতে খেতে মায়ের দিকে তাকায়।
‘আম্মা, সত্যি কি আব্বা এবার কোরবানি দিচ্ছেনা?’
‘না রে বাবা। অফিসে একটা ঝামেলা হয়েছে। ঈদের আগে বেতন-বোনাস কিছুই পাবেনা তোর বাবা।’
‘ধুর ভাল্লাগেনা। বন্ধুরা সবাই জিজ্ঞেস করলে কি বলব? সবার বাবা গরু-খাসী দিচ্ছে, জানো?’
‘সামনে বার আমরাও দেব ইন শা আল্লাহ্।’ মা আশ্বাস দেন ছেলেকে।
‘কিন্তু এবার সবাই জিজ্ঞেস করলে কি বলব? আমাদের লজ্জা লাগবেনা? ধুর ভাল্লাগেনা ছাই!’ খেতে খেতে চোখমুখ শক্ত করে উঠে গেল সজল।
‘খাবার শেষ না করে উঠিস না বাবা। আল্লাহ্ নারাজ হন। তাছাড়া রাতে না খেয়ে শুলে শরীর খারাপ করবে বাবা’।’ শরীফার কন্ঠে ব্যাকুলতা ঝরে পড়ে।
‘রোজ রোজ তোমার আলু-বেগুন-টমেটোর ঘন্ট খেতে আর ভাল্লাগেনা আমার।’ রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে ঢুকে যায় সজল।
বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন শরীফা বেগম। আসলেই গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ এই তরকারি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি বাচ্চাদের পাতে। দিবেনই বা কি করে? গত সপ্তাহে কোন বাজার করতে পারেননি লতিফ সাহেব। ঘরে কিছু আলু কেনা ছিল। আর বাড়ীর খোলা অংশে কয়েকটা বেগুন আর টমেটোর গাছ লাগিয়েছিলেন শরীফা বেগম। সেগুলো থেকে টাটকা সবজি তুলেই আলু দিয়ে ঘেটে একটা নিরামিষ রান্না করেন রোজ। প্রথম দিকে দু’একদিন বেশ মজা করেই খেল বাচ্চারা। এখন ওতে এদের অরুচি ধরে গেছে তা বেশ বুঝতে পারেন শরীফা। তাতে অবশ্য খানিকটা লাভও হয়েছে। বাড়ীতে চাল শেষের দিকে। প্রতিদিনই প্রয়োজনের তুলনায় অল্প চাল রান্না করেন তিনি। স্বামী আর ছোট দুই ছেলেকে খাইয়ে যা থাকে তা তিন মা-মেয়ে ভাগ করে খান। মেয়েদের যে পেট ভরেনা সে বুঝেও চুপ করে থাকেন শরীফা। মেয়েরাও কিছু মুখ ফুটে বলেনা। অভাবের সংসারে সবকিছু নিয়ে কথা বলতে নেই। আরও অনেক কষ্টের মতই আধপেটা খাওয়ার কষ্টও না বোঝার ভান করে থাকতে হয়।
‘নীতু,ইতু খেতে আয় মা।’
গামলায় থাকা ভাতটুকু সমান ভাবে দু’মেয়ের পাতে তুলে ওদের ডাক দেন শরীফা। মায়ের ডাকের অপেক্ষায় ছিল ওরা। সেই কোন দুপুরে খাবার পর বিকেলে পানিতে ডুবিয়ে একটা টোষ্ট খাওয়া, সে কখন হজম হয়ে গেছে! চা খাওয়ার মত বিলাসিতা এ বাড়ীতে কোনদিনই ছিল না। ভাইদের খাওয়া শেষ হতে দেরী হচ্ছে দেখে কিছুটা অস্থির ছিল নীতু আর ইতু। নীতু অনার্স ফাইনালের পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ইতু কয়েকবার উঁকি দিয়ে গেছে ডাইনিংয়ে।
‘আম্মা,তুমি খাবে না?’ প্লেটে হাত দিয়েই মাকে প্রশ্ন করে নীতু।
‘হ্যাঁ রে মা, এই যে এতগুলো ভাত ছেড়ে দিল সজল। ওটা কি ফেলে দেব? ওটাই খাব।’
ভাইয়ের ফেলে দেয়া এঁটো থালার দিকে তাকাল নীতু। ভাত আছে খুব সামান্যই। মেয়ের চোখ অনুসরণ করে ওর মুখের উদ্বিগ্নতা মায়ের চোখ এড়াল না। সজলের থালাটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে খেতে বসতে বসতে স্বগোক্তি করেন শরীফা,
‘আমি তো আসরের পরেই ভাত খেলাম। ক্ষুধাই লাগেনি এখনো। এই ভাতটুকুই আমার বেশী হয়ে যাবে।’
(২)
পরের দিন দুপুরে ভাত খেতে বসে খুশী হয়ে যায় সজল আর সজীব। বাড়ীর পেছনের সজনে গাছ থেকে ডাল ভেঙে এনে সজনে শাক রান্না করেছেন শরীফা বেগম, সাথে শুকনো মরিচ দিয়ে আলু ভর্তা।
‘আম্মা, আমাকে একটা কাঁচা মরিচ আর একটু সরষের তেল দাও তো।’
সজলের দিকে শুকিয়ে ছোট হয়ে যাওয়া একটা কাঁচা মরিচ এগিয়ে দেন মা।
‘সরষের তেল নাই রে বাবা।’
‘এ বাড়ীতে কিছু কি থাকে? খালি নাই আর নাই। এত নাই নাই শুনতে আর ভাল্লাগেনা আম্মা।’ রাগ করে শুকিয়ে যাওয়া পুরনো কাঁচামরিচটা ছুড়ে ফেলে সজল।
শরীফা কিছু বলেননা। উঠতি বয়সে বাচ্চাদের রাগ একটু বেশীই হয়। এরা কারণে অকারণে রাগারাগি করে। সজীবই শুধু একটু হৈ হৈ করে উঠে।
‘দেখছো আম্মা,ভাইয়া ছুঁড়ে ফেলল! বড় ছেলেকে তো কিছু বলবা না! এইটা আমি করলে তো ঠিকই চিল্লাচিল্লি করতা!’
দু’ভাইয়ের খুঁনসুঁটি শুরু হয়ে যায়। সেদিকে মন নাই শরীফার। সে কেবলই চিন্তা করছে ঈদের দিনটা কিভাবে পার করবে। ক’দিন থেকে বাসার বাইরেও বের হতে পারছেনা। দেখা পেলেই ভাবীরা জিজ্ঞেস করছে, ‘কি কুরবানি দিচ্ছেন ভাবী? ‘
(৩)
ঈদের দিন নামাজ পড়ে এসেই যে যার ঘরে ঢুকে পড়ল। প্রতিবার এ সময় লতিফ সাহেব একটা বটি আর প্লাষ্টিকের গামলা নিয়ে চলে যান ভাগা দেয়া গরু কোরবানির জায়গায়। সজল আর সজীবের দেখা তো পাওয়াই যায় না। কোথায় কোথায় ঘুরে দুপুরের পরে বাসায় ফিরে এসে বলে,
‘অনেক বাসায় খেয়ে এসেছি আম্মা, পেট ভরা। তোমার মাংস রান্না হয়েছে? দাও, মাত্র দুই টুকরা দিবা। বেশী খেতে পারব না।’
আজ কেউ কোথাও যায়নি। দুপুরের জন্য এক হালি ডিম কিনে রেখেছিলেন শরীফা বেগম। ডিম আর আলু সিদ্ধ করে ডিম দিয়ে আলু রান্না করলেন তিনি। অন্যদিন ডিম দেখে বাচ্চারা খুশিতে নেচে উঠে, আজ সবাই চুপচাপ খেয়ে উঠল। লতিফ সাহেব ছেলেদের নিয়ে খেতে বসলে টুকটাক গল্প করে হাসাহাসি করেন। আজ তিনিও চুপ করে মাথা নীচু করে খেয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন। শরীফা বারবার করে ছেলেমেয়েদের অনুরোধের সুরে বলেছেন, ওরা যেন কেউ ওদের আব্বার সামনে কোরবানির প্রসঙ্গ না তুলে। মায়ের কথামতো কেউ কিছুই বলল না। আজ যে নিয়মভঙ্গ করে লতিফ সাহেবের সাথে সাথে দুই ছেলের পাতেই গোটা ডিম সিদ্ধ দিলেন শরীফা বেগম, এ নিয়েও সজল কোন উচ্ছ্বাস দেখাল না। শুধু সজীব ডিমটা মুখের কাছে নিয়ে জিহ্বা বের করে ঠোঁট চেটে আনন্দিত চোখে মায়ের দিকে তাকাতেই মায়ের চোখে জোর করে আটকে রাখা টলমলে অশ্রুতে ওর চোখ আটকে গেল। আর কোন দুষ্টুমি না করে অন্যদের সাথে সেও চুপচাপ খেল। ডিমের কুসুমটা আস্তে বের করে রেখে সব শেষে একটু বাড়তি ভাত নিয়ে কুসুম চটকে খেতে ভুলল না। ইস্,কতদনের শখ গোটা কুসুম খাবে। মা প্রতিবার চাকু দিয়ে কেটে একটা ডিম দু’ভাগ করে দু’ভাইকে দেন।কার দিকে একটু বেশি কুসুম চলে গেল এই নিয়ে কতদিন ভাইয়ার সাথে মারামারি হয়েছে তার! মনে মনে ভেবেছে, পুরো কুসুম পেলে কি মজাটাই না হতো! অথচ আজ সাধের জিনিসটা পুরোপুরি পেয়েও বাড়ীর থমথমে পরিবেশের কারণে মজা করে খেতে পারছেনা ।
দুই মেয়েকে একটা ডিম আধা করে কেটে দিয়ে নিজে আলু দিয়ে ভাত খেতে বসলেন শরীফা বেগম।
‘আম্মা,তুমি ডিম খাবা না?’
‘নারে মা। ডিম খেতে আমার ভাল লাগেনা, গন্ধ লাগে।’
বড় মেয়ের প্রশ্নের মিথ্যে উত্তরটা নির্বিকারভাবে দিয়ে খেয়ে উঠলেন মা।
আসরের আজানের সময় দ্বিতীয় দফা ঘুম দিয়ে উঠে এল সজল।
‘আম্মা, কেউ মাংস দিয়ে যায়নি?’
ছেলের কথার উত্তর দিতে পারেন না শরীফা বেগম। গলার কাছে কি যেন দলা পেকে ঠেলে আসতে চেয়ে আটকে যায়। কোনরকমে দু’পাশে মাথা ঝাকিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে যান তিনি। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে তিনিও কারো আসার অপেক্ষায় ছিলেন। প্রথমে অবশ্য বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন গ্রীল ধরে। কিন্তু ওখানে দাঁড়ালেই ব্যাগ হাতে ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সের লোকজন মাংস চাইতে আসছে। সবাইকে এটা-ওটা মিথ্যে বাহানা দিয়ে ফেরাতে ভীষণ লজ্জা লাগছে তাঁর। ওরা তো আর জানেনা,ওদের ব্যাগে যে মাংসটুকু আছে সেটুকুও আজ শরীফার ঘরে নেই। দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে শরীফার। তিন রুমের ছোট্ট বাসাটায় আজ সে সুযোগটাও নেই বলে রান্নাঘরের কোণায় বসে কোচড়ে মাথা গুঁজে ঢুঁকরে কেঁদে উঠেন তিনি।
নিজেকে সামলিয়ে চোখমুখ ধুয়ে উঠে এসে আবার সদর দরজার দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকেন শরীফা।ছোট ছেলে সজীব আর মেয়ে ইতুও বারবার বারান্দা থেকে ঘুরে আসছে। বড় ছেলেটা উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। হয়তো দু’ফোঁটা অভিমানের অশ্রু তার বালিশ ভিজিয়েও দিয়েছে। লতিফ সাহেবের ঘুম আজ ছাড়ছেই না। সারাদিন বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন তিনি।
আসরের নামাজের মোনাজাত ধরতে যাবেন,এই সময় কলিংবেলের শব্দ পেলেন শরীফা। মনটা চঞ্চল হয়ে উঠল। নামাজ ছেড়ে উঠে আসতেই খুশীতে ডগমগে সজীব দৌড়ে এসে ছোট একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল মায়ের হাতে।
‘আম্মা, দেখো, ময়নাদের বাড়ী থেকে দিয়ে গেল মাংস।’
শরীফা বেগম দেখলেন,বাকি তিন ছেলেমেয়েই ওদের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখেমুখে অন্যরকম খুশী। আহারে, বাচ্চাগুলো কত অল্পতেই খুশী হয়, কতদিন ওদের পাতে মাংস দিতে পারেননি তিনি। দিন পনের আগে বউবাজার থেকে কিছু খাসীর চর্বি কিনে মাংসের মত কষিয়ে আলু আর টমেটো দিয়ে ঘেটে দিয়েছিলেন। মাংসের গন্ধযুক্ত সেই তরকারী পেয়ে কি যে খুশী হয়েছিল বাচ্চাগুলো। ছোট তিনজন তো ঘুরে ফিরে কড়াইয়ে হাত ঢুকিয়ে চর্বিগুলো তুলে তুলে খেল সারাদিন। শরীফা সেসব দেখেও না দেখার ভান করে ছিলেন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুই টুকরা মাংস প্যাকেট থেকে বের করে ধুয়ে হাঁড়িতে রাখেন শরীফা। কয়েকটা পেঁয়াজ কেটে, আদা-রসুন বেটে রেখেছেন তিনি। কৌটার তলায় পড়ে থাকা কয়েক টুকরা দারুচিনি আর তেজপাতাও বের করে রাখলেন। আর দু’চার বাসা থেকে মাংস দিয়ে গেলেই রান্না বসাতে পারবেন তিনি।আশেপাশের বাসা থেকে মাংস রান্নার ঘ্রাণ আসছে দুপুর থেকেই। মনে মনে বাচ্চাদের সাথে কথা বলেন শরীফা,
‘আর একটু ধৈর্য ধর বাবা! আর একটু….’
মাগরিবের নামাজ পড়ে রান্নাঘরে ঢোকেন শরীফা। পিছে পিছে আসে ছোট ছেলে সজীব।
‘এখনও মাংস রান্না করোনি আম্মা?’
‘না রে বাবা। এইতো করব। ঘরে যাও। রাতে ভাতের সাথে মাংস দিব,কেমন!’ ছেলেকে বুকের কাছে নিয়ে আদর করে দেন মা।
‘আজ কিন্তু দুই টুকরা করে মাংস খাব আম্মা।’ মায়ের বুকে মাথা রেখে আহ্লাদী কন্ঠে আবদার করে সজীব।
ছেলে চলে গেলে মাংসের টুকরা গুনতে বসেন শরীফা। আজকাল আত্মীয়স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশীর বাসায় মাংস বিলি করার রীতি উঠে যাচ্ছে প্রায়। যাও বা দু’একজন দিয়ে যাচ্ছে,দু’তিন টুকরার বেশি নয়। তিন বাড়ী থেকে মোট আট টুকরা মাংস দিয়ে গেছে। আর এক বাড়ী থেকে দুই টুকরা মাংস দিয়ে গেলেই তিনি রান্না বসাতে পারবেন। স্বামীসহ ছেলেদের পাতে দুই টুকরা করে মাংস তুলে দেয়ার জন্য আর শুধু দুই টুকরাই মাংস দরকার তাঁর।
চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। ফকির মিসকিনদের হাঁকাহাঁকি কমে গেছে। উদগ্রীব নয়নে বাড়ীর মেইন দরজার দিকে তাকিয়ে বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন শরীফা বেগম, দুই টুকরা মাংসের আশায়।