প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, শুক্রবার
রাজধানীসহ দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে স্থাপিত হচ্ছে ক্যান্সার হাসপাতাল। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। অসচেতন জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির বিরূপ প্রভাবসহ নানা কারণে যার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর ক্যান্সারজনিত কারণে মারা যায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার প্রায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০৩০ সাল নাগাদ যা ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ দেশে ক্যান্সারের যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই, এমনকি হাসপাতালের সংখ্যাও সীমিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষে, সরকার প্রায় ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর, এক সভায় আটটি বিভাগীয় শহরে ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়টি পাস হয়।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়, ক্যান্সার চিকিৎসায় বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে আনা সহ দেশের ক্যান্সার চিকিৎসা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় এবং সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। ক্যান্সারের চিকিৎসার পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ ও স্ক্রিনিং সেবা, হাসপাতাল ভিত্তিক ও জনগোষ্ঠী ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন, ক্যান্সারের অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, নারী ও শিশুদের ক্যান্সারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মেডিকেল অনকোলজি, রেডিয়েশন অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, ইএনটি ও হেডনেক ক্যানসার, গাইনি অনকোলজি, পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ চালু করা হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সাতটি হাসপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে। জায়গা সংক্রান্ত জটিলতায় ঢাকার ক্যান্সার হাসপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়া পিছিয়ে থাকলেও এখন জায়গা চূড়ান্ত হয়েছে। জানা গেছে যে, রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে জায়গা চূড়ান্ত হয়েছে।
রাজশাহীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, রংপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, খুলনায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বরিশালে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ময়মনসিংহে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও সিলেটে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষ এ চিকিৎসাকেন্দ্র গুলো স্থাপিত হবে। এর মধ্যে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি । ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে এসব চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ হবে। প্রস্তাবিত ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ এলাকায় দুটি বেজমেন্টসহ ১৫ তলার ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। নির্মাণকাজ মনিটরিংয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি কাজের অগ্রগতি ও সার্বিকভাবে মূল্যায়ন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আশা করা হচ্ছে যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।