লিখেছেন ঃ ডা. অভিজিৎ রায়
পথিক পথের সৃষ্টি করে, পথ পথিককে নয়।
নন ক্লিনিকাল বা রিসার্চ লাইন বা পাবলিক হেলথ এবং বিদেশে উচ্চ শিক্ষা সম্পর্কে কিছু কথা।
পর্ব ১: ভূমিকা
প্রথমে নিজের কিছু কথা দিয়ে শুরু করতে চাই, ছোটবেলা থেকেই দেশের বাহিরে যাবার প্রবল একটা ইচ্ছা ছিল আমার, কিন্তু মেডিকেলে আসার পর ইচ্ছাটা হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কারণ, মেডিকেল থেকে বের হবার পর সচারচর কেউ বাহিরে যাবার চেষ্টা করেনা বা ক্লিনিকাল বিভিন্ন আন্তর্জাতিকা ডিগ্রী নেয়াটা খুবই কষ্টসাধ্য, অর্থনৈতিক ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমি ২০১৫ সালে ইন্টার্নি শেষ করি, ইন্টারনির শুরু থেকেই সিনিয়র বড় ভাই এবং স্যারদের কাছ থেকে বুঝার চেষ্টা করতাম কি করা দরকার আমার ইন্টার্নি শেষের পর। ক্লিনিকাল লাইনে এফসিপিস, এমডি, এইসবে চান্স পাবার বা পাশের হার দেখ খুবই হতাস হয়ে পরি। কিসে পড়াশুনা কবর, কোন লাইনে পড়ব এইসব নিয়া খুব চিন্তিত হয়ে পরি, আমার মনে হয় সবাই একইরকম সম্যসায় পরে এই সময়টাতে। আর ঠিক তখনই ছোট বেলার দেশের বাহিরে যাবার ইচ্ছাটা মনের জানালা দিয়ে হঠাৎ উকি দিতে শুরু করে আবার।
শুরু করলাম আমার ইচ্ছা পুরনের লড়াই, ধাক্কাটা খেলাম প্রথমেই। মনের ভিতর নানা প্রশ্ন জন্ম নিতে শুরু করল, যার কোন উওর যানা ছিলনা আমার, ভাবলাম এইসবের উওর শুধু তারাই দিতে পারবেনন যারা মেডিকেল সাই্নসে বাহিরে পড়াশুনা করতেছেন। শুরু করলাম খোঁজ, দা সার্চ। সৌভাগ্যক্রমে পেয়েও গেলাম এক বড়ভাইকে, যোগাযোগ করার চেষ্টা কারলাম তার সাথে। প্রথমে ভালই সাহায্য করতেছিলেন তিনি, কিন্তু হঠাৎ করে তিনি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারলামনা, হয়তবা তিনি খুব ব্যাস্ত থাকতেন তাই সময় করে উঠতে পারেননাই। যাইহোক থেমে থাকিনাই, এবার নিজেই নিজেকে সাহায্য করা শুরু করলাম। বলতে গেলে শুধু দেড়টা বছর এইসব খোজা খুজি নিয়ে সময় কাটিয়েছি। কোন দেশ ভাল, কোথায় সুবিধা বেশি, কোন ভার্সিটি বা কোন ফ্যাকালটি, কোথায় স্কলারশিপ সুবিধা ভাল এইসব।
ইন্জিনিয়ার বা ভার্সিটি থেকে পাশ করার পর খুব সহজেই এরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে গমন করে কিন্তু আমরা ডাক্তাররা কেন যেতে পারেনা বা যায়না,, আমার মতে এর উওর খুবি খোজা, অনেকে বলে ডাক্তারদের সুযোগ সুবিধা কম, কিন্তু আমি বলব না, আসলে আমাদের নিজেদের স্বদইচ্ছার অভাব বা এইসব নিয়ে আমাদের জ্ঞানের অভাবকেই দায়ী করব আমি। আসলে এটা একটা ট্রাডিশনের মত, বুয়েট থেকে পাশ করার পর অনেকে বাহিরে চলে যায়, ওদের একটা ট্রাডিশন তৈরি হয়ে গেছে এটাতে, আমাদের ক্ষেএে এইটা হয়নাই। আমরা আমাদের পূর্বসুরীদের একে দেয়া পদচিহ্নতেই হাটতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। এম বি বি এস, বিসিএস, এফ সি পি স, এম ডি, এম স। এই রাস্তার বাহিরে আমাদের তেমন কোন পথ আর জানা নেই, বা কেউ এসব নিয়ে চিন্তা করতে চায়না। কিন্তু আমার মনে হয় সেইদিন আর নেই, দিন বদলায়ে গেছে অনেক, যেটার ফল আমরা গত কয়েক বছরের পোস্টগ্রাজুয়েশন এর রেজাল্টগুল দেখেলই বুঝতে পারি। আর বিসিএস টাও কেমন যেন সোনার হরিন এখন, চাকুরীতে রাজনীতির প্রভাবটা এও বেশি যে এটা নিয়ে কিছু লিখলামনা, থাক মাফ চাই। তাই আমি মনে করি, এটাই মূখ্যম সময় গতানুগতিক রাস্তা থেকে বের হয়ে এসে একটু অলটারনেট কিছু চিন্তা ভাবনা করার। পথিকই পথের সৃষ্টি করে।
পরবর্তী সমস্যার মুখোমুখি হলাম যেটায় সেটা আরও প্যাথেটিক, সেটা হল বাবা, মা। যখন তাদের জানালাম যে আমি কি করতে চাচ্ছি, তারা রিতীমত ভেবাচেকা খেয়ে গেল। তাদেরকে আমি আমার ?সাধ্যমত বুঝাবার চেষ্টা করলাম।শুধু একটাই কথা তাদের, এওোদিন কষ্ট করে ডাক্তারি পরে তুমি রুগী দেখবানা ?এটা কেমন হল জিনিসটা আমার কাছে তেমন একটা বিষয় না হলেও তাদের কাছে বিশাল একটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়ায়। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় তারা একদিন বুঝলেন এবং বললেন, ঠিক আছে তোমার ক্যারিয়ার তুমি যে ভাবে গড়তে চাও গড়, আমাদের আপওি নাই। আমার বাবা মা দুনিয়ার সেরা, আমার দুনিয়াতে তাদের উপর কেউ নাই। আমি খুব গর্বীত যে এমন বাবা মার সন্তান আমি।
শুরু করলাম আমার আসল কাজ, এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভার্সিটি তে যোগাযোগ অনেক দূর আগিয়ে নিয়ে নিয়েসি। এরপর আইলটিএস দিয়ে, শুরু করলাম এপ্লিকেশন। ইউরোপের প্রতি আগে থেকেই একটা ভাল লাগা থাকায় শুধু ইউরোপেই অ্যাপ্লাই করি। নরওয়ে ও সুইডেনের সাতটি ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করি গত নভেম্বরে এবং এ বছরের মার্চে তিনটা ভার্সিটি থেকে অ্যাডমিশন অফার চলে আসে, যার মধ্যে দুটি পাবলিক হেলথ আর একটিতে মলিকুলার মেডিসিন এ। পাবলিক হেলথে পড়ার ইচ্ছা না থাকায়, মলিকুলার মেডিসিন ই চয়েজ করলাম।
রিসার্চ লাইনে পোস্টগ্রাজুয়েট করতে গেলে আপনাকে কয়েকটা জিনিস ত্যাগ করতে হবে, যেমন আপনি রূগী দেখতে পারবেনান, এইটা যদি মেনে নেবার ক্ষমতা থাকে, আর পরিবার থেকে যদি রাজি থাকেন, তাহলে আমার মনে হয় আর কোন তেমন সমস্যা থাকার কথা নয়। অর্থনৈতিক দিকটাও বিবেচনায় রাখা দরকার, কারন এসবের পিছনে আপনাকে কিছু ইনভেস্ট করতে হবে প্রথমে, যেমন আই ই এল টি এস, অ্যাপ্লিকেশন ফি, ডকুমেন্টস পাঠানোর কিছু খরচ ইত্যাদি। তাই এই লাইনে আসতে গেলে এই বিষয় গুলো নিয়ে একটু ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা করে এগুনো উচিত। আর একবার যেটা ডিশিসন নিবেন সারাজীবন ওইটার পিছনেও ছুটতে হবে। দুই নৌকায় পা দিয়ে কখনও চলা যায়না। এই লাইনে ফিউচার কি সেটা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবেনা, মাস্টারস এর পরর জব বা পিএইচডি হবে কিনা সেটা কেউই বলতে পারবেনা,,কিন্তু রিসক ছাড়াতো জীবন ও হয়না। অন্যদিকে ক্লিনিকাল লাইনে আপনার একবার হলনা, দুইবার, তিনবার, চতুর্থবার গিয়ে অবশ্যই হবে। যাইহোক, আমি কি করতেছি ভাল না খারাপ সেটা আমি জানিনা, আমি শুধু গতানুগতিক রাস্তা থেকে বের হয়ে একটু বিকল্প রাস্তা খোজার চেষ্টা করতেছি।
লেখা চলবে… …আসছে পর্ব ২
thanks, Abhijeet Roy. 😀
F