নতুন ডাক্তারদের অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
নতুন ডক্তারদের জন্য কিছু সাজেশন দিতে চাই। চিকিৎসা মানে শুধুমাত্র রোগীকে ঔষধ লিখে দেয়া না, এর অনেকগুলো ষ্টেপ আছে। সবগুলো ষ্টেপ সম্পন্ন করলেই কেবল কম্পলিট চিকিৎসা দেয়া হয় এবং রোগী ও রোগীর লোকজন সন্তোষ্ট হয়। এগুলো একটু বলার চেষ্টা করছি।
1. Greetings and introduction-এটি অত্যান্ত গুরুত্তপূর্ণ। রোগীর সাথে ভাবের আদান-প্রদান, যেমন সালাম দেয়া, তাকে বলা-আমি ডাঃ অমুক আপনার নামটা জানতে পা্রি? এগুলো রোগিকে ডাক্তারের কাছে খুব ইজি করে তোলে এবং রোগের ইতিহাস বলতে সাহায্য করে।
2. History taking-আমাদের কাছে রোগী আসেই তার সমস্যা সমাধানের জন্য, সেটা করতে গেলে আমাদেরকে রোগীর সমস্যা নির্ণয় করতে হবে, সেটার একমাত্র উপায় রোগীর ইতিহাস ভালোভাবে শোনা। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে রোগীকে বলা-আপনি প্রথম যেদিন অসুস্থ হলেন সেদিন থেকে প্রথমে কি হয়েছে তারপর কি হয়েছে, একটার পর একটা যা হয়েছে বলেন। এতে করে রোগের সিকুলী বোঝা যাবে। রোগীর কাছে থেকে শোনার পর নিচের প্রশ্নগুলো করা যেতে পারে, এতে করে রোগীর না বলা অনেক কিছু জানা যেতে পারে-১। জর আছে কিনা? ২। খাবার রুচি কেমন? ৩। কাশি আছে কিনা? ৪। বুকে ব্যাথা আছে কিনা? ৫। বুক ধরপড় করে কিনা? ৬। পেটে ব্যাথা আছে কিনা? প্রসাবে জালা পোড়া, ঘন ঘন প্রসাব, দুর্গন্ধ প্রসাব, ঘোলা প্রসাব, লাল প্রসাব আছে কিনা? ৮। ঘুম ঠিক আছে কিনা? ৯। হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস এর ঔষধ খান কিনা? ১০। ধুমপান, তামাক, জর্দা, আলোয়া, গুল ইত্যাদি ব্যাবহার করেন কিনা?
3. Clinical examination-এটা অবশ্যই General examination দিয়ে শুরু করতে হবে, কমপক্ষে Anaemia, Jaundice, Pulse, BP, Edema, clubbing দেখতে হবে; তারপর রোগীর সমস্যা রিলেটেড systemic examination কমপক্ষে Lungs, precordium auscultation করতে হবে-এখানে রোগীর asthma, COPD, murmur আছে কিনা বোঝা যাবে, abdomen palpate করে দেখতে হবে, এতে রোগী অনেক কনফিডেন্স পায় যে ডাক্তার আমাকে ভালো করে (বুক, পেট) দেখেছে। জরুরী বিষয় হচ্ছে Symptom related examination যেমন রোগী যদি বলেন আমার পায়ের তলায় ব্যাথা, তবে পায়ের তলাটা দেখা, হাত দিয়ে দেখা ইত্যাদি। (এটা করে মেডিকেল ইনফরমেশন পাওয়া না গেলেও রোগি মনে করে আমার যেখানে সমস্যা সেটা ডাক্তার ভালো করে দেখেছেন।)
4. Report checking-রোগীকে কোন পরীক্ষা করতে দিলে সেগুলো দেখার সময় রোগীকে থাকতে হবে, কারন রোগীকে report এর উপর ভিত্তি করে আবারো দেখার প্রয়োজন হতে পারে। নতুন কোন পরীক্ষা করতে দিতে হতে পারে, যেমন-Urine পরীক্ষায় pus cell বেশি আসলে urine C/S করতে দিতে হবে। এছাড়াও রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর ঔষধের ধরন নির্ভর করে। যেমন-হাইপ্রেসারের রোগী ওজন বেশি হলে আমি betablocker দিব না। ডায়াবেটিসের রোগী ওজন বেশি হলে আমি metformin দিব ইত্যাদি।
5. Prescription writing-প্রেসক্রিপশন হল রোগী ও ডাক্তারের মধ্যে সেতু বন্ধন। এটি অবশ্যই স্পষ্ট করে লিখতে হবে। কখন খাবে, কিভাবে খাবে (চুষে খাবে, পানিতে গুলিয়ে খাবে), কত দিন খাবে, বিশেষ কোন সাইড ইফেক্ট আছে কিনা (যেমন-প্রিগাবালিন দেবার পর মাথা ঘুরলে সেটা বন্ধ করতে হবে), কত দিন পর ফলো আপে আসবে সব কিছু লিখতে হবে। দামি কোন ঔষধ বা অপারেশনের ডিসিশন নেবার আগে রোগীর সাথে কথা বলে তবেই লিখতে হবে।
6. Counseling-এখানে রোগীকে ডায়াগনোসিস বলতে হবে, তবে যদি খারাপ কোন রোগ হয়ে সেটা সরাসরি বলা যাবে না, সেটার জন্য সিনিয়র কারো পরামর্শ নিয়ে রোগী বা রোগীর লোককে জানাতে হবে। রোগী কি খাবে, কিভাবে চলবে (ডায়রিয়ার রোগীকে আমরা বলতে পারি-পাতলা পায়খানার পর খাবার স্যলাইন খাবেন, প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাবেন, প্রস্রাব কম হলে অথবা না হলে, মনে করবেন শরীরে পানি শুন্যতা আছে।তারাতারি হাসপাতালে আসবেন)। রোগের প্রগনোসিস বলতে হবে, যেমন-রোগটি ভালো হবে কিনা, সারাজীবন ঔষধ খেতে হবে কিনা, নিয়মিত ঔষধ না খেলে কি হতে পারে ইত্যাদি।
7. Follow up-রোগীকে অবশ্যই ফলে আপে আসতে বলতে হবে, ফলো আপ কেন প্রয়োজন সেটা বলতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু Standard প্রটোকল ফলো করতে হবে যেমন-হাইপ্রেসারের রোগিকে ঔষধ শুরু করার পর ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে না আসা পর্যন্ত ৩-৪ সপ্তাহ পর (রাফলি ১ মাস পর) ফলো আপে ডাকতে হবে। আর ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে আসার পর ৩-৬ মাস পর ফলো আপে আসতে বলতে হবে।
সবাই অনেক ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের মন জয় করুন এই প্রত্যাশায়-
Dr. Ratindra Nath Mondal (Ratin), MBBS, FCPS (Medicine)
Fellow, Indian Society of Hypertension
Associate Professor
Department of Medicine
Rangpur Community Medical College, Bangladesh.