প্রিয় পাঠক, আপনার প্রিয় মানুষটির কি অভিযোগ যে আপনি ঘুমের ঘোরে নাক ডাকেন? অভিযোগ শুনে নিশ্চয়ই বলেন, আমি নাক ডাকি? কই আমি তো বুঝি না!! মজার ব্যাপার কি জানেন, যে নাক ডাকে সে বুঝতেই পারে না যে, সে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে। ব্যাপারটা পাশে যে ঘুমিয়ে থাকে তার জন্য একটু হলেও অস্বস্তিকর । তাহলে পাঠক দেরি কেন, চলুন আজ এই ‘নাক ডাকা’ নিয়ে কথা বলা যাকঃ
নাক ডাকা বলতে কি বুঝায়?
এক কথায় নাকডাকা হচ্ছে, ঘুমানোর সময় উচ্চশব্দে শ্বাস গ্রহণ। নাকডাকাকে ইংরেজিতে আমরা ‘snoring’ বলি। শ্বাসগ্রহণের সময় বাতাসের তীব্র প্রবাহের কারণে মুখের ভিতরের নরম তালু ও গলার টিস্যুতে কম্পনের সৃষ্টি করে, আর এই কম্পন শব্দের সৃষ্টি করে, যাকে আমরা নাক ডাকা বলি। তাই, মূলত নাক ‘ডাকে’ না, ডাকে গলা! নাক ডাকাকে Obstructive Sleep Apnea(OSA) রোগের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত হিসেবে ধরা হয়। (OSA হচ্ছে এমন একটি মারাত্মক অবস্থা যেখানে ঘুমের মাঝে কিছু সময়ের জন্য শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে )। গবেষণায় দেখা যায়, নাকডাকা Sleep deprivation-এর অন্যতম কারণও বটে (Sleep deprivation হচ্ছে পরিমিত ঘুম না হওয়া )।
নাকডাকা কত ধরনের হতে পারে?
নাকডাকা প্রধানত দু’ ধরণের হয়। প্রথমটি Occasional, আর দ্বিতীয়টি habitual. Occasional snorer বলতে যারা অনিয়মিত নাক ডাকে। এটা আপনার জন্য তেমন গুরুতর কিছু না, তবে আপনার সঙ্গীর ক্ষেত্রে বিরক্তির কারণ হবে এই যা! আর Habitual snorer বলতে যারা প্রতিরাতে নাক ডাকে অর্থাৎ, নিয়মিত। এটা আপনার সঙ্গীর বিরক্তির কারণ তো বটেই, সেই সাথে আপনার ঘুমেরও দফারফা!
নাকডাকা কি অনেক কমন একটা ব্যাপার?
হ্যাঁ, নাকডাকা অনেক পরিচিত একটি কন্ডিশন, যেকারো হতে পারে। তবে নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি ভুগে। নারীদের চেয়ে পুরুষদের air passage তুলনামূলকভাবে চাপা থাকে, তাই পুরুষরা নাক বেশি ডাকে। সকল সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে প্রায় ৪৫ ভাগ অনিয়মিত ভাবে হলেও নাক ডাকে, আর ২৫ ভাগ নাক ডাকে নিয়মিত ভাবে। (তথ্য সূত্রঃ St. Joseph Hospital, Orange County, California)
নাকডাকাটা মূলত কীভাবে হয়?
যখন আপনি শ্বাস গ্রহণ করেন তখন বাতাস নাক অথবা মুখ দিয়ে প্রবেশ করে, তারপর গলার পিছিনের অংশ (গলবিল) হয়ে শ্বাসনালী দিয়ে সবশেষে ফুসফুসে পৌছায়। এই পুরো পথের সবচেয়ে সংকুচিত অংশটি হচ্ছে গলবিল (Pharynx) অর্থাৎ, আপনার গলার পিছনের অংশ। যখন আপনি জেগে থাকেন, আপনার মুখের মাংসপেশি এই অংশকে তুলনামুলকভাবে প্রশার করে রাখে। কিন্তু, যখন ঘুমিয়ে থাকেন তখন মুখের মাংসপেশি শিথিল হয়ে যায়, এর ফলে গলবিলের জায়গাটি আগের মতো আর প্রশার থাকে না, জায়গাটি বেশ সংকুচিত হয়ে যায়। বাতাস এই সংকুচিত জায়গা দিয়ে অতিক্রম করার সময় আপনার নরম তালুতে (Soft palate) কম্পনের সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে কি হয়? নাকডাকা।
আপনার Tonsils, Adenoids-ও ( গলার গ্রন্থি) কম্পিত হতে পারে। গলার জায়গাটি যতবেশি সংকুচিত হবে, তত বেশি কম্পন হবে আর তত জোরে শব্দ উৎপন্ন হবে।
ঘুমের কোন স্তরে মানুষ নাকডাকে?
ঘুমের ৫টি স্তর থাকে। প্রথম চারটি স্তরকে বলা হয় Non-rapid eye movement (NREM) আর পঞ্চম স্তরটি হচ্ছে Rapid eye movement (REM). নাকডাকা ঘুমের সবস্তরেই অথবা কিছু স্তরে হতে পারে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাকডাকা REM স্তরে হতে দেখা যায়। কারণ, মাংসপেশি এই স্তরে শিথিল হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, গভীর ঘুমে(Deep sleep) অথবা Non-REM stage 3 তেও মাংসপেশি শিথিল হতে দেখা যায়। REM স্তরে, আপনার মস্তিস্ক প্রায় সকল মাংসপেশিকে বার্তা পাঠায় শিথিল হওয়ার জন্য (তবে, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাংসপেশি তাদের কাজ আপনি ঘুমিয়ে থাকলেও বরাবরের মতে করে থাকে, যেমনঃ আপনার হৃৎপিণ্ড, ডায়াফ্রাম) । দুর্ভাগ্য বসত, শরীরের অন্যান্য জায়গার মতো আপনার জিহ্বা, মুখের নরম তালু, গলার মাংসপেশিও তখন মস্তিস্কের বার্তা পেয়ে শিথিল হয়, শিথিলতার জন্য জায়গাটির সংকোচন হয় আর আপনি নাকডাকতে থাকেন।
কেন আপনি নিজের নাকডাকার শব্দ নিজে শুনতে পারেন না?
এই রহস্যময় ঘটনার একটা সুন্দর ব্যাখ্যা আছে। যখন আপনি বিশ্রামে থাকেন, তখনও আপনার মস্তিস্ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঠিক ভাবেই করতে থাকে। যেমন ধরুনঃ আপনি ঘুমিয়ে আছেন কিন্তু মস্তিস্ক ঠিকই আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিকভাবে চলছে কিনা, হৃৎপিণ্ড ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা নিয়ন্ত্রন করে চলছে। শরীর যখন বিশ্রামে থাকে, শরীর নিজেই নিজেকে মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করে। এই সময়ে মস্তিস্কের কিছু অংশ নিস্ক্রিয় থাকে। পুনর্নির্মাণের অংশ হিসেবে শব্দ শোনার ক্ষমতা আপনি ঘুমিয়ে যাবার পর কমে যায়। শরীর তখন আপনার জন্য অবিপদজনক কিছু শব্দ এড়িয়ে যায়, এগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেয় না।যেমনঃ এই নাকডাকা। এটা আপনার জন্য বিপদজনক না। তাহলে কেন আমাদের ঘড়ির অ্যালার্মের শব্দে, বাচ্চার কাঁদার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়? এর কারণটি হচ্ছে, আমাদের মস্তিস্ক বুঝতে পারে কোনটা আমাদের শুনানো দরকার আর কোনটা আমাদের না শুনলেও চলবে।
নাকডাকার কারণ কি?
নাকডাকার পিছনে বিভিন্ন কারণ আছে। তেমন কিছু কারণগুলো হচ্ছেঃ
• স্থুলতা (নাকডাকার প্রধান কারণটি হচ্ছে স্থুলতা। কারণ চর্বি গলার পথটি চিকন করে দেয় )
• বয়স (বয়স যত বাড়তে থাকে গলার অংশ চিকন হতে থাকে আর মাংশপেশির শিথিলতা বাড়তে থাকে, ফলে সহজেই নাকডাকার মতো সমস্যা হয়)
• যদি নাক, মুখ অথবা গলার টিস্যু বড় হয়ে যায় তাহলে নাকডাকা হতে পারে। Tonsils এবং Adenoids বড় হয়ে যাওয়া নাকডাকার অন্যতম কারণ।
• তুলনামূলক ভাবে লম্বা নরম তালু (Soft palate) অথবা লম্বা আলজিহবা (Uvula) নাকডাকার জন্য দায়ী।
• Nasal airway তে যদি কোনও কারণে বাঁধার সৃষ্টি অথবা blocked হয়ে যায় তাহলে এরকম সমস্যা হয়। ( যাদের nasal passages এ blockage হয়, তাদের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হয় বাতাস ফুসফুসের ভিতরে আনতে। এর জন্য ভিতরের টিস্যুগুলো আরও বেশি করে কম্পিত হয়। ফলে এরকম শব্দ উৎপন্ন হয়।)
• যাদের Seasonal allergy অথবা যাদের sinus infected অথবা যাদের Upper Respiratory Tract Infection( যেমনঃ ঠাণ্ডা লাগা ) আছে, তাদের নাকডাকার সমস্যা সহজেই দেখা দিতে পারে।
• নাকে যদি কোনো defect হয়, যেমনঃ Deviated septum( যখন নাকের মাঝের দেয়াল, যাকে Nasal septum বলা হয়, তা একদিকে স্থানচ্যুত হয়) ও Nasal polyps হয় তাহলে নাকডাকা হতে পারে।
• ধূমপান ও মদ্যপান (ঘুমানোর আগে যদি মদ পান করা হয় তাহলে নাকডাকার হার বেড়ে যায়। কারণ, অ্যালকোহল মুখের মাংসপেশিকে শিথিল করে দেয় এবং শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক করে দেয়)
• কিছু ঔষুধের কারণেও নাকডাকার মতো সমস্যা হতে পারে। যেমনঃ Lorazepam, diazepam. এসব ঔষুধ মাংসপেশিকে শিথিল করে দিতে পারে।
• সোজা চিৎহয়ে ঘুমালে নাকডাকার সমস্যা হতে পারে, কারণ এতে মুখের মাংসপেশি অভিকর্ষের জন্য গলার পিছনের দিকে নেমে গিয়ে সংকোচনের সৃষ্টি করে।
নাকডাকা কি বড় ধরণের সমস্যা?
যে নাকডাকে তার যদি ঘুম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সাধারণ ভাবে চলে তাহলে এটা শুধু তার সঙ্গী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যর জন্য সমস্যা। সত্যি বলতে, নাকডাকা ব্যক্তির ঘুমের যে সমস্যা হয়, এর চেয়ে যে পাশে থাকে তার বেশি সমস্যা হয়। অনেকের তো সংসার ভেঙ্গে যায় নাকডাকার কারণে! এমনকি স্বামী-স্ত্রীর আলাদা ঘরে বাধ্য হয়ে ঘুমাতে হয়।
এতো গেল সামাজিক সমস্যা। যদি স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল করি তাহলে নাকডাকা কপালে ভাজ ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট! কারণ, এটা বড় ধরণের সমস্যার ইঙ্গিত করে। এটা পরবর্তীতে Obstructive sleep apnea (OSA) হতে পারে অথবা পরবর্তীতে ঘুমের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যায় রুপান্তর হতেই পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
নিচে কিছু লক্ষণের কথা উল্লেখ করবো। এরকম কিছু আপনার সাথে হলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাবেন।
• উচ্চ শব্দে নাকডাকা
• দিনের বেলায় ঘুমঘুম ভাব
• ঘুমের মাঝে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া
• ঘুম থেকে উঠার পর মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া
• আরাম করে ঘুমাতে না পারা
• উচ্চ রক্তচাপ
• রাতে বুক ব্যথা
• ঘুম থেকে জাগার পর দেখা গলা ফুলে গেছে
• সকালে মাথা ব্যথা হওয়া…ইত্যাদি
যদি আপনার বাচ্চা ঘুমে নাকডাকে তাহলেও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। বাচ্চারা বিভিন্ন নাক ও গলার সমস্যার কারণে নাকডাকতে পারে( যেমনঃ enlarged tonsil).
নাকডাকার চিকিৎসা কি?
এখানে আপনার জন্য কিছু টিপস দিচ্ছি, যা আপনার নাকডাকা দূর করতে সাহায্য করবে।
• প্রথমে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, পরিমিত খাবার ও ব্যায়াম করতে হবে। কারণ, স্থুলতা নাকডাকার প্রধান কারণ।
• ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করতে হবে।
• শোবার ঘরে পর্যাপ্ত আলোবাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাতাস যদি আর্দ্র হয়, তাহলে তা আপনার গলাকে পিছল করবে, ফলে আপনার শ্বাস নিতে সুবিধা হবে।
• অ্যালারজির সমস্যা থাকলে সেটার চিকিৎসা করাবেন।
• ঘুমানোর সময় শোবার ধরণ পালটাতে হবে। চিৎ হয়ে ঘুমালে নাকডাকার হার বেড়ে যায়, তাই পাশ ফিরে ঘুমাতে হবে। যারা পাশফিরে ঘুমাতে পারেন না তাদের জন্য একটা কৌশল আছে। এটার নাম “Tennis ball trick” এই পদ্ধতিতে একটি টেনিস বলকে আপনার পিঠের সাথে tape/bandage দিয়ে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে ঘুমানোর সময় যখন অসাবধানতা বসত চিৎ হতে যাবেন, তখন বলের উপর চাপ লাগবে আর আপনার অস্বস্তি লাগবে এবং আপনি আবার পাশ ফিরবেন। এভাবে কিছু রাত করলে আপনার শরীর এমনিতেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
• Anti-snore বালিশ কিনতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন সাইজের এরকম বালিশ পাওয়া যায় । এই বালিশ মাথাকে প্রয়োজনমত উচু করে রাখে। এগুলো বেশ উপকারী।
• আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন আপনি এমন কোনো ঔষুধ খাচ্ছেন কিনা যার জন্য নাকডাকার মতো সমস্যা হতে পারে। যদি এরকম হয় তাহলে ডাক্তার আপনার জন্য alternative ঔষুধ দিবেন।
• এবার আপনাদের কাছে হাস্যকর হলেও একটা কার্যকারী উপায় বাতলে দেই। গলা ও জিহবার ব্যায়াম নাকডাকা কমিয়ে দেয়। আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন, মুখের ভিতরের মাংসপেশি শিথিলের জন্য নাকডাকা হয়ে থাকে। একধরনের musical instrument আছে, নাম Didgeridoo. জী হ্যাঁ, এই উদ্ভট অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের যন্ত্রটি বাজালে মুখের ভিতরের মাংসপেশি শক্তিশালী হয়। আর এটা প্রমানিত যে এতে নাকডাকা অনেকাংশেই কমে যায়।
কিছু মেডিকেলীয় ডিভাইসঃ
• CPAP machines: যদি আপনার নাকডাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে ডাক্তার আপনার Sleep study করতে পারেন এবং আপনাকে CPAP (Continuous Positive Airway Pressure) ডিভাইস ব্যবহার করতে বলতে পারেন। এটা খুবই কার্যকরী যন্ত্র। এই যন্ত্রটি হালকা বাতাসের চাপ ব্যবহার করে আপনার air way কে বন্ধ হতে দেয় না, ফলে আপনি সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবেন।
• Oral appliances: যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আপনার ডেন্টিস্টের সহায়তায় Oral appliance ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার নিচের চোয়াল সামনের দিকে ধরে রাখে, ফলে মুখের ভিতরের মাংসপেশি অতিরিক্তি শিথিল হয়ে আপনার air passage বন্ধ করতে পারে না।
• Chin straps: এটা তাদের জন্য যাদের নাকডাকা মুখদিয়ে শ্বাস নেয়ার সময় হয়ে থাকে। এটা আপনার মুখকে বন্ধ রাখে, মুখ যেহেতু বন্ধ তাই আপনি নাক দিয়েই নিঃশ্বাস নিবেন। যা আপনাকে নাকডাকা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে।
• Surgery: যদি আপনার deviated nasal septum অথবা large tonsils ও adenoids অথবা Upper airway narrowing জাতীয় সমস্যা থাকে, প্রয়োজন হলে surgery করা লাগতে পারে।
আজ এতটুকুই, ধৈর্য সহকারে লিখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
লেখকঃ আকিব নিয়াজ জোহা
JINZHOU MEDICAL UNIVERSITY (CHINA)
Session: 2016-17