১১ এপ্রিল ২০২০
নারায়ণগঞ্জের তিনজন চিকিৎসক কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এবং অন্য দুইজনের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসাল্টেন্ট (৪২) অন্যজন বেসরকারি একটি হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট (৪৫)। গতকাল ১০ এপ্রিল শুক্রবার রাতে তাদের নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল পজেটিভ এসেছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তিনি টেলিফোনে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। শুক্রবার পরীক্ষায় তাঁর করোনা ‘পজিটিভ’ আসে। জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এই দায়িত্ব পালন করবেন নারায়ণগঞ্জ শহরের মণ্ডলপাড়ায় অবস্থিত ১০০’ শয্যার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসাদুজ্জামান। ডাঃ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব৷
এদিকে অন্য দুই চিকিৎসকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএমএ’ র যুগ্ম সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সামসুদ্দোহা সঞ্চয়। তিনি জানান , “নারায়নগঞ্জ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসকের নমুনা পরীক্ষায় করােনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তারা অন্যান্য চিকিৎসক – নার্সদের সাথেও কাজ করেছেন। সে অনুযায়ী সকলের তালিকা করে তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হবে। সকলের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। আগামীকাল থেকে সদর হাসপাতাল শাটডাউন করা হবে।”
ডা. সামসুদ্দোহা সঞ্চয় আরো অভিযােগ করে বলেন , ৩শ’ শয্যার যে চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন তিনি গত কয়েকদিন যাবত অসুস্থ ছিলেন। তার করােনা উপসর্গ ছিল। চারদিন আগে দুইবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে নমুনা দেয়া হয়েছিল তার। কিন্তু একবারও ফলাফল দেয়নি তারা। তাদের গাফেলতির কারনে পরে বাধ্য হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসেন তিনি। রাতেই ফলাফলে করােনা পজিটিভ আসে। অথচ চারদিন আগেই তার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসলে এতদিনে তার চিকিৎসাও শুরু করা যেতাে। কিন্তু জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের লােকজনের উদাসীনতার কারণে এটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এখন তাকে কুর্মিটোলা পাঠানাে হয়েছে। তিনি আরো জানান, এছাড়া বেসরকারি একটি হাসপাতালের একজন চিকিৎসকও ঢাকা মেডিকেলে নমুনা পরীক্ষা করে করােনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এজন্যই আমরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস বাদ রাখার পক্ষে ছিলাম। এখন তার থেকে আরো অনেকে আক্রান্ত হতে পারেন। সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে। এভাবে উদাসীন মনোভাবের চরম মূল্য দেওয়া লাগবে সামনে ভয়ঙ্কর চিকিৎসক সংকটে পড়তে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। মানুষ কোথায় চিকিৎসা নেবে? এমনেই সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ জেলা হিসেবে স্বীকৃত।
প্রসঙ্গত, এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন একই বিভাগের নার্স, ওয়ার্ডবয় ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক। এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত রােগীর সংখ্যা ৭৫ জন। মারা গেছেন ৯ জন।
আজকের স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে ৯৫৪ টি নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে নতুন আক্রান্ত হয়েছে ৫৮ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮২ জন, নতুন ৩ জন সহ মোট ৩০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন৷
নিজস্ব প্রতিবেদক/ শেখ লুৎফুর রহমান তুষার