নারী খতনা রোধে আইন প্রণয়ন করবে ডব্লিউএইচও

মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

স্বাস্থ্যকর্মীদের নারী অঙ্গচ্ছেদ বা খতনা (ফিজিএম) করার কাজে জড়িত হওয়া থেকে বিরত রাখতে একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করতে চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সোমবার (২৮ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

জেনেভা থেকে এএফপির বরাতে জানা গেছে, জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা ফিজিএম বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে একটি নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। নির্দেশিকায় এই ক্ষতিকর ও নিন্দিত প্রথা চিহ্নিত করতে এবং বেঁচে থাকা নারীদের সহায়তা দিতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে।

তবে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে মধ্যে এমন প্রমাণ রয়েছে, যেখানে স্থানীয় কমিউনিটির বদলে বরং স্বাস্থ্যকর্মীরাই স্বয়ং এই প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে মেয়েদের আহ্বান জানায়।

ডব্লিউএইচওর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং গবেষণা বিভাগের প্রধান পাসকেল অ্যালোটে বলেন, ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন বা নারী খতনা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এটি মেয়েদের স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের এই ক্ষতিকর প্রথা সম্পাদনের অপরাধী নয়, পরিবর্তনের এজেন্ট হওয়া উচিত। এবং তাদেরও এই প্রক্রিয়ার শিকারদের জন্য উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা উচিত।’

ফিজিএমে নারীর বাহ্যিক যৌন অঙ্গের আংশিক বা পুরোপুরি অপসারণ অথবা অন্যান্য জখম করা হয়। এটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ, বন্ধ্যাত্ব ও প্রসবজনিত জটিলতা রয়েছে।

জাতিসংঘের নারী সংস্থার মতে, বর্তমানে বিশ্বে আনুমানিক ২৩ কোটি ৩০ লাখ মেয়ে ও নারী ফিজিএমের শিকার হয়েছেন, এবং এই প্রথা সাধারণত মেয়েরা বয়ঃসন্ধিতে (প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া) পৌঁছানোর আগে সম্পাদিত হয়।

এই ট্রমাটিক ও যন্ত্রণাদায়ক প্রথাটি বন্ধ করতে প্রচুর প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এটি সাংস্কৃতিক রীতির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এর কোন স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নেই।

ডব্লিউএইচও জানায়, ১৯৯০ সাল থেকে, ফিজিএম করার সম্ভাবনা তিনগুণ কমে গেছে। তবে এটি এখনও ৩০টি দেশে ব্যাপক হাওে প্রচলিত রয়েছে এবং প্রতি বছর আনুমানিক ৪০ লাখ মেয়ে এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লেখ করে যে, মেডিকেল পদ্ধতিতে ফিজিএম সম্পাদনে ঝুঁকি রয়েছে, এটি ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রথাটিকে বৈধতা প্রদান’ করতে পারে, এবং এর ফলে এই প্রথা নির্মূল করার প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

নতুন নির্দেশিকায় ডব্লিউএইচও একটি পেশাদার আচরণবিধির আহ্বান জানায়, যাতে স্পষ্টভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ফিজিএম সম্পাদন করা থেকে বিরত রাখা যায়।

এছাড়া, এটি ‘প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর্মীদের ইতিবাচকভাবে যুক্ত করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া’ প্রয়োজন বলে সংস্থাটি মতামত দিয়েছে।

নতুন নির্দেশিকা তৈরির নেতৃত্বে থাকা ডব্লিউএইচওর বিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা পালিত্তো বলেন, ‘গবেষণা থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্যকর্মীরা ফিজিএম সম্পর্কে মনোভাব পরিবর্তনে প্রভাবশালী মতামতদাতা হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তার, নার্স ও সেবা প্রদানকারীদের নিয়ে কাজ করা ফিজিএম প্রতিরোধ এবং সাড়া দেওয়ার একটি মূল উপাদান হওয়া উচিত।’

প্রতিরোধের পাশাপাশি নতুন নির্দেশিকায় ফিজিএমের শিকারদের জন্য সহানুভূতিশীল এবং উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ক্লিনিক্যাল সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ফিজিএমের কারণে দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ডব্লিউএইচও জানায়, ‘শিকারদের বিভিন্ন জীবনের পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন হতে পারে, যেমন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রসবজনিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং যেখানে প্রযোজ্য, সার্জিক্যাল মেরামত।’

প্ল্যাটফর্ম/

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

নবজাতক হাসপাতালে দেশের সর্বপ্রথম ‘নাইট্রিক অক্সাইড জেনারেটর’ স্থাপন

Tue Apr 29 , 2025
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ নবজাতকের প্রাণঘাতি রোগ ‘পারসিসটেন্ট পালমোনারী হাইপারটেনশন অব নিউবর্ন’ (পিপিএইচএন) নিয়ন্ত্রণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে ‘নাইট্রিক অক্সাইড জেনারেটর’ স্থাপন করা হয়েছে। সোমবার (২৮এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ জেনারেটর উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের জেনারেল […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo