রোগীর স্বজনের কাছে লাঞ্ছিত ও ইন্টার্ন চিকিৎসকের কক্ষের আসবাবপত্র তছনছ করার প্রতিবাদে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ বক্স স্থাপনসহ ৫ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ জানায়, মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে হৃদরোগ বিভাগে রহিমা খাতুন (৯৫) নামে এক বৃদ্ধা ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬টা ৫ মিনিটে তিনি মারা যান। এ সময় রহিমার স্বজনরা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনে সিনিয়র স্টাফ নার্স, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও উর্ধ্বতন চিকিৎসকের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. হালিমা ও ডা. আলেয়াকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, জরুরি বিভাগে নিরাপত্তা বাড়ানো, হোস্টেলে নিরাপত্তা ও চিকিৎসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দেন।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আবরাবার লাবিব জিসান বলেন, হৃদরোগ বিভাগে রোগীর স্বজন ও কিছু বহিরাগতরা ইন্টার্ন চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। আমাদের রুম তছনছ করে ফেলা হয়েছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছি। আমাদের দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ও নেপথ্যে থাকা দোষীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। ক্যাম্পাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজ করে, তাদের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। তারা যেন নিরাপত্তা পায় সেজন্য ক্যাম্পাসে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করতে হবে। হৃদরোগ বিভাগে ওই সময় যে আনসার ডিউটিতে ছিল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। হোস্টেল থেকে হসপিটাল যাওয়ার যে রাস্তাটা সেটি ইন্টার্নদের জন্য নিরাপদ নয়। সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ দাবিগুলো আমরা পরিচালক বরাবর তুলে ধরেছি। আমরা জনগণের সেবা করতে চাই। কিন্তু আমাদের তো সুস্থ্য থাকতে হবে। সেজন্য নিরাপত্তার দরকার রয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডাঃ অজয় কুমার রায় বলেন, আমি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যে দাবি করেছে, তা একজন চিকিৎসকের জন্য খুবই জরুরি। পরিবেশবান্ধব না হলে তাদের দ্বারা ভালো চিকিৎসা আশা করা যায় না। আমি ইন্টার্ন চিকিৎসকের অনুরোধ করবো কাজে যোগ দেওয়ার জন্য, রোগীর স্বজনদের অনুরোধ করবো তারা যেন চিকিৎসকের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচারণ করেন।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিউজ/সমকাল