প্ল্যাটফর্ম নিউজ:
১৬ই এপ্রিল,২০২০
বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে । সীমিত পর্যায়ে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হিসেবে কয়েকদিন আগে স্বীকার করা হলেও এখন দেশের বেশ কয়েকটি জেলা এবং অনেক উপজেলা লকডাউনে আছে। সারাদেশে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১২৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং ৫০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন । এর মধ্যে ৬৫ জন চিকিৎসক ও ১৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছেন বলে বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত সূত্র অনুসারে জানা গেছে। আজ সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মঈন উদ্দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসকদের মধ্যে মৃত্যুবরণকারী তিনিই প্রথম।
করোনা একটি অতি সংক্রামক রোগ। অত্যধিক সংক্রমণ সক্ষমতার কারণে এ রোগের চিকিৎসায় WHO এর নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসক, সেবাদানকারী নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, ল্যাব টেকনোলজিস্টদের ভাইরাস প্রতিরোধী লেভেল-৪ মানের গাউন, রেসপিরেটর N95 মাস্ক, এয়ারটাইট গগলস, গ্লাভস সহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রীর প্রয়োজন হয়। দায়িত্বের প্রকার ভেদে এসব সামগ্রীর কোনো কোনোটা দরকার হয় অথবা সবগুলোই দরকার হয়। কিন্তু মান যেখানে যা থাকার, তাই থাকতে হয়। নাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে হাসপাতালগুলোতে নিম্নমানের পিপিই, মাস্ক সহ অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও অভিযোগ আরো গুরুতর যেখানে অতি নিম্নমানের রেইন কোট পিপিই হিসেবে এবং শপিং ব্যাগের কাপড় কেটে বানানো মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে।
অনেকেই সরবরাহকৃত নিম্নমানের পিপিই ও মাস্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিয়ে নিজেদের অভিমত ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
চট্টগ্রাম বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ইকবাল ফয়সাল চৌধুরী স্বাচিপ সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সেলান ও মহাসচিব ডা. ইহতেশাম চৌধুরী কে উল্লেখ করে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন,”৪০০ কোটি টাকার কেনা কাটা এই খেলনার চশমা নাকি ২০০ টাকা গগলস,এই সব নিম্নমানের পিপিই, ডিসপোসিবল গাউন, মাস্ক কিনে জায়েজ করতে না দেয়ার জন্য কেন্দ্রিয় বিএমএ,স্বাচিপ নেতৃবৃন্দ কে অনুরোধ জানাচ্ছি। এই সব হরিলুট তদন্ত করা হউক। নাম্বার ১ সংলিস্ট মন্ত্রনালয়, মহিলা ডেস্ক অফিসার, এবং বস তিনজনই এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। গনমাধ্যম কর্মীভাইদের প্রতি অনুরোধ এই গুলির দিকে নজর দিন।”
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, একবার ব্যবহারের পরেই ছিঁড়ে গেছে সরকারি ভাবে যোগান দেয়া পিপিই।
আরেকজন চিকিৎসক বলেছেন, ” যে পিপিই পেয়েছি তা অপর্যাপ্ত ও মান সম্মত নয়। বলা হচ্ছে এটা লেভেল ১ পিপিই। স্যাম্পল কালেকশনে N -95 মাস্ক দেয়ার কথা থাকলেও তা এখনো হাতে পাইনি।”
বিসিএস সহকারি সার্জন পদে নিয়োগ প্রাপ্ত একজন চিকিৎসক বলেন ,”লোকদেখানো – জিরোপ্রটেকশন একটা পেয়েছি, তাতে গ্লাভস-মাস্ক-সুকাভার -গগলস কিছুই নেই।”
কয়েকজন চিকিৎসক অবশ্য মানসম্মত পিপিই পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
একজন চিকিৎসক দিনের পর দিন কাজ করেন। অনেক রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকেন। তিনি যখন আক্রান্ত হন, তখন তাঁর কাছাকাছি এলে অন্যান্য রোগী সংক্রমিত হতে পারেন। একজন ডাক্তারের অনুপস্থিতি অনেক রোগীর চিকিৎসা না পাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নার্স, ওয়ার্ডবয়, ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।
টেকনিক্যাল বিষয়ে জনশক্তি তৈরিতে সময় লাগে। দক্ষতা অর্জন করা, বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা সময়সাপেক্ষ ও দুর্লভ। এই পর্যায়ের কেউ সংক্রমিত হওয়া মানে বহু রোগীর চিকিৎসা না পাওয়া। আজ একজন চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন যদি চলতেই থাকে, তাহলে চিকিৎসা দেয়ার জন্য জনবলের সংকট মারাত্মক হয়ে দেখা দিবে।
এদিকে আশংকা করা হচ্ছে আগামী কয়েকদিনে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। তখন বিদ্যমান জনবলের বাইরেও অনেক লোকবল দরকার হবে৷
যদি তাই হয়, নিম্নমানের পিপিই হয়তো স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের সুরক্ষা দিবে না এবং খুব দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা খাত তীব্র সংকটে পড়বে।
রোগী বাড়তে থাকায় যেসব স্থানে চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও অন্যরা এখনো মানসম্মত পিপিই পাননি, তাঁদেরকে যথাযথ পিপিই সরবরাহ করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গুলো সচল রাখা ও সম্ভাব্য সংকট থেকে রক্ষা করতে চিকিৎসকরা আহ্বান জানিয়েছেন।