তায়েরুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ডা. শাম্মীর সাকির প্রকাশের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য দায়ী বিআরটিসি বাস ( ঢাকা মেট্রো: ব ১১-৬০৬৬ ) এর ঘাতক চালকের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে তারগাছ, গাজীপুর তায়েরুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজের সামনে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের পাশে আজ ১৬ জুলাই সোমবার সকাল ১০:৩০-১১:৪৫ পর্যন্ত কলেজের সকল ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসক, অধ্যাপকবৃন্দ, নার্স এবং সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে অংশ নেন৷ এসময় তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে ঘাতক ড্রাইভারের বিচার দাবি করেন। মানববন্ধের সময় সড়ক অবরোধ করা হয়নি। মহাসড়কে যান চলাচলে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। পরে উপস্থিত জনসাধারণ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন।
গত ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ডা. প্রকাশ তাঁর ডিউটি শেষ করে উত্তরার বাসায় ফেরার পথে গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় এসে পৌঁছালে তাঁর মোবাইল ফোনে কল আসে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনি রাস্তার পাশে নিরাপদ দূরত্বে বাইক থামিয়ে হেলমেট পড়া অবস্থায় ফোনে কথা বলছিলেন। এসময় পেছন থেকে বিআরটিসির একটি দোতলা বাস ( ঢাকা মেট্রো : ব ১১-৬০৬৬ ) তাঁকে চাপা দেয়। বাসের চাকা তাঁর মাথার উপর দিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে গত ১৪ জুলাই শনিবার উক্ত কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং চিকিৎসকগণ ঘাতক ড্রাইভারের গ্রেফতার এবং বিচারসহ ৩ দফা দাবি আদায়ে মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গাজীপুরের পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া ‘২৪ ঘন্টায় ঘাতক ড্রাইভারের গ্রেফতারের’ আশ্বাসে, তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পার হয়ে যাবার পরেও ডা. প্রকাশ এর দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ঘাতক ড্রাইভার গ্রেফতার না হওয়ায় উক্ত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা আবার শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন এবং কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় তাঁরা মহাসড়কের পাশে অবস্থান নেন। আন্দোলনকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা হলে তাঁরা জানান, নিরাপদ সড়ক চাই বা সড়কপথে বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে অস্বাভাবিক মৃত্যুরোধের দাবি শুধু তাঁদের একার নয়। এটা সারাদেশের মানুষের দাবি। যতক্ষণ না ঘাতক বাসচালক গ্রেফতার হচ্ছে ও ডা. প্রকাশের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ না দেয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায়ে তাঁরা মানববন্ধন ও অন্যান্য কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
আজ ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষে পূর্বনির্ধারিত মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয় এবং নির্ধারিত সময়ে ১১.৪৫ মিনিটে শেষ হয়। এসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ হয়নি বলে আন্দোলনকারীরা জানান। গতকাল প্রশাসনের দেয়া ২৪ ঘন্টা সময়ে কোনো কর্মসূচি ছিল না।
দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। সড়ক যেন মরণফাঁদ। কিছুদিন আগে দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজিবের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর কয়েকটি এমন দুর্ঘটনা ঘটে।
এবার রাস্তার পাশে নিরাপদ দূরত্বে গিয়েও রক্ষা পেলেন না ডা. শাম্মির শাকির প্রকাশ। তাঁর ১১ মাস বয়সী অবুঝ শিশু হয়তো আর কখনো জানতেই পারবে না বাবার আদর কী! টগবগে প্রাণোচ্ছল তরুণ চিকিৎসকের অকাল মৃত্যুতে তাঁর পুরো পরিবার ভেঙ্গে পড়েছেন। তাঁরা কার কাছে বিচার চাইবেন? শোনার যেন কেউ নেই। আর্থিক ক্ষতিপূরণ কি পারে এই শোকে প্রলেপ ফেলতে?
সবাই চাইছেন উপযুক্ত বিচার এবং শাস্তি। রাস্তার পাশে অপেক্ষমান অবস্থায় বাসচাপা নিছক দুর্ঘটনা নয়। এমন চালকের যদি শাস্তি না হয়, সাধারণ দুর্ঘটনার দোহাই দিয়ে যদি লঘু দন্ড হয়, তাহলে চালকেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবেন। শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধি, আইনের প্রয়োগ, চালকদের মাঝে এসকল ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আরো অন্যান্য পদক্ষেপ সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীরা।