৮ মে, ২০২০, শুক্রবার
অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
নীরব করোনা-বাহক হল, যারা করোনা সংক্রমিত হলেও এদের উপসর্গ থাকে না। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমিত লোকদের ৮০ শতাংশ নীরব করোনা-বাহক।
অন্য আরেক গবেষকের কথা, বেশির ভাগ নীরব বাহক থাকেন উপসর্গ-পূর্ব পর্যায়ে। আর পরে এদের হয় মৃদু, নয়ত মাঝারী উপসর্গ। আর এরা বাহক নয় হিসেবে নথি ভুক্ত হয়ে থাকেন। সংক্রমিত লোকেরা উপসর্গ-পূর্ব অবস্থায় সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। কারন সে সময় তাদের শরীরে থাকে বিশাল ভাইরাল লোড।
কেন, কিছু লোক উপসর্গ বিহীন বাহক হন; এ ব্যাপারে গবেষকরা নিশ্চিত হননি। অনেকের জীবন সংশয়ী জটিলতা সৃষ্টি হয়। তথ্য উপাত্তে দেখা গেছে, উপসর্গহীন বাহকরা সাধারণত শিশু আর তরুন।
কোভিড-১৯ উপসর্গ প্রকাশ পেতে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সংক্রমণের পরিণতি অনেকটা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। সুপ্তকালে ইমিউন সিস্টেমের জোরালো প্রতিক্রিয়া শরীরের ভেতরে ভাইরাসের সংখ্যা সীমিত করতে পারে, আর ফুসফুসে এদের যেতে ব্যাহত করতে পারে। ফুসফুসে কি পরিমান ভাইরাস সফলভাবে যাবে, তা নিয়ন্ত্রন করতে পারে। আমাদের অসুস্থ হওয়াটার পরিমান অনেকটা এর উপর নির্ভরশীল।
ভাইরাসের প্রতি শরীরের ইমিউন-প্রতিক্রিয়ার উপর আমাদের সুস্বাস্থ্য অনেকটা নির্ভরশীল। শিশুদের ইমিউন সিস্টেম অপরিণত, কিন্তু তারা ততটা করোনা আক্রান্ত হয়না। একটি তত্ত্ব হল, শিশুদের ইমিউন প্রতিক্রিয়া পূর্ণ বয়স্কদের তুলনায় সবল।
জেনেটিক বিভিন্নতা, সংক্রমণের পরিণতির উপর প্রভাব ফেলে। ভাইরাস খুব আগে ভাগে চিহ্নিত হল, ধরা পড়ল। কিন্তু কিছু কিছু দেহে জোরালো আর দীর্ঘ সাইটোকিন প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। সাইটোকিন ঝড় (cytokine storm) খুব বিশাল আর কখনও হয় প্রাণনাশী প্রক্রিয়া। এতে ঘটে অনেক প্রদাহ আর দেহ যন্ত্রের বিনাশ। বয়স্ক লোক আর যাদের আগে আছে ক্রনিক ফুসফুস সংক্রমণ রয়েছে, এদেরকে গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের ব্যধি (Acute respiratory distress syndrome) প্রবন করে তোলে।
আরেকটি একটি তত্ত্ব হল, বয়স্ক লোকের ফুসফুসে কম ACE2 রিসেপ্টার থাকে। এই ACE2 রিসেপ্টার মানবদেহে ভাইরাসকে ঢুকতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি এটি শরীরের ইমিউন রেসপন্সকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর দেহে প্রদাহ পরিমান কতটুকু হবে তাও নিয়ন্ত্রন করে। অথচ শিশুদের ফুসফুসে বেশি ACE2 রিসেপ্টার থাকে। কিন্তু তারা পূর্ণ বয়স্কদের মত এত আক্রান্ত হয় না।