সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে গেলেন দু’জন বিজ্ঞানী – জেমস পি অ্যালিসন এবং তাসুকু হোনজো ক্যান্সারের চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপী তে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখার জন্যে।
আসুন, খুব সহজে আমরা জেনে নিই – ক্যান্সারের ইমিউনোথেরাপী কী?? কী ছিলো তাদের অবদান??
আমরা জানি আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা বাহিনী হলো Immune system এবং সেই প্রতিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে বেশ কিছু ধরনের সেনা সদস্য। যেমন T lymphocyte, B lymphocyte, macrophage, NK cell ইত্যাদি। ( মনে রাখবেন এই সেনাবাহিনী কিন্তু এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। এটা না থাকলে পৃথিবীর ইতিহাসে কোন সেনা সদস্যের অস্তিত্বও থাকতো না)
তো আমরা এখন একটু মনোযোগ দিবো T lymphocyte এর দিকে।
T lymphocyte এর একটা গুরুত্বপূর্ন দিক হলো এটা আমাদের দেহের নিজস্ব অংশ (self Antigen) এবং দেহের বাহিরের অন্য কিছু (Foreign Antigen) এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। যার সুবাদে T lymphocyte আমাদের দেহের নিজস্ব অংশের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ ঘোষনা কখনোই করে না। কিন্তু বাহির থেকে নতুন কিছু দেহের ভিতরে প্রবেশ করা মাত্র যুদ্ধ ঘোষণা করে।
তো যখন দেহে কোন Foerign Antigen প্রবেশ করে, সেটার বিরুদ্ধে T lymphocyte গুলো Activated হতে থাকে এবং Activated T lymphocyte গুলা প্রয়োজন মত নিজে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে অথবা অন্য সেনা সদস্যদের যেমন B lymphocyte বা macrophage কে Activate করে তাদের কে যুদ্ধে পাঠায়।
আব্দুল্লাহ সাহেব!! একটা কথা?? Foreign Antigen দেহে প্রবেশের পর এদের বিরুদ্ধে কতক্ষণ ধরে এবং কতগুলা T lymphocyte activated হবে?? যুগ যুগ ধরে কি Activated হতেই থাকবে??
না রে বোকা। দেহে যদি ছোট খাটো জীবাণু ঢুকে তাকে মারার জন্যে কি লাখ লাখ সৈন্য প্রয়োজন??
So ঘটনা টা কি হয়?? বেশ কিছু সংখ্যাক T lymphocyte এক্টিভেট হয়ে যাবার পর T lymphocyte গুলা নিজেরাই নিজেদের Activation বন্ধ করে দেয়??
আব্দুল্লাহ সাহেব!! কেমনে বন্ধ করে??
আরে বলছি তো রে বাবা!!
T lymphocyte গুলো CTLA-4 নামক একটা প্রোটিন তৈরি করে যা T Lymphocyte এর Further activation বন্ধ করে দেয়।
এই প্রোটিনের অস্তিত্বের কথা বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন ১৯৮৭ এর দিকে।
এখন আমরা একটু ক্যান্সারের দিকে মনোযোগ দিবো!!
আমাদের দেহে যখন নরমাল cell গুলো cancer cell হয়ে যায়, তখন সেই cell গুলার surface এ নতুন নতুন কিছু Antigen প্রকাশ পায় – যা আমাদের দেহের নিজস্ব Antigen এর মত না। বরং এগুলা Foreign antigen হিসেবে কাজ করে। এদের কে বলে Tumor Antigen।
আব্দুল্লাহ সাহেব!! Tumor antigen যদি Foreign Antigen হিসেবে কাজ করে, তাহলে তো এদের বিরুদ্ধে আমাদের Immune system যুদ্ধ ঘোষনা করার কথা??
আরে বাবা!! Immume system তো cancer cell এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। T Lymphocyte ক্যান্সার কোষ কে টাস টাস করে মারে।
তাহলে ক্যান্সার ভালো হয় না কেন??????
কী বলবো দুঃখের কথা??
cancer cell এর বংশ বিস্তারের হার খুব বেশি। এরা খুব দ্রুত proliferate করে। Immune system একদিকে দুইটা ক্যান্সার কোষ মারে, অন্যদিকে আবার
১০ টা ক্যান্সার কোষ তৈরি হয়ে যায়।
আব্দুল্লাহ সাহেব!! তাহলে এখন আমাদের কী হবে?? 🙁 🙁
কী হবে?? সেই দুঃচিন্তা ছিলো অ্যালিসন সাহেবেরও 🙁
সেই দুঃচিন্তা থেকে অ্যালিসন সাহেব চিন্তা করলেন….
T lymphocyte তো CTLA-4 এর মাধ্যমে নিজেদের Further Activation বাঁধা দেয়। ( এটাকেই বলে Negetive Immune regulation)
তো আমরা যদি CTLA-4 কে কোন ভাবে বন্ধ করতে পারি, তাহলে তো Tumor antigen এর বিরুদ্ধে লাখে লাখে T lymphocyte তৈরি হবে। তারা ক্যান্সার কে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবে।
তারপরের টা ইতিহাস…
CTLA -4 কে বন্ধ করার জন্যে Drug- ipilimumab আবিষ্কার হলো। নিরীহ ইঁদুরের উপর চললো পরীক্ষা, তারপর মানুষের উপর। দেখা মিলল সফলতার…
আব্দুল্লাহ সাহেব!! তাসুকু হোনজোর সাথে কি আপনার কোন মনমালিন্য আছে?? আপনি দেখি উনার নাম টা পর্যন্ত উল্ল্যেখ করলেন না??
ও সরি!! বলতে ভুলে গেলাম। অ্যালিসন সাহেব যখন CTLA-4 নিয়ে দিনরাত মাথা ঘামাচ্ছেন, সেই সময়ে জাপানে বসে হোনজো সাহেব তো আরেকটা কান্ড করে বসলেন।
তিনি T lymphocyte এর গায়ে PD-1 নামক এক রিসেপ্টর খুঁজে পেলেন।
তালা থাকলে তো চাবিও থাকার কথা!!!
সেই ভাবনা থেকে হোনজো সাহেব তালার চাবি খুঁজে পেলেন। PD- ligand (সংক্ষেপে PD-L)
PD-L যখন PD-1 এর সাথে bind করে তখন T lymphocyte গুলার Activation বন্ধ হয়ে যায়। ( এটাও Negative immune regulation)
পরবর্তীতে দেখা গেলো কিছু ক্যান্সার এত দুষ্টু আর চালাক, যে, এরা PD-L তৈরি করতে পারে। যার কারণে এসব ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্ত Immune response তৈরি হতে পারে না।
হোনজো সাহেব এসব দেখে অ্যালিসন সাহেবের মতই ভাবনা চিন্তায় পড়ে গেলেন। চিন্তা করলেন কোন ভাবে যদি PD-1 রিসেপ্টর টা Remove করা যায়, তাহলে তো cancer এর PD-L গুলা PD-1 এর সাথে বাইন্ড করে নেগেটিভ ইমিউন রেগুলেশন করতে পারবে না। তখন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লাখে লাখে T lymphocyte সোচ্চার হবে।
সেই ভাবনার পথ ধরে শুরু হলো গবেষণা। গবেষণার ফলে আবিষ্কার হলো PD-1 এর বিরুদ্ধে কিছু ড্রাগ – nivolumab এবং pembrolizumab। পরীক্ষা চললো প্রথমে ইঁদুরের উপর তারপর মানুষের উপর। সফলতাও এলো।
তারপরের টা তো সবাই জানি…
অ্যালিসন আর হোনজো সাহেব যৌথ ভাবে পেলেন নোবেল পুরষ্কার…
আব্দুল্লাহ সাহেব!! আপনার দীর্ঘ বক্তব্যের সারমর্ম কী??
সারমর্ম সহজ!!
CTLA -4 এবং PD-1 হলো Immune checkpoints এবং এদের কাজ নেগেটিভ ইমিউন রেগুলেশন।
কিছু Monoclonal Antibody আবিষ্কার হয়েছে এসব immune check point এর বিরুদ্ধে। এদেরকে Immune Checkpoint Inhibitor বলে। যেমন ipilimumab, nivolumab এবং pembrolizumab।
এই ড্রাগ গুলা এখন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যাবহার হবে।
বুঝা গেলো??
Abdul Aziz abdullah
Session 2011-12
NEMC-15