ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ২০ টি হাসপাতালের প্রায় ২০০০ আবাসিক চিকিৎসক গত ২৩ শে জুন, সোমবার অনির্দিষ্টকালের জন্যে ধর্মঘট ডাকেন। এইসব হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে রাম মনোহর লহিয়া হাসপাতাল, সাফদারজাং হাসপাতাল, লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মাওলানা আজাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যা কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লী সরকার এবং সিটি কর্পোরেশানের অধীনে পরিচালিত।
গতবছরের ২৭ শে অক্টোবরেও একই ইস্যুতে দিল্লী চিকিৎসকেরা ধর্মঘট ডাকেন। যার ফলশ্রুতিতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার জরুরী মিটিং ডাকে এবং চিকিৎসকদের দাবী-দাওয়া নিয়ে আলোচনার পর তা মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু, ধর্মঘটরত চিকিৎসকেরা জানান যে, সরকার তাদের পূর্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে লিখিত আকারে জানানোর পরেও।
এরই প্রেক্ষিতে তারা এবারের ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন বলে জানা। তাদের এবারের ১৯ দফা দাবী-দাওয়ার মধ্যে রয়েছে- হাসপাতালে জরুরী প্রাণরক্ষাকারী ঔষধের পর্যাপ্ত সরবরাহ, বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, হাসপাতালে রোগীদের জন্যে নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করা, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, চিকিৎসকদের যথাসময়ে বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তি এবং অতিরিক্ত কর্মঘন্টার জন্যে মূল বেতনের বাইরেও অতিরিক্ত অর্থ প্রদান ইত্যাদি।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় ২৩ শে জুন, সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লী সরকারের সাথে দিল্লী চিকিৎসকদের প্রধান সংগঠন ফোরডা (FORDA- Federation Of Resident Doctor’s Association) এর জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় আবাসিক চিকিৎসকদের ১৯ দফা দাবীসহ সভায় তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থাপিত ৫টি নতুন দাবী-দাওয়াও মেনে নেওয়া হয়। মূখ্য মন্ত্রী অরভিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়টিই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্যে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে বলেছি। তিনি দিল্লী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।” তিনি আরও বলেন, “কিছু কিছু দাবী- যেমন হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো, এটি তিন মাসের মধ্যে করা সম্ভব নয়। আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি এবং নতুন কিছু নির্মাণের কাজও চলছে। এটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।” এছাড়াও তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে হাসপাতালসমূহের জরুরী বিভাগগুলোকে অবকাঠামোগতভাবে আরও শক্তিশালী করার জন্যে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান।
চিকিৎসকদের এরপর ২৪ শে জুন, মঙ্গলবার সকাল ১১টার মধ্যে কাজে যোগদান করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু, সকল দাবী-দাওয়া পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কেবলমাত্র অল্প কিছু আবাসিক চিকিৎসক জরুরী বিভাগে কাজ শুরু করলে সরকার থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। এতেও কাজ না হলে চিকিৎসকদের উপর পরবর্তী ছয় মাসের জন্যে দিল্লী সরকার কর্তৃক Essential Services Maintenance Act (ESMA) আরোপ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে FORDA এর জরুরী সভা শেষে আবাসিক চিকিৎসকেরা ২৪ শে জুন রাতে দুই দিন ব্যাপী চলতে থাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন।
তথ্যসূত্রঃ Times Of India, Indian, Idian express and india tv news
সম্পাদনায়ঃ ডা মাহরুফ বিন নজরুল
Ghumbilashi Jany