লিখেছেন ঃ ডাঃ আলামিন,PRESIDENT AT INTERNE DOCTOR ASSOCIATION,RMC
ডাক্তার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন অমিত, দেশের বাড়ি পাবনা।রামেক ৪৯ তম ব্যাচ; এম বি বি এস কমপ্লিট করে বিগত তিন বছর হল ঢাকাতে পেশাজীবণ শুরু করেন।সর্বশেষ তিনি ঢাকাস্থ গ্রীণ লাইফ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন এবং বিসিএস এবংউচ্চতর ডিগ্রীর জন্য পড়াশোনা করছিলেন। তিনি ঢামেক সংলগ্ন ওল্ড পিজি হোস্টেলের দোতলায় থাকতেন।অত্যন্ত মিশুক ও আবেগী, বিলাসী ব্যক্তি ছিলেন।নিঃসন্দেহে হ্যান্ডসাম ছিলেন। কেনাকাটা করা ও বাইক চালানো শখ ছিল।রামেক এ প্রথম বর্ষ থেকেই আমার অনেক কাছের বড় ভাই ছিলেন।মেডিকেল লাইফ ও সিস্টেম এবং সংকীর্ণতা নিয়ে বড়ই নারাজ ছিলেন।বলতেন এদেশের মেডিকেল সিস্টেম অনেক বাজে।ডাক্তারদের মেধার মুল্যায়ন হয় না।গানশোনা এবং গান গাওয়া ছিল প্রিয় শখ।মুভি দেখতে পছন্দ করতেন,রুম সাজিয়ে গুছিয়ে লাইটিং করে রাখতেন,খুব কম ডাক্তারই ভাইয়ের মত পরিছন্ন থাকতে পারি।যেদিন ঢাকাতে প্রথম ভাইয়ের রুমে যাই সেদিন প্রজেক্টরে থ্রিডি মুভি দেখালেন,ট্রায়াল বক্সে গান শোনালেন।গত ৩০ শে সেপ্টেম্বর বিসিএস প্রিলি দেবার পর ভাইয়ের সাথে সবগুলো প্রশ্ন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে,আজও চোখে ভাসছে।
গত ৫ অক্টবর বিকেলে ঢাকা থেকে পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা হন।সাভারের দিকে একবার বাইক নষ্ট হয়।সে সময় ভাই ওনার আব্বুর সাথে কথা বলেন।এরপর আবার যাত্রা।কিন্তু তিনি তো আর জানতেন না যে তিনি ছিলেন মৃত্যু পথযাত্রী।রাত ১১:৪৫ এ যমুনা সেতুতে ওঠা সেল্ফি দেন ফেসবুকে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি ফুড ভিলেজ রেস্টুরেন্টে রাত প্রায় ১১:৩৭ ,(সিরাজগঞ্জ রোডস্হ) এ এসে মায়ের সাথে ফোনে কথা বলেন এবং জানান রাতের খাবার খাবেন এবং আবার পাবনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।সম্ভবত রাতে খাবার সময় তিনি কিছুক্ষণ আগে সেতুতে ওঠা পিক ফেসবুকে দেন। সর্বশেষ যোগাযোগ ভাই এর এলাকার এক বন্ধুর সাথে,ভাই এর ঐ বন্ধুর দাবি অমিত ভাই তখন জানান তিনি পাবনার নিকটবর্তী কাশীনাথপুরে। তারপর বন্ধ অমিত ভাইয়ের ফোন।কোন যোগাযোগ নেই। ভাইয়ের সাথে ছিল হাংক বাইক,ল্যাপটপ,হেডফোন,মোবাইল ফোনসহ সম্ভবত আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।অমিত ভাই নিখোঁজ।এদিকে রাত প্রায় ৩টার দিকে সিরাজগঞ্জ এর উল্লাপাড়া উপজেলার সলংগা থানার টহল পুলিশ সিরাজগঞ্জ নাটোর হাইওয়ের হরিনচড়া নামক স্হানে রাস্তার উপর পাওয়া যায় অজ্ঞাত এক যুবকের বিকৃত লাশ। একই এলাকায় নিখোজ অন্য এক ব্যক্তির স্বজনেরা দাবি করে তাদের স্বজনের লাশ বলে,কিন্তু সনাক্তকরণে অসামন্জস্যের কারণে পুলিশ লাশ হস্তান্তর করছিল না।পুলিশ বিভিন্ন উপায়ে উদ্ধারকৃত লাশ এর ব্যাপারে সবাইকে জানানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোন হদীস পাচ্ছিল না। এদিকে অমিত ভাইয়ের পরিবার,আত্মীয়স্বজন,বন্ধু,ছোটবড় সবাই অমিত ভাই এর খোজ লাগায়। অবশেষ ৬ অক্টবর বিকেলের দিকে ভাইয়ের স্বজনেরা সলংগা থানায় পুলিশের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে অমিত ভাইয়ের বিকৃত মরদেহ সনাক্ত করেন খুব কষ্টে।আর একটু পরে হলে হয়ত আমরা ডা অমিত ভাইয়ের মৃতদেহ ও পেতাম না,কারণ পুলিশ দীর্ঘক্ষণ থানায় লাশ রেখে কোন হদীস না পেয়ে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে চালিয়ে দেবার কথা ভাবছিল,কারণ থানায় মরদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্হা ছিল না। বিকেল ৫টার দিকে এক বড় ভাইয়ের ফোন পাই,আমি আমার বাড়িতে( উল্লাপাড়া) ছিলাম,শুনে অবাক হই,সাথে সাথে ওসি সাহেবকে ফোন করে নিশ্চিত হই।সন্ধ্যার দিকে থানায় পৌছে দেখি সেই ৭ বছরের প্রিয় মুখ অমিত ভাইয়ের বিকৃত মরদেহ,নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পিছন দিকে হাত বাধা অবস্হায় রাস্তার উপর পড়ে ছিল টগবগে তরুনের লাশ।খালি হাতে ৩/৪ জন মানুষ ভাইকে কাবু করা কঠিন ছিল। ভাই এর মাথা ও শরীর ছিল বিকৃত,সবগুলো হাতপা ছিল ভাঙ্গা,চাকার দাগ ছিল মাথা ও পায়ে।হয়ত মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে বারবার আঘাত করা হয় এবং বেশ কয়েকবার গাড়ি চাপা দেয়া হয়।সারা শরীর ছিল ক্ষত বিক্ষত, আরও কিছু আঘাত বর্ণণা করার মত না।দেখেই বুঝা গেল কিছু নরপশু ভাইয়ের বাইক ও ল্যাপটপ,ফোন কেড়ে নেয়,সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় পেশাদার কিছু সন্ত্রাসী নৃশংস ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে বারবার গাড়ি চাপা দেয়।অকালে রাতের আধারে ঝরে যায় একটি টগবগে প্রাণ।অপমৃত্যু হয় একটি একজন এম বি বি এস ডাক্তার ও তার পরিবারের সকল স্বপ্নের।ডাক্তার জীবনের বাজে অভিজ্ঞতা হতে মুক্তি নিয়ে আমাদের সবাইকে বোকা বানিয়ে পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। গতকাল ৭ অক্টবর,শুক্রবার সকাল ১০ টায় সিরাজগঞ্জ শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী হাসপাতালে তার মরদেহের পোস্টমর্টেম হয় এবং ঐদিন বাদ আসর নিজ গ্রামে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। আল্লাহ তাআলা ওনাকে জান্নাতবাসী করুন।আমীন। ভাইয়ের পরিবার(বড়ভাই) বাদী হয়ে সলংগা থানায় মামলা দায়ের করেন।শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মাননীয় স্বাস্হ্য মন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ নাসিম এবং সিরাজগঞ্জ সদরের এমপি ডা. হাবীবে মিল্লাত মুন্না ভাই ব্যাপারটি তে প্রশাসনকে চাপের মুখে রেখেছেন এবং ডাক্তারদের পেশাজীবী সংগঠন বি এম এ, স্বাচিপ এই পাশবিক হত্যাকান্ডের দাবিতে দ্রুত কর্মসূচী হাতে নিচ্ছে।
প্রশ্ন:
ভাইয়ের হাত পা বাধা ছিল কেন?
ছিনতাইকারী কি আধা ঘন্টা এক ঘন্টা ধরে নির্যাতন করবে?
ভাই এর বাসা পাবনা,উনি তো ফুড ভিলেজ হতে পাবনা রোডে উল্লাপাড়ার দিকে যাবার কথা,ওনার ডেডবডি নাটোর রোডে হরিনচড়ায় পাওয়া গেল কেন? তাকে কি মটিভেট করে ঐ রাস্তায় নেয়া হয়,নাকি হত্যার পর ঐদিকে নিয়ে ফেলা হয়?
ভাই নাকি বাইক নিয়ে ঢাকা থেকে আসেন না,ঐদিন ও আসার কথা ছিল না,কিন্তু কেন আসলেন?
ভাই এর হাতে প্যাডের কালি লেপ্টে ছিল কেন?
শরীরে আঘাতে ক্রোধের পরিস্কার প্রতিচ্ছবি ছিল কেন?
*** এটা কি শুধু ছিনতাই/ হত্যাকান্ড/ পরিকল্পিত হত্যাকান্ড?
শেষ প্রশ্ন: আমাদের কি কিছুই করার নেই।যদি আপনি হতেন, কি হত আপনার পরিবারের,ভাবুনতো একবার? আসুন সোচ্চার হই….
eto kosto diye marlo…Allah jate khunider bichar koren
I think it is a planned murder.
আপনি একদম ঠিক। আমি হয়ত খুব বেশী বুঝি না।তরপর ও এই ঘটনা শোনার পর এটাই ভাবা উচিৎ যে,এটা কোন সাধারণ এক্সিডেন্ট / ছিনতাই হতে নাও পারে,আর না হওয়ার ও যথেস্ট কারন আছে।এটা সবচেয়ে ভাল ওই এলাকার প্রশাসন বলতে পারবে।কারণ এই রকম ঘটনা বা এই রকম জানোয়ার টাইপের ছিনতাইকারী ওই আঞ্চলে আছে কিনা তা তাদের থেকে আর কে ভাল জানে। আমি মনে করি অপরাধী যেই হোক আমাদের প্রশাসন যদি বিষয়টি গুরুত দিয়ে দেখে তাহলে অতি তারাতারি তার বিচার হওয়া সম্ভব। অমিত ভাইয়া কে ছোট বেলা থেকে চিনি। তিনি সত্যি অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। তিনি শুধু আমাদের এলার ই গর্ব ছিলেন না বাংলাদেশেও গর্ব ছিল। তার এই অকাল মূত্যু তে আমাদের দেশ একজন মে ধাবী ড: হারালো। এটি যদি সত্যি হত্যকান্ড হয় তবে এর বিচার হতেই হবে।।।