সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হবার পথে হাঁটছে ৩২ শয্যাবিশিষ্ট লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল, ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসক ও অন্যান্য পদে সংকটও প্রচুর। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে হাসপাতালে নেই কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম! ওষুধের সরবরাহও নেই বললেই চলে। ফলাফল সরূপ, ইনডোর চিকিৎসাসেবা বন্ধের উপক্রম। বহির্বিভাগ ও জরুরি চিকিৎসাসেবা চালু আছে নামমাত্র।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভেতরের অধিকাংশ কক্ষের দরজায় তালা ঝুলছে। হাসপাতালে বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ। ৩২ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন একজন! তবে নথি অনুসারে তিনি ভর্তি থাকলেও তিনি নিজ বাড়ি থেকে এসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ হাসপাতালের ভবনের ছাদ এবং দেয়ালে ফাটল ধরেছে, আসবাবের অবস্থাও বেশ নড়বড়ে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৩২ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে নারীদের জন্য ১০টি ও পুরুষদের জন্য ২০টি বেড রয়েছে। কর্মকর্তাদের জন্য ২টি বেড রয়েছে। হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছে ১ জন ও অন্যান্য কর্মচারী রয়েছে ৩ জন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল সংকট প্রচুর। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় তেমন কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে যান না। তবে উপায়ান্তর না পেলে তখনই কেবল এ হাসপাতালে যান তারা। হাসপাতালের এসব সমস্যার বিষয়ে স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করলেও তেমন কোনো লাভ হয়নি।
মূলত ডিভিশনাল মেডিক্যাল অফিসারের কার্যালয় লালমনিরহাট থেকে এ হাসপাতাল পরিচালিত হয়।
লালমনিরহাট ডিভিশনাল মেডিক্যাল অফিসার কার্যালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল লালমনিরহাটে সরকারি মঞ্জুরী আদেশ (জিও) অনুযায়ী চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদ ১০টির বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন, শূন্য পদ সংখ্যা ৯ জন।
দ্বিতীয় শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত পদ ২৫টির বিপরীতে কর্মরত আছেন ১০ জন, শূন্য পদ সংখ্যা ১৫ জন।
তৃতীয় শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত পদ ১৪ টির বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ জন, শূন্য পদ সংখ্যা ১৪ জন। চতুর্থ শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত পদ ১৮৫ টির বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭০ জন, শূন্য পদে সংখ্যা ১১৫ জন।
অর্থাৎ, ২৩৪টি পদের মধ্যে বর্তমানে ৮১টি পদে লোকবল কর্মরত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ১৫৩টি পদই শূন্য রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল, লালমনিরহাট কেন্দ্রের বিভাগীয় চিকিৎসক কর্মকর্তা মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা একটি, কর্মরত নেই কেউ। সহকারী সার্জন মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৩টি,কর্মরত পদের সংখ্যা একটি এবং শূন্য পদের সংখ্যা ২টি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, হাসপাতাল সচল থাকা অবস্থায় প্রচুর রোগী আসতো। এখন চিকিৎসক নেই, তাই রোগীও আসে না। অথচ যত জায়গা আছে তাতে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করা সম্ভব। এটি সচল করা গেলে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি এ জেলার হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
প্ল্যাটফর্ম/