পরিসংখ্যানের চেয়ে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বললেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

প্ল্যাটফর্ম ডেস্ক রিপোর্ট, ১৬ মে ২০২০, শনিবার

বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কোভিড-১৯ এ বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন দৈনিক প্রায় ১০০০ জন লোক সংক্রামিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিতেও একই প্রক্রিয়ায় সংখ্যাবৃদ্ধি হয়েছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ?
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে প্রথম তিনজন রোগীকে করোনা সনাক্ত করা হয় গত ৮ মার্চ, তারপর থেকে রোগ নির্ণয় বেড়েছে যার কারণে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু, এটিই আসল চিত্র নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। কারণ, পরিসংখ্যান আসে পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে। নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি পেলে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে আর তখনই পরিসংখ্যানের আসল চিত্রটি বের করা সম্ভব হবে।

ধারনা করা হয়েছিল, লকডাউন অব্যাহত থাকলে মে মাসের মাঝামাঝিতে আক্রান্ত সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে, কিন্তু শিথিল লকডাউনের কারণে আরও কত কোভিড-১৯ পজিটিভ বৃদ্ধি পাবে, তা কয়েক দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। আরএমজি (রেডিমেড গার্মেন্টস) ও শপিংমল খোলার ফলে মানুষের চলাচল বাড়বে, যদি না লকডাউন কঠোরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

সরকার তার অর্থনৈতিক বিষয়গুলি বিবেচনা করছে যেটা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণও কেননা দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ দিনমজুর, যারা করোনাভাইরাস নয়, তার চেয়ে বেশি ভীত অনাহারে, আর তাদের পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য তাদেরকে উপার্জন করতে হবে তার বরাতে বাইরে বের হতেই হবে। আরএমজি (রেডিমেড গার্মেন্টস) এবং কৃষি আমাদের অর্থনীতির দুটি প্রধান ক্ষেত্র, এই দুটি সেক্টর খোলার সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক।

শহরের বাইরে কৃষকরা শ্রমিক ছাড়া ধান কাটতে পারছেন না আবার সবজি চাষকারী কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, দুগ্ধ চাষীরা দুধ বিক্রি করতে ব্যর্থ হচ্ছে, পোল্ট্রি খামারীরা গ্রাহকের অভাবে একদিন বয়সী ছানাটিকেও হত্যা করছেন অন্যদিকে এই পণ্যগুলি কিনতে রাজধানীতে বেশি অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে।

কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই উন্নত দেশগুলি বলেছিল যে প্রবীণরা মারা যাচ্ছে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সমস্ত বয়সের লোক মারা যাচ্ছে। বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে (একাধিক রোগে যারা আক্রান্ত) তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছিল শুরুতে। কিন্তু এখন শিশু এবং যুবকরা সংক্রামিত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। এর কারণ কি? কারণ দুর্ভাগ্যবশত, নবীন প্রজন্ম লকডাউন মান্য করে না এবং তাদের বাইরে যাওয়ার এবং সম্ভবত কখনও কখনও প্রয়োজনেই বাইরে যাওয়ার তাগিদ থাকে। এভাবে তারা নিজেরাই নিজের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তরুণদের মধ্যে যারা ধূমপান করেন, অ্যালকোহল পান করেন এবং যারা বাইরে বেড়াতে যান তারাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। তবে এখনও অবধি বয়স্কদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি।

ভাইরাসটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে এবং ফুসফুসের কোষগুলোকে ধ্বংস করে এতে অক্সিজেনের সরবরাহের অভাবে ভাইরাসটি রক্ত, হৃদপিণ্ড, কিডনি এবং মস্তিস্ককেও প্রভাবিত করে। রোগের প্রকৃতি এবং সংক্রমণ কীভাবে হচ্ছে তা বের করার জন্য এখনও গবেষণা চলছে।

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ এর মতে, বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশের পক্ষে অন্যান্য উন্নত দেশের মত সেবা দেয়া সম্ভব নয়, তবে একটি আশার বিষয় হলো আমাদের দেশের ৮০ ভাগ রোগীদের হাসপাতালের যত্নের প্রয়োজন হয় না ৫ ভাগেরও কম আইসিইউ বা ভেন্টিলেটর লাগতে পারে। তাই জনশক্তি, মানসিক শক্তি এবং আমাদের যে প্রযুক্তি রয়েছে তা দিয়েই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তবে দেশে আইসিইউর ঘাটতি রয়েছে আর আইসিইউ স্থাপন করতে বেশ কয়েকটি যন্ত্রের দরকার যেগুলি রাতারাতি পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের চেয়েও অনেক উন্নত দেশেরও আইসিইউর ঘাটতি রয়েছে। কেবলমাত্র কয়েকটি রোগীর জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয় তাই সমস্ত দৃষ্টি আইসিইউ এর দিকে না দিয়ে হাসপাতালে রোগীর যথাযথ চিকিৎসা এবং তাদের স্বাস্থ্য সেবা সঠিক ভাবে দেয়া হচ্ছে কিনা সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিৎ।

ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত কোনও ভ্যাকসিন উদ্ভাবিত হয় নি। যা হয়েছে সবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে আর আমরা সেগুলি কখন পাব তা এখনও বলা যাচ্ছে না। উন্নত দেশগুলিতে যদি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা হয় তবে সেগুলো তাদের নিজেদেরি প্রয়োজন বেশি, ভ্যাকসিন তৈরি হলে সেক্ষেত্রে আমরা সেগুলি পরে পেতে পারি।

কিছু ওষুধ করোনভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার জন্য “কার্যকর” হিসাবে নামকরণ করা হয়েছিল তবে এই ওষুধগুলি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, হাইড্রোক্সেক্লোরোকুইন (ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত) এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন (অ্যান্টিবায়োটিক), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই দুটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও নিশ্চিত করে বলা হয় নি কোভিড -১৯ রোগের চিকিৎসায় কাজ করবে কিনা, এই দুটি ওষুধ ব্যবহার করার আগে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। রিমডেসিভির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ওষুধ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে এটি কেবল গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে। সেসব দেশের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, আমাদের দেশের কয়েকটি সংস্থা সেসব ওষুধ উৎপাদন করতে অনুমতি চেয়েছে।

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ আরো উল্লেখ করেন, এ পর্যন্ত ৭০০ জনের বেশি ডাক্তার সংক্রামিত হয়েছেন, সুতরাং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। মানসম্পন্ন পিপিই না থাকলে তাদের পক্ষে রোগীকে যত্ন প্রদান করা সম্ভব নয়। নিম্নমানের পিপিই নিয়ে অভিযোগ তোলায় অনেক ডাক্তারকে ইতোমধ্যে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে যেটি অগ্রহণযোগ্য এবং অবিচার, প্রশাসনের উচিত চিকিৎসকদের হয়রানি বন্ধ করা। নিম্নমানের পিপিই সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা প্রশাসনিক দায়িত্ব।

সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং যে যার জায়গায় থেকে কাজ করে যেতে হবে সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এই দূর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

সূত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

আজ রাতে প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্ট ওয়েবিনার

Sat May 16 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ মে ২০২০, শনিবার কোভিড-১৯ এর কমিউনিট এবং নন-ক্রিটিক্যাল কেয়ার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ওয়েবিনার আয়োজন করতে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্ম। আজ রাত আটটায় কোভিড-১৯ এর কমিউনিটি এবং নন-ক্রিটিক্যাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কথা বলতে প্ল্যাটফর্মের ফেসবুক পেজে লাইভে আসবেন ডা. ইউসুফ আল মামুন, এমডি এবং ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ। ডা. ইউসুফ আল মামুন কুইন্স […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo