“প্রতিটি জন্মই হোক পরিকল্পিত, প্রতিটি প্রসব হোক নিরাপদ” এ স্লোগান নিয়ে গত ২৮মে, ২০১৫ইং বৃহস্পতিবার নানা আয়োজনে দেশে পালিত হয়েছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস।
দিবসটি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হলেও মাতৃস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব ও এর কার্যকারিতা অনুধাবন করে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে যথাযথভাবে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, সুন্দর জীবন ও সুস্থ সবল নবজাতকের জন্য নিরাপদ মাতৃত্বের বিকল্প নেই। এ জন্য প্রয়োজন গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন পরিচর্যা ও নিরাপদ প্রসব বিষয়ে সকল সেবা পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিত করা।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসসহ মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল করতে সক্ষম হওয়ার আশা প্রকাশ করে অপর এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার গত সাড়ে ছয় বছরে দেশের স্বাস্থ্য খাতের, বিশেষ করে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা দেছে, ৫৫ শতাংশ মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছে সরকার। বাকি ৪৫ শতাংশ মা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। দেশে এখনো শতকরা ৬৮ ভাগ প্রসব বাড়িতে হয় এবং শতকরা ৩২ ভাগ প্রসব হয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবা প্রদানকারীদের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, দেশে গর্ভকালীন সময় শতকরা ১৪ জন মহিলাই নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন, যা মাতৃমৃত্যুর জন্য বহুলাংশে দায়ী। প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, গর্ভকালীন জটিলতা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা ও পরিবারের অবহেলা মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে শতকরা ৫১ ভাগ মৃত্যুই রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনির কারণে হয়ে থাকে। মাত্র শতকরা ৬৮ ভাগ গর্ভবর্তী মহিলা ১টি প্রসবপূর্ব সেবা এবং ২৬ ভাগ মহিলা ৪টি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করে থাকেন।
২০০১ সালে প্রতি লাখে মাতৃ মৃত্যুহার ছিল ৩২২ জন। এই হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অঙ্গিকারবদ্ধ এবং তা অর্জনে মা, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নকল্পে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। ২০১০ সালে ওই হার কমিয়ে ১৯৪ এ আনা হয়। ২০১৫ সালের মধ্যে এই হার ১৪৩ এ কমিয়ে আনা হবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় এবং এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সাফল্যের কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কার দেওয়া হয়।
পপুলেশন কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলায় ৬০ হাজার, উপজেলায় ৪ হাজার ও ইউনিয়নে ৬০০ জন করে প্রতিবছর দেশে ৩০ লাখ শিশু জন্মায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ওজিএসবি মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে না কমানোর দাবি করেছে। গতকাল দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে এ দুটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিয়ের বয়স কমানো হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাতৃ মৃত্যুহার কমাতে হলে নারীশিক্ষার হার আরও বাড়াতে হবে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ হলেই বছরে ১০ লাখ জন্ম কমবে। কাজেই সরকার যদি আইন করে নারীদের বিয়ের বয়স ১৬ করে, তাহলে তা হবে আইন করে বাল্যবিবাহকে স্বীকৃতি দেওয়া। বাল্যবিবাহের নেতিবাচক নানা দিক উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, মাতৃত্ব, সন্তান লালন-পালন ও গর্ভকালীন যত্ন সম্পর্কে সচেতন হতে সময় লাগে। সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে হলে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে একজন মাকে সুস্থ থাকতে হবে। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে অনেক শিশু অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্ম নেয় বলেও তাঁরা মন্তব্য করেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ওজিএসবির সভাপতি রওশন আরা বেগম, সাবেক সভাপতি লতিফা শামসুদ্দিন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক নুরূল ওয়ারা বেগম প্রমুখ।
পরিমার্জনা: বনফুল