১০ এপ্রিল, ২০২০
৮ মার্চ, এক মাস আগে বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর রাজধানী ঢাকার যে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে এ অতি সংক্রামক এই করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে তার একটি এই ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ।
এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের অভিযোগ পিপিই এর দাবি করায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।যেখানে করোনা ভাইরাস একটি অতি সংক্রামক রোগ বলে আমরা জানি সেখানে পিপিই ছাড়াই রোগী দেখতে বাধ্য করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন মেডিকেলটির চিকিৎসকগণ।
চাকরিচ্যুত’ চিকিৎসকরা বলছেন, ওই রোগীর মৃত্যুর আগেই তাদের এখানে আসা কয়েকজন রোগীর মধ্যে ‘নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ’ দেখতে পান তারা। কনসালট্যান্টরাও তাদের বিষয়ে একই অভিমত দেন। তখন থেকেই পিপিই চাওয়া হলেও তা দেওয়া হয়নি।
এরপর গত মাসের শেষ দিকে ২২ শে মার্চ হাসপাতালের আইসিইউতে করোনাভাইরাস রোগীর মৃত্যুর পর চিকিৎসকদের জোরাল দাবির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা উপকরণ দিলেও তা জুনিয়র চিকিৎসকরা পাচ্ছিলেন না।
জুনিয়র চিকিৎসকদের পিপিই দেওয়া হত না বলে অভিযোগ করেন একজন চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো এবং আইসিইউতে রোগীর মৃত্যু নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ৪ এপ্রিল পাঁচজন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা হয়। পরে দুজনকে আবার পুনর্বহাল করা হয়।
চিকিৎসকরা জানান, ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। ২৪ মার্চ নমুনার ফল পজিটিভ এলে পরদিন হাসপাতালের আইসিইউ বন্ধ করে দেয়া হয়। চিকিৎসক-কর্মচারীদের একটা বড় অংশ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। ২৬ মার্চও জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের সব বিভাগ বন্ধ থাকে।
কোয়ারেন্টিনে চলে যান আইসিইউ’র সব চিকিৎসাকর্মী। এছাড়া ইনডোরের ১০ জন চিকিৎসক, জরুরি বিভাগের তিনজন চিকিৎসক, একজন নার্স এবং একজন ওয়ার্ডবয়ও কোয়ারেন্টিনে চলে যান।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘চেপে যেতে বললে’ তা না মানা ও পিপিই নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ানোয় পাঁচজন চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. এনায়েত মুন্সী প্রথমে বলেন, তাদের হাসপাতালে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
একজন চিকিৎসক বলেন, “আমরা ইমার্জেন্সিতে কয়েকজন এমন রোগী পেয়েছি। কনসালট্যান্টদের দেখালে তারা বলেছেন, এটা করোনাভাইরাস রোগী শতভাগ শিওর। ওই মুহূর্তে আমাদের কারও একজনেও গ্লাভসও ছিল না। আমরা অনুরোধ করেছি পিপিই না দিলেও অন্তত মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার দেন।” কিন্তু স্যানিটাইজারও দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এবং এ অবস্থায়ই কোনো রোগী রেফার্ড করা যাবে না, দেখতে হবে, ভর্তি দিতে হবে বলে বাধ্য করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
“মিটিং ডেকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় চিকিৎসকদের এবং এভাবেই কাজ করতে হবে, নইলে চলে যেতে হবে বলে হুমকি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্টাফ রিপোর্টার
নুরুন্নাহার মিতু