প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০
n95/kn95/ffp2 মাস্ক সহ পর্যাপ্ত পিপিই না পাওয়ার কথা একটি ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়ে প্রতিবাদ করায় ডা. আবু তাহেরের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) জারি করেছেন নোয়াখালি ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
গত ১৬ এপ্রিল হাসপাতালটির সহকারী সার্জন (এনেসথেটিস্ট) ডা. আবু তাহের তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন,
“আমি নোয়াখালী ২৫০শয্যা সদর হাসপাতালে কর্মরত একজন এ্যানেসথেসিওলজিস্ট।
রোগীর সবচেয়ে কাছ থেকে আমি চিকিৎসা দেই। গত ১ মাসে প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমি সহ আমার ডিপার্টমেন্ট এর কেউ ১টিও n95/kn95/ffp2 মাস্ক পাইনি। তাহলে স্বাস্হ্য সচিব মিথ্যাচার কেন করলেন উনি n95 ইকোয়িভেলেন্ট মাস্ক দিচ্ছেন? তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে মিথ্যা বলতেছে? এই মিথ্যাচার এর শাস্তি কি হবে?
গত ১ মাসে আমার ডিপার্টমেন্ট এ ৮জনের জন্য ২টি পিপিই দেওয়া হয়েছে। এই হলো পর্যাপ্ত পিপিই মজুদ। ওহ কি বলবেন আমরা কাজ করিনা? গত ১ মাসে ১৫০ এর মত অপারেশন আমি একাই করেছি বাকিদের হিসাব দিলাম না। আপনাদের ওসব পিপিই মাস্ক না পেয়ে আমরা বসে নাই বসে থাকবোও না কিন্তু জাতির সামনে মিথ্যাচার কেনো করবেন।।
আমি নিজের বেতন এর টাকায় কিনা সার্জিকাল মাস্ক পরে প্রতিদিন অপারেশন করি। পিপিই নিজের টাকায় কিনা আছে, অন্যরা না পরলে একা পরে কি হবে তাই পরি না। ৩ মাস কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? এখন বলেন এগুলো পাওয়া যাচ্ছে না?
আমাদের অনেকে আজ আপনাদের এসব মিথ্যাচার এর কারনে আক্রান্ত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এরকম অনেক মিথ্যা প্রস্ততির নাটক সাজিয়ে হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে কিছু লুটেরারা দল।”
এই লেখাটির কারণে আজ ১৮ ই এপ্রিল কৈফিয়ত তলব করে নোটিশ জারি করা হয়।
নোটিশে জানানো হয়, লেখাটির মাধ্যমে তিনি সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে শিষ্টাচার বর্জিত শব্দ প্রয়োগ করে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। পিপিই সহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ডে কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগীর সেবা দানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ফ্লু কর্ণার, জরুরী বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, শিশু বিভাগ যেখানে সন্দেহজনক উপসর্গ নিয়ে রোগী আসে এবং অন্যান্য বিভাগ্র চাহিদা অনুযায়ী পিপিই সহ যাবতীয় সুরক্ষা সরবরাহ করা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুত রয়েছে। নির্ধারিত ঠিকাদারকে কার্যাদেশ ও প্রদান করেছেন এ ব্যাপারে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন।
নোটিশে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সুস্পষ্ট ধারণা ছাড়া সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষ সৃষ্ট করতে পারে অথবা প্ররোচিত করতে পারে – এই প্রেক্ষিতে সরকারী কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এবং সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ কেন করা হবে না তার কারণ জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডা. আবু তাহেরকে।
এদিকে গত ১৬ এপ্রিল ফেনী জেলার বি এম এ প্রেসিডেন্ট শাহেদুল ইসলাম কাউসার তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে জানান, “তিন সত্যি – ফেনী জেলায় N95 মাস্ক কিংবা সমমানের KN-95/FFP-2 মাস্ক একটাও সরবরাহ করা হয়নি আজ অবধি ১৬/৪/২০!”
উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা ও আশেপাশের ৯টি জেলায় সার্বিক পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্যসেবার খোঁজ নিতে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে টেলিকনফারেন্সের আয়োজন করা হয় যা সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ জেলার খোঁজ নেয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.শামসুদ্দোহা সরকার সঞ্চয় (করোনায় অসুস্থ সিভিল সার্জনের পক্ষে) বক্তব্য দিতে গিয়ে জানান যে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ N95 মাস্ক নারায়ণগঞ্জে একটিও পাননি।
প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান যে N95 দেয়া যায়নি তবে N95 সমমানের মাস্ক কিছু সরবরাহ করা হয়েছে, আরো কিছু সরবরাহ করা হবে শীঘ্রই।
এই কথার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ হন বলে জানা গেছে। কেউ কেউ এ নিয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের জন্য দায়িত্বশীল দের প্রতি আহ্বান জানান।
গত বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে নকল বা নিম্নমানের পিপিই বা সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের সংবাদ আসছে। অনেক ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন। চাকুরি বিধিমালার বেড়াজালে বেশিরভাগই এ নিয়ে কথা বলছেন না। কেউ বা প্রতিবাদ করছেন কর্মস্থলে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এই সময়ে এ ধরনের নোটিশ জারি করা হলো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ঝড় বইছে।
নিউজ ডেস্ক