বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০
ডা. মোবাশ্বের আহমেদ
মেডিকেল অফিসার
পীরগাছা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, রংপুর
পেরিফেরিতে গিয়ে প্রথম এই টেস্ট এর নাম শুনি। প্যাথলোজিষ্ট হাসতে হাসতে বলল, “স্যার এর অপর নাম উইন্ডো টেস্ট!”
আমিতো রীতিমতো অবাক। এ আবার কি?
এক রোগীর সিরাম-ইলেকট্রোলাইট করতে দিয়েছিলাম। সোডিয়াম লেভেল জানাটা চিকিৎসার জন্য খুব জরুরী ছিল। রিপোর্ট আসল নরমাল। কিছুতেই হিসাব মিলছিল না। তাই আমার ক্লিনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে সোডিয়াম সমৃদ্ধ আইভি স্যালাইন এর অর্ডার দিয়ে রোগীকে বারবার ফলো আপ দিচ্ছি। ঘন্টা খানেক পর রোগীর অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করল। তারমানে সত্যি সত্যি সোডিয়াম এর ঘাটতি ছিল। তাহলে রিপোর্ট এ সোডিয়াম নরমাল কেন? হিসাব মিলল না!
পরপর তিনটা রোগীকে জয়েন্ট পেইন এন্ড সোয়েলিং থাকায় সিরাম ইউরিক এসিড টেস্ট দিলাম। তিনটারই ফলাফল একই। সাত। আসলে ব্যাপারটা কি?
এবার প্যাথলোজিষ্ট লাঞ্চ করতে যাওয়ার সুবাদে ল্যাব এ ঢুকে দেখি কম্পিউটার এ ইউরিক এসিড এর লেভেল সাত সেভ করা। বুঝলাম যে রোগিই আসুক, যে রোগেরই হোক এই লেভেল হেরফের হয়না। এটা সাত এ চিরন্তনী!
প্যাথলোজিষ্টকে রুমে ডাকলাম। প্রথম এবং দ্বিতীয় দুই ঘটনারই ব্যাখ্যা চাইলাম। প্যাথলোজিষ্ট তো অবাক।
“স্যার এগুলো তো বালতি টেস্ট। স্যার ইউরিক এসিডের রিএজেন্ট নাই। তাই আপাতত একই রিপোর্ট। আর সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট এখানে হয়না, তাই রক্ত নেয়া হয় আর রিপোর্ট দেয়া হয়। রক্তগুলো টেস্টটিউব এ নিয়ে রাখা হয়, পরে বালতিতে করে ফেলে দেয়া হয়। তাই এর নাম বালতি টেস্ট!”
“স্যার এখানে তো কিছু কিছু পরীক্ষা করা হয়। আমি আগে যে ক্লিনিকে ছিলাম, সেখানে প্রায় সব টেস্টই এমন ছিল। সিম্পটম (রোগের লক্ষণ) দেখে টেস্টের ফলাফল কমবেশি করে দিয়ে দিতে হত। এগুলো জানালা দিয়েও ফেলা হয় তাই এগুলোকে উইন্ডো টেস্টও বলে। স্যার কেন আপনি জানেন না?”
আমি আর ‘না’ বলে নিজের অজ্ঞতা বাড়াতে না চেয়ে আসুন বলে বন বন করে ঘুরতে থাকা মাথাটা নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। মাথায় ঘুরছিল শুধু কবিতার একটা লাইন…..
“রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করো নি!”