প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০
ডা. মোবাশ্বের আহমেদ
মেডিকেল অফিসার,
পীরগাছা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, রংপুর।
এক গ্রাম পুলিশ এসে সাত-সকালে জরুরী বিভাগের দরজায় কড়া নাড়ছিল।
– “কি সমস্যা?”
– “স্যার, একজন রোগীকে নিয়ে এসেছি রাস্তায় পড়ে ছিল!”
কথা বলতে বলতে একজন এস.আই. কনস্টেবলসহ এসে হাজির। রুগীর দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেললাম কি হয়েছে রোগীটির?
স্ট্রিট পয়জনিং এর শিকার। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ছিল। সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে, তারা ইঁদুরের বিষ থেকে শুরু করে ধুতুরার বীজের গুড়া সব কিছুর মিশ্রণে এই বিষ তৈরি করে। স্পেসিফিক চিকিৎসা দেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়!
রোগীর আত্মীয়-স্বজন সঙ্গত কারণেই সঙ্গে নাই।
একজন কনস্টেবল তার লুঙ্গির গিঁট এ খুঁজে একটা মোবাইল নম্বার পাওয়ার পর কল দিয়ে দেখা গেল সে সুদূর সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা। ঢাকায় কাজ করে গতকাল তার বাড়িতে আসার কথা ছিল, সবাই উৎকণ্ঠিত হয়ে আছে!
তার বউ হয়তো আশায় আছে, ঈদে আসতে পারে নাই, দিনমজুর মানুষ কিভাবে আসবে? করোনার জন্য আয় রোজগার নাই। এখন হয়তো ঈদে তাকে যে শাড়ি কিনে দেয় নাই সেটা কিনে দিবে। হয়তো তার ছেলেমেয়েগুলো গতকাল থেকে ঈদের আনন্দে নেচে বেড়াচ্ছিল, “বাবা এসে নতুন জামা কিনে দিবে।”
ঈদের দিন সবার নতুন জামা দেখে তাদের মন খারাপ হয়েছিল, বাবা মোবাইল করে হয়ত স্বান্তনা দিয়েছিল,
– “মা বাড়িতে গেলেই তোদেরকে নতুন জামা কিনে দিবো।”
কিন্তু সে এখন রংপুরের এক উপজেলা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আত্মীয় স্বজনকে আসতে বলার পর মোবাইলে শোনা যাচ্ছে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেছে।
দুই এক দিন পর যখন তার ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরবে, স্বাভাবিক হবে, তখন সবার আগে সে কি করবে জানেন?সে হাসপাতালে বিছানার নিচে, পকেটে টাকা খুঁজবে, পাগল এর মত খুঁজবে, কারণ সেই টাকাই তার সহায় সম্পদ, তার স্বপ্ন। যে স্বপ্নগুলো এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে! তার স্ত্রীর বাসনা, তার ছেলে মেয়ের আবদার, সব তার চোখের পানি হয়ে ঝরে পড়বে।
দুনিয়াটা বড়ই বিচিত্র! এই টাকা চুরি করে হয়তো আরেকজন ইয়াবা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। দুইজনেই অজ্ঞান; একজন হয়তো সুখের নেশায়, আরেকজন কষ্টের নীল বেদনায়!