‘প্যারাসিটামল’ অনেক সময় পেটব্যথাজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

প্যারাসিটামল একটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ যা মূলত জ্বর এবং মৃদু থেকে মাঝারি ব্যথা নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি একটি অ্যানালজেসিক ও অ্যান্টিপাইরেটিক ওষুধ হিসেবে পরিচিত। যদিও এটি সাধারণত নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়, তবুও অতিরিক্ত ব্যবহার বা দীর্ঘমেয়াদী সেবনে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে পেটের ব্যথা এবং পেটজনিত অন্যান্য সমস্যা অন্যতম। এই প্রবন্ধে আমরা প্যারাসিটামলের ব্যবহার, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং পেটের সমস্যার কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

প্যারাসিটামলের কার্যকারিতা

প্যারাসিটামল মূলত দেহের মস্তিষ্কে থাকা হাইপোথ্যালামাসে কাজ করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিকের উৎপাদন হ্রাস করে, যা ব্যথা এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে জ্বর কমে এবং ব্যথা উপশম হয়।

ব্যবহারের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ:

1. সাধারণ জ্বর কমানো।

2. মাথাব্যথা, দাঁতের ব্যথা এবং পেশীর ব্যথা উপশম করা।

3. ঠান্ডাজনিত সমস্যায় জ্বর এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণ।

প্যারাসিটামল এবং পেটের সমস্যা

★ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার

প্যারাসিটামল সাধারণত নিরাপদ, তবে সঠিক ডোজ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দিনে সর্বোচ্চ ৪০০০ মিলিগ্রামের বেশি প্যারাসিটামল গ্রহণ করা বিপজ্জনক। অতিরিক্ত সেবন লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (পেট এবং অন্ত্র) সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

★এসিডিটির সমস্যা

প্যারাসিটামল সেবনের পর পেটের অম্লতা বা এসিডিটি বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি পেটব্যথার অন্যতম কারণ। বিশেষ করে যদি এটি খালি পেটে খাওয়া হয়, তাহলে সমস্যা আরও গুরুতর হতে পারে।

★গ্যাস্ট্রাইটিস এবং পেপটিক আলসার

দীর্ঘমেয়াদে প্যারাসিটামল সেবনে গ্যাস্ট্রাইটিস বা পেটের অভ্যন্তরীণ আবরণে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। এতে পেপটিক আলসার বা পেটের ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদিও প্যারাসিটামল সাধারণত নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs)-এর মতো গ্যাস্ট্রিক আলসার সৃষ্টি করে না, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

★লিভারের ওপর প্রভাব

প্যারাসিটামলের প্রধান বিপাক প্রক্রিয়া ঘটে লিভারে। অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণ করলে লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। লিভার যদি সঠিকভাবে বিষাক্ত পদার্থ প্রসেস করতে না পারে, তবে তা পেটের ব্যথা এবং বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে।

★ অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া

কিছু মানুষের মধ্যে প্যারাসিটামলের কারণে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এতে পেটব্যথা, ডায়রিয়া এবং বমির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

খাওয়ার নিয়ম: খালি পেটে প্যারাসিটামল না খাওয়াই ভালো। এটি খাবারের পরে সেবন করলে পেটের সমস্যা কম হয়।

সতর্কতা: দীর্ঘদিন ধরে এই ওষুধ সেবন না করাই ভালো। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

অন্যান্য ওষুধের সাথে মিশ্রণ: প্যারাসিটামল এবং অ্যালকোহল একসঙ্গে গ্রহণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

প্যারাসিটামলের বিকল্প এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

প্যারাসিটামলের অতিরিক্ত সেবন থেকে পেটের সমস্যার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিকল্প উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে:

প্রাকৃতিক উপায়: মৃদু ব্যথার জন্য আদা বা গরম পানির সেকনির্ভর চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: পেটের সমস্যার ঝুঁকি এড়াতে খাবার তালিকায় ফাইবারযুক্ত খাবার এবং প্রচুর পানি যোগ করা উচিত।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্যারাসিটামল সেবনের চিত্র

বাংলাদেশে প্যারাসিটামল একটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ। এটি সাধারণত সহজলভ্য এবং কম দামে পাওয়া যায়। তবে অনেক মানুষ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এটি গ্রহণ করেন, যা পেটের সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

সচেতনতার অভাব

গ্রামাঞ্চলে ওষুধ সেবনের বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক মানুষ ছোটখাটো অসুখে নিজ উদ্যোগে প্যারাসিটামল সেবন করেন। এটি কখনো কখনো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

সরকারি উদ্যোগ

সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন সময়ে ওষুধ সেবনের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে প্রচারণা চালালেও তা এখনও পর্যাপ্ত নয়।

প্যারাসিটামল একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং নিরাপদ ওষুধ, তবে এর সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ডোজ বা অনিয়ন্ত্রিত সেবন পেটের সমস্যার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। তবেই প্যারাসিটামল সেবনের ফলে উদ্ভূত স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন।

Moin Uddin Ahmad Sibli

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

এক পা হারিয়েও হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন গাজার চিকিৎসক খালেদ

Sun Jan 5 , 2025
রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ডাক্তার খালেদ আল-সাইদি, ফিলিস্তিনের গাজার আল আকসা হাসপাতালে কাজ করছেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে। তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে তিনি সম্প্রতি হারিয়েছেন এক পা। কিন্তু অব্যাহত রেখেছেন চিকিৎসা সেবা প্রদান! আজ রবিবার (৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেশা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo