প্রথমবারের মত হিউম্যান জিন এডিটিং বাচালো লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জীবনঃ ক্যান্সার চিকিতসায় বিপ্লবের হাতছানি

লেখকঃ ডাঃ মোঃ মারুফুর রহমান

লায়লা, আলিফ লায়লার লায়লা নয়, যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহন করা ছোট্ট লায়লা মাত্র ৩ মাস বয়সে আক্রান্ত হয় একিইউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া যা বিশ্বব্যাপী অস্থিমজ্জার অন্যতম ভয়ংকর ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত। প্রথম জন্মদিন পালনের আগেই লায়লার শরীরে কয়েকবার এক্সটেনসিভ কেমোথেরাপী, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সহ একটি ড্রাগ ট্রায়াল ও করা হয়, তবুও দূর্ভাগ্যজনকভাবে ছোট্ট লায়লার শরীরে বার বার ফিরে আসছিলো ভয়ংকর ক্যান্সার।

সব রকম চেস্টায় ব্যার্থ হবার পর লায়লার ডাক্তারেরা যুক্তরাজ্যের University College London এর একটি নতুন ধরনের জেনেটিক এডিটিং টেস্ট এর কথা শোনেন। সাধারনভাবে জিন এডিটিং কাজ করত রোগীর শরীর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অন্যতম প্রহরী T-cell  নিয়ে সেটাকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে পরিবর্তীত করে ক্যান্সার সেল আক্রমন এর উপযোগী করে রোগীর শরীরে পুনঃস্থাপন এর মাধ্যমে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যায়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। তাছাড়া লায়লা শরীরে এতবার কেমোথেরাপী এবং ক্যান্সার কোষ এর আগ্রাসন এত বেশি ছিল যে যথেস্ট পরিমান সুস্থ T-cell তার শরীরে ছিলো না কাজ করার মত।

dn28454-2_800_web_1024

University College London এ গবেষক Waseen Qasim এর নেতৃত্বে ‘off-the-shelf” থেরাপি নিয়ে কাজ চলে যা প্রচলিত প্রক্রিয়ার চেয়ে কম সময়সাপেক্ষ এবং কম ব্যায়বহুল। এ প্রক্রিয়ায় রোগীর শরীর থেকে T-cell নেবার বদলে ডোনার এর কাছ থেকে সুস্থ T-cell নেয়া হয়। এই টি-সেল এর উপর মলিকিউলার সিসর বলে পরিচিত যাদুর কাচি “TALEN Protein” প্রয়োগ করে একে রোগীর শরীরে প্রবেশ ও এবং শুধুমাত্র লিউকেমিয়া কোষ এর উপর আক্রমন উপযোগী করে তৈরি করা হয় UCART19 T-cells । গবেষকগণ এই বিশেষ T-cell এর কিছু জিন সরিয়ে ফেলে একে কেমোথেরাপির ড্রাগ এর কাছে ইনভিজিল ম্যান এর মত ইনভিজিবল করে তোলেন! এই কোষগুলো ল্যাবরেটরিতে সফলভাবে টেস্ট করা হয় এবং তারা যখন জানতে পারেন লায়লার জন্য আর অন্য কোন চিকিতসাপদ্ধতি অবশিষ্ট নেই তারা প্রথমবারের মত এটা হিউম্যান টেস্ট করতে রাজি হন। চিকিতসকেরা যেহেতু পূর্বেই ঘোষনা দিয়েছিলেন যে লায়লার জন্য প্রচলিত কোন চিকিতসা পদ্ধতি বাকি নেই তাই লায়লার বাবা মা ও নতুন এই চিকিতসা গ্রহনে রাজি হন।

লায়লার শরীরে অবশেষে ১মিলি পরিমানে এই ম্যাজিক UCART19 T-cells প্রবেশ করানো হয় এবং পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয় এই টি সেলগুলোকে ক্যান্সার সেলকে আক্রমন করার জন্য। ২ মাস পর লায়লার চিকিৎসকেরা ঘোষনা করেন লায়লার শরীরে আর কোন ক্যান্সার কোষ অবশিস্ট নেই। এ ঘোষনার পর লায়লার শরীরে আবারো বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে লায়লা শরীরে প্রতিস্থাপিত বোন ম্যারো কাজ শুরু করার পর তার শরীরে প্রবেশ করানো মডিফায়েড UCART19 T-cells গুলো ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে লায়লা শরীরে কোন জেনেটিক্যালি মডিফায়েড কোষ অবশিষ্ট থাকে না। লায়লা এখন বাসায় সুস্থতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে ক্রমশ এবং নিয়মিত চেকআপে আছে।

লায়লার এই সফলতার পর গবেষকগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২০১৬ সালে এই UCART19 T-cells এর নিয়মমাফিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করবেন Cellectis বায়োটেকনলজি কোম্পানির অর্থ সহায়তায়। এই ট্রায়ালে আরো বেশি মানুষের উপর, বেশি সময় ধরে এই মডিফায়েড জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এর কার্যকারীতা এবং পার্শপ্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করা হবে।

গবেষক Qasim বলেন, আমরা সফল হয়েছি হয়ত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ছোট্ট লায়লার উপর, আরো বড় পেশেন্ট গ্রুপের উপর এটা সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে নিঃসন্দেহে এটি হবে লিউকেমিয়াসহ অন্যান্য ক্যান্সার চিকিতসায় সবচেয়ে বড় সফলতার একটি।

তথ্যসূত্রঃ science alert,
মূল গবেষনা প্রবন্ধঃ 2046 First Clinical Application of Talen Engineered Universal CAR19 T Cells in B-ALL

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

6 thoughts on “প্রথমবারের মত হিউম্যান জিন এডিটিং বাচালো লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জীবনঃ ক্যান্সার চিকিতসায় বিপ্লবের হাতছানি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

নতুন ডেন্টাল সার্জনদের জন্য কিছু কথা

Sat Nov 7 , 2015
আমি ইদানিং কিছু কিছু নতুন পাশ করা কিংবা অধ্যায়নরত ডেন্টাল সার্জনদের মধ্যে একধরনের হতাশা দেখতে পাই। অনেক সময় সিনিয়র বড় ভাইদের অনেক কথাতেও দেখি পেশা নিয়ে হতাশার ছায়া। আসলেই কি আমাদের দন্ত চিকিতসা পেশার এতই দুর্গতি? আমার কিন্তু তা মনে হয়না। কারন, আমরা ডেন্টাল সার্জনরা সবাই শহরমুখী, এই কারনে বিভাগীয় […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo