২৪ জুন ২০২০, বুধবার
ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
বসুন্ধরা কোভিড ডেডিকেটেড হসপিটাল।
১) এই মহামারীর সময়ে দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে ভুগছেন মায়েরা, এতে স্তনে দুধ তৈরিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে?
উত্তর: দুশ্চিন্তা বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুধ তৈরি করা থেকে বিরত রাখে না, কিন্তু সাময়িকভাবে দুধ আসায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে৷ মা-কে যতোটা সম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
২) দিনে কতোবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে?
উত্তর: ৮-১২ বার৷ রাতের বেলায়ও দুধ খাওয়াতে হবে।
৩) শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কি না কীভাবে বুঝব?
উত্তর: ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬ বার প্রস্রাব করলে ধরে নিতে হবে পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে।
৪) জন্মের কতোক্ষণের মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে?
উত্তর: যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করে দিতে। এক ঘণ্টার মধ্যে শুরু করতে পারলে এক-পঞ্চমাংশ নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায়।
৫) শুনেছি বাচ্চা জন্মের পরপর যে হলুদাভ আঠালো শালদুধ নিঃসৃত হয় সেটি ফেলে দিতে হয়। এটি কি সঠিক?
উত্তর: এটি একটি মস্ত বড় ভুল কথা৷ মায়ের গর্ভে অত্যন্ত নিরাপদে থেকে এই বিরূপ ধরণীতে সদ্য আসা এক অতিথির জন্য এর চেয়ে নিরাপদ এবং উপযুক্ত খাবার আর হয় না৷ এটিই শিশুর জীবনের প্রথম টিকা। শালদুধ শিশুকে না খাইয়ে ফেলে দেওয়া মানে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সারা জীবনের জন্য দুর্বল করে ফেলা।
৬) কতোদিন পর্যন্ত বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে?
উত্তর: জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুকে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিড করাতে হয়। অর্থাৎ বুকের দুধ ছাড়া কিছুই খাবে না, এমনকি এক ফোঁটা পানি খাওয়াবারও প্রয়োজন নেই। ৬ মাস পার হবার পর শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স ২ বছর হওয়া পর্যন্ত বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে।
৭) যদি শিশু অসুস্থ থাকে তখনও কি বুকের দুধ খাওয়াতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, তখনও চালিয়ে যেতে হবে। শিশুকে সুস্থ করে তুলতে বুকের দুধ সাহায্য করবে।
৮) এতো ঝামেলা না করে শিশুকে ফর্মুলা মিল্ক/ কৌটা বা প্যাকেটের দুধ খাওয়ালে হবে না?
উত্তর: না। এগুলো নিরাপদ নয়। এসব খাবার জীবাণুমুক্ত করে বানাবার কোনো উপায় এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। যেসব শিশু এসব খাবার খায় তাদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কান পাকা রোগ এবং অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেসব শিশু কৌটার দুধ খায় তাদের চেয়ে মায়ের দুধ পান করা শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ বেশি হয়।
৯) বুকের দুধ পান করলে শিশুর পরবর্তীতে কী কী ঝুঁকি কমে?
উত্তর: অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শৈশবকালীন হাঁপানি, শৈশবকালীন রক্তের ক্যান্সার লিউকেমিয়া ইত্যাদির ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
১০) বুকের দুধ পান করালে মায়ের কি কোনো উপকার হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, নানাবিধ উপকার হয়। মায়ের প্রসবজনিত রক্তপাত হবার ঝুঁকি কমে। স্ফীত জরায়ুকে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি কমে৷ পরবর্তীতে স্তন, জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কমে আসে। সর্বোপরি মা এবং শিশুর মধ্যে এক অনন্য আত্নিক বন্ধন তৈরি হয়।