প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৩ জুলাই ২০২০, সোমবার
ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
বসুন্ধরা কোভিড ডেডিকেটেড হসপিটাল।
১) প্রশ্ন: কোভিডের রোগীরা হসপিটালে ভর্তি হলে নাভির পাশে একটা ইনজেকশান দেওয়া হয়৷ এটা কি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসা?
উত্তর: অনেকেই মনে করছে এটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসা। আসলে ব্যাপারটি তেমন নয়। দেখা গেছে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যান তাদের একটি বড় অংশ রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া জনিত জটিলতায় মারা যান৷ এই ইনজেকশানটি রক্ত তরল করার একটা ওষুধ। এটি রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া প্রতিরোধ করে। বলা যেতে পারে এই ইনজেকশানটি কোভিডের একটি বড় রকমের জটিলতা যেন না হয়, তার জন্যেই আগে-ভাগে দেওয়া। এই ইনজেকশান আগেও আমরা বহু ব্যবহার করেছি, বিশেষত হার্টের রোগীদের অহরহ দিয়েছি৷
তবে হ্যাঁ, এটি কোভিডের চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত, যা চিকিৎসকের পরামর্শে নিতে হয়।
২) প্রশ্ন: হ্যান্ড স্যানিটাইজার কতোটুকু নিতে হবে?
উত্তর: একটা পয়সা হাতে যতোটুকু দখল করে অতোটুকু পরিমাণে নেয়াই যথেষ্ট।
৩) যারা ধূমপান করে তাদের কি করোনাভাইরাস বেশি ক্ষতি করতে পারে?
উত্তর: এখন পর্যন্ত যে সীমিত তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তার আলোকে বলা যায়, যারা ধূমপায়ী তাদের কোভিডে জটিলতার সম্ভাবনা বেশি। কারণ করোনাভাইরাস মূলত ফুসফুসকে আক্রমণ করে, আর যারা ধূমপান করে, তাদের ফুসফুস আগে থেকেই নাজুক অবস্থায় থাকে। অন্যদিকে ধূমপান সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই কমিয়ে দেয়। ফলে শুধু করোনাভাইরাস কেন যেকোনো জীবাণু দিয়েই আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ক. তাহলে কি কোনো আশাই নেই? ভুল বুঝতে পেরে ধূমপান যদি কেউ ছেড়ে দিতে চায়?
উত্তর: আশার কথা হচ্ছে ধূমপান ছেড়ে দিলে ধূমপানজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকখানি কমে যেতে পারে। জীবনের আয়ু বৃদ্ধি পেতে পারে।
– ধূমপান ছেড়ে দেবার ১ বছর পর হার্ট এটাকের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। ছাড়ার ১৫ বছর পর হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমে যে, কখনও ধূমপান করেনি তার সমান হয়ে যেতে পারে।
– ধূমপান ছেড়ে দেবার ২-৫ বছরের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যে কখনও ধূমপান করেনি তার সমান হয়ে যেতে পারে।
– ধূমপান ছেড়ে দেবার ৫ বছরের মধ্যে মুখ, গলা, খাদ্যনালী এবং মূত্রথলির ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।
– ধূমপান ছেড়ে দেবার ১০ বছর পর ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যাবার ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।
খ. তাহলে কেউ যদি আরও কিছুদিন ধূমপান করে তারপরই ছাড়তে চায়?
উত্তর: সিগারেট বানানোই হয়েছে নেশার জন্য। কেউ যতো বেশিদিন ধরে সিগারেট খাবে, সে ততো বেশি এর নেশায় জড়িয়ে যাবে। তার জন্যে ততো কঠিন হবে এই নেশা থেকে বের হওয়া। তাই যতো তাড়াতাড়ি ছাড়ার প্রচেষ্টা শুরু হবে ততোই ছাড়তে পারার সম্ভাবনা বাড়বে।
গ. ধূমপান ছাড়ার জন্যে কিছু পরামর্শ দেবেন?
– কোন দিন থেকে ছাড়বেন আজই ঠিক করে ফেলুন। সেই দিনটি যেন আগামী দুই সপ্তাহের মাঝেই হয়।
– আপনার বাসা, গাড়ি এবং অফিস থেকে সিগারেটের প্যাকেটগুলো সরিয়ে ফেলুন।
– পণ করুন আর ধূমপান করবেনই না৷ এমনকি একটি টানও না। নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ দিন।
– যদি মদ্যপানের অভ্যেস থাকে সেটিও ছাড়ুন। মদ্যপান আপনার ধূমপান করার ইচ্ছে বাড়িয়ে দেবে।
– বলে দিন, আপনার সামনে কেউ যেন ধূমপান না করে। আপনার সামনে কেউ যদি ধূমপান করে, তাহলে কিন্তু ধূমপান ছাড়া খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
– কেন আপনি ধূমপান ছাড়তে চান আর ছাড়তে পারলে আপনার কী কী লাভ হবে, তা নিজের মনকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিন।
– মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের সাহায্য নিতে পারেন৷