প্রশ্ন ফাঁসের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবীতে আন্দোলনরত ভর্তিচ্ছু সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা আজ পুর্বনির্ধারিত কর্মসূচী শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে পরে আবারো শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নেয়। এসময় তাঁদের সাথে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য মেডিকেল শিক্ষার্থীরা, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যানার সহ যোগদান করে। শাহবাগে অবস্থান কালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ জন রেসিডেন্ট চিকিৎসক যোগদান করলে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে প্রশ্ন ফাঁসের নানা অনিয়মের প্রতিবাদে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও করার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শাহবাগ থেকে তারা মিছিল নিয়ে হোটেল সোনারগাঁও এর সামনে পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে থাকে। এসময় পুলিশের সাথে তাঁদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে কাওরান বাজারের সামনে তাঁদের উপর পিপার স্প্রে(মরিচের গুঁড়ার স্প্রে), ছোড়া হয়, টিয়ার গ্যাস ছোড়া, লাঠি চার্জ করা হয় সমবেত চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের উপরে। এসময় বুটের আঘাতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়, লাঠিচার্জে আহত হয় অন্তত ১০ জন চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষার্থী। সাধারণ ভর্তিচ্ছু বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে সকালে ক্লাস থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য সাধারণ মেডিকেল শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ, তালা ঝুলিয়ে রেখেছিল। প্রহসনের এ পরীক্ষা বাতিল না করা হলে বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি মেডিকেল কলেজে সর্বাত্মক ক্লাস বর্জন এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মঅবিরতির মত জোরদার কর্মসূচী আসতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা চান “মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মেধাবীরা আসুক। কোন অবস্থাতেই মেডিকেল শিক্ষাঙ্গণ কলুষিত করা যাবে না। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের লালনের জায়গা যাঁদের উপর দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নির্ভর করে। প্রশ্নবোধক কোন পরীক্ষার মাধ্যমে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের পড়াতে হলে সেটা হবে চরম হতাশার।” এভাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক তাঁদের অসন্তোষের কথা ব্যক্ত করেন। সর্বশেষ খবর, অন্তত দশ জন শিক্ষার্থী, চিকিৎসক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন বা চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা যায়, ব্যাপক হারে শুধু প্রশ্ন ফাঁসই নয়, প্রতিবছরের চেয়ে তূলণামূলকভাবে প্রশ্ন সহজ করার মাধ্যমে এক শ্রেণীর মেডিকেল কলেজ ব্যবসায়ীকে সুযোগ করে দেয়া, তড়িঘড়ি করে মেডিকেলের ফলাফল প্রকাশ জনিত নানা অসঙ্গতি এবং লুকোচুরি করে পুলিশ প্রহরায় ২০১৫-৬ বর্ষে মেডিকেল শিক্ষার্থী ভর্তি এ বারের মেডিকেল কলেজ ভর্তি কার্যক্রম কে বিতর্কিত করেছে। দেশের বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক সহ অন্যান্য পেশাজীবী ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আকুল আবেদন জানানো হয়েছে এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনে পূর্বের ফলাফল এবং ভর্তি বাতিল করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেবার।