উখিয়া উপজেলা, কক্সবাজার।
১০ অক্টোবর ২০১৭, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার জামতলী নামক স্থানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে মাননীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক এমপি, আনুষ্ঠানিকভাবে মায়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী সাড়ে ৬ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির জন্য কলেরা টিকাপ্রদান উদ্বোধন করেন।
দুই ধাপে মোট ৯ লক্ষ ডোজ কলেরা টিকা মুখে খাওয়ানো হবে। প্রথমে ১ বছরের বেশী বয়সী সকল শিশু ও নারী-পুরুষকে এক ডোজ করে টিকা খাওয়ানো হবে। এই সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখ। দুই সপ্তাহ পর ১ থেকে ৫ বছর বয়সী ২ লক্ষ ৫০ হাজার শিশুকে ২য় ডোজ কলেরার টিকা খাওয়ানো হবে।
গত ২৫ আগস্ট ২০১৭ তারিখ হতে ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাবাসী মিয়ানমার নামক রাস্ট্রের সেনা ও পুলিশ বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং বান্দরবনে আশ্রয় গ্রহণ করে।
পূর্ব হতেই আশ্রয় নেয়া ৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সাথে আরও ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফ, উখিয়া এবং নাইক্ষংছড়িতে সীমিত পরিসরের দুর্গম জায়গায় আশ্রয় নেয়ায় অন্যান্য মৌলিক চাহিদার অপ্রতুলতার সাথে বিশাল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠির নিরাপদ পানি এবং পয়োনিস্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুকিঁর সৃষ্টি করেছে। আগত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মাধ্যমে যাতে কোন ধরনরে রোগ প্রাদুর্ভাব না ঘটে সে বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সংক্রামক রোগসমূহের বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রাখার পাশাপাশি প্রতিরেধি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
হাম, রুবেলা এবং পোলিও রোগের টিকা দানের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ১ লক্ষ ৩৫ হাজার শিশুকে হাম-রুবেলা এবং ৭৫ হাজারের শিশুকে পোলিও টিকা প্রদান করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার যে সামগ্রিক মানবিক কার্যক্রম শুরু করেছে তার ধারাবাহিকতায় মাননীয় মন্ত্রী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান জনাব মোহাম্মদ নাসিম, এমপি মহোদয়ের সিদ্ধান্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবারে কলেরা প্রতিরোধে সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় লক্ষ লক্ষ মানুষকে মুখে খাবার কার্যকরী কলেরা টিকা প্রদান শুরু করেছে।
বিশ্বে উদ্বাস্তুদের মধ্যে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এত দ্রুত এত অধিক মানুষকে কলেরা টিকার আওতায় আনার এই মহা কর্মকান্ড বিশ্বে জনস্বাস্থ্যে মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে অবস্থিত “ইন্টারন্যাশনাল কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ অফ কলেরা ভেকসিনস প্রভিশনস” কর্তৃপক্ষের কাছে কলেরার টিকাপ্রাপ্তির আবেদন করে। উক্ত কর্তৃপক্ষ ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ৯ লক্ষ ডোজ টিকান বরাদ্দ দেয়।
বরাদ্দ পাবার ৮ দিনের মধ্যে চার্টার বিমানের মাধ্যমে ঢাকায় টিকা আনা হয়। সেখান হতে সরাসরি কক্সবাজারে আনা এবং দিনের মধ্যে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষকে টিকা খাওয়ানোর জন্য হাজার হাজার টিকাদানকারী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ ও বিতরণ এবং সফলভাবে উদ্বোধন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য সক্ষমতাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মহোদয় প্রধান অতিথির ভাষনে এই বিষয়টিই উল্লেখ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী অতিথি, সংবাদমাধ্যম কর্মী এবং বিপুল সংখ্যক জনগণের উপস্থিতিতে চট্রগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. এএম মুজিবল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ যিনি রোহিঙ্গাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সেবাকার্যক্রম অধিদপ্তর হতে পরিচালনা করে আসছেন।
অধ্যাপক আজাদ সরকারের গৃহিত স্বাস্থ্য কার্যক্রম সংক্ষেপে বর্ণনা করেন এবং জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এবং আর্ন্তজাতিক এবং দেশীয় এনজিও এবং অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য সেবায় নানাভাবে অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, গ্যাভি এই কার্যক্রমে টিকা সংগ্রহ এবং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকার সহায়তা প্রদান করেছে। তিনি গ্যাভিকে এজন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুস সালাম, এমএনসিএএইচ-এর লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জাতীয় অধ্যাপক ডা. শায়লা খাতুন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ উপপ্রতিনিধি ডা. এডউইন সালভাদর এবং ইউনিসেফ উপপ্রধান ডা. সীমা সেন গুপ্ত সরকারের স্বাস্থ্য কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বপ্রকার স্বাস্থ্য সহায়তা দেবার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব হাবিবুর রহমান এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।