(লেখাটি নারী, পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ-বনিতা সবার জন্যে)
এর দ্বারা সবাই উৎসাহিত হোক।
আমাদের দেশে একজন মা যখন সন্তান জন্ম দেন, অনেক সময়ই নতুন অতিথি আসার খুশিতে আত্মহারা হয়ে আমরা মায়ের যত্ন নিতে ভুলে যাই । একজন মায়ের গর্ভধারণ ও ডেলিভারি সময়ে অনেক স্ট্রেস যায়। তা প্রশমনে আমরা কত টা সতর্ক?
Post partum care: একজন মায়ের গর্ভধারণ পূর্ববর্তী অবস্থায় মোটামুটি ভাবে ফিরে যেতে ৬ সপ্তাহ লাগে। তাই এই ৬ সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভধারণ ও এর পরবর্তী সময়ে মায়ের কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসতে পারে।
মানসিক পরিবর্তন ও করণীয়ঃ
হঠাৎ করে জীবন যাত্রায় একটি পরিবর্তন , হরমোনাল চেঞ্জ এসব কারণে, অনেক মা অনেক সময় বিষণ্ণতায় ভুগেন। অস্থিরতা, ঘুম না আসা, মুড ক্ষণে ক্ষণে চেঞ্জ হওয়া খুব স্বাভাবিক। প্রায় দুই সপ্তাহ এটি থাকতেই পারে, এরপরেও লক্ষণ গুলো থাকলে, খুব বেশি বিষণ্ণ থাকলে মা কে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে পাঠাতে হবে। মা কে সাপোর্ট দিতে হবে। বোঝাতে হবে, আমরা সবাই সাথে আছি, দুশ্চিন্তা করা থেকে বিরত রাখতে হবে। চলাচলে সক্ষম হলে আশেপাশের ভালো জায়গায় মন ভালো করতে নিয়ে যেতে হবে।
শারীরিক পরিবর্তন ও করণীয়ঃ
১.শরীর ভারী হয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তা খুব তাড়াতাড়ি কন্ট্রালে আসবেনা। একেক জনের পরিবর্তন একেক রকম। অন্যের দ্রুত পরিবর্তন দেখে উদ্বিগ্ন হবেন না। বাচ্চাকে ঠিক মত বুকের দুধ খাওয়ালে ওজন কমা দ্রুততর হবে। পাশাপাশি ডাক্তার যখন অনুমতি দিবেন,তখন থেকে হালকা এক্সারসাইজ করতে পারেন।
২. স্তন বড় হয়ে যাওয়াঃ এটি খুব স্বাভাবিক কিন্তু অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। গরম পানি দিয়ে হালকা সেক নেয়া যেতে পারে । দুগ্ধ পান করালে স্তনে ঘা হতে পারে, এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। বেশিরভাগ সময়ই তা সেরে যায়।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্যঃ আঁশ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে। পায়খানা ও মাসিকের রাস্তার মাঝের জায়গাটা অনেক সময় ছিঁড়ে যায়। অনেক সময় ডেলিভারী টাকে সহজ করতে কেটে দেয়া হয়। ডেলিভারি শেষে সেলাই করে দেয়া। ব্যথা হতে পারে। বালিশ বা নরম জায়গায় বসতে হবে। ঠান্ডা প্যাক নিলে কিছুটা স্বস্তি মিলে। পরিষ্কার থাকতে হবে নাহলে সেখানে ইনফেকশন হতে পারে। অনেক মায়ের প্রস্রাব পায়খানা ধরে রাখতে সমস্যা হতে পারে। এজন্যে একটা এক্সারসাইজ প্র্যাক্টিস করতে হবে। kegel’s exercise. প্রস্রাব পায়খানার রাস্তা সজোরে বন্ধ করতে হবে ৩- ১০ সেকেন্ডের জন্যে ১০-১৫ বার । এভাবে দিনে ৩/৪ বার প্র্যাক্টিস করবেন।
৪. মাসিকের রাস্তা দিয়ে ক্ষরণঃ
এটি খুব স্বাভাবিক। ডেলিভারীর পরের রক্ত ও জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় খারাপ জিনিস এভাবে বের হয়ে যায়। ২-৪ সপ্তাহ যেতেই পারে। এর জন্যে স্যানিটারি নেপকিন বা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করবেন। নাহলে ইনফেকশন হতে পারে। অতি রক্তপাত যেমন দুই ঘন্টায় একটি প্যাড ভিজে গেলে, কোন ধরনের দুর্গন্ধ যুক্ত ক্ষরণ হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
৫. পেট ব্যথাঃ জরায়ু গর্ভধারণের পর আসতে আসতে সংকুচিত হয়। এই টাইম টায় পেট ব্যথা হতেই পারে। ঠিক হয়ে যাবে। বেশি খারাপ লাগলে ডাক্তারের কাছে বলে ওষুধ নিবেন।
৬. শারীরিক অবসন্নতাঃ
এতো ধকল যাওয়ার পর অবসন্ন লাগা খুব স্বাভাবিক। তারপর ব্রেস্ট ফিডিং করাতে হয় ২-৩ ঘন্টা পর পর। মা ঠিক মতো ঘুমাতে পারেন না। বাচ্চা যখন ঘুমিয়ে তখন মা কেও রেস্ট নেয়ার মতো পরিবেশ দিতে হবে। প্রোটিন খাবার, দানাদার শস্য, মৌসুমি ফল, সবজি খাওয়াতে হবে, প্রচুর পানি পান করাতে হবে। যেহেতু মা ব্রেস্ট ফিডিং ও করাচ্ছেন,আর কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার চান্স বেশি থাকে ডেলিভারির পর । ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে ঘা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। প্রেসক্রাইবড ওষুধ ঠিক মতো খেতে হবে। মা কে মনে করিয়ে দিতে হবে।
সুস্থ ও প্রশান্ত মা বাচ্চার সুস্বাস্থ্যের জন্যে অত্যাবশ্যকীয়। আসুন আমরা আমাদের মায়েদের জন্যে সাপোরটিভ হই। আর ডেলিভারি প্রসেসে যারা সন্তান হারান , তাদের জন্যে আরো বেশি সাপোরটিভ হই।
****Post partum care is a must, not an option.*****
লিখেছেন:
ডাঃ শারমিন আখতার চৌধুরী
এফসিপিএস, গাইনী এন্ড অবস (পার্ট-১)
অনারারী মেডিকেল অফিসার
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ