ডা. তানভীর ইসলাম
প্রভাষক (এনাটমি), MoMC
খুমেক (০৯-১০)
ছবিতে ডানপাশের মানুষটাকে দেখলে হয়তো চিনতে একটু সময় লাগতে পারে। উনি ডাক্তার নন, একজন মিলিটারি প্যারামেডিক – কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে জীবন বাঁচাতে ওনাদের অবদান অনস্বীকার্য৷
ডানপাশের ভদ্রলোকটির নাম প্রাইভেট ডেসমন্ড ডস। ওনার স্ত্রী ছিলেন একজন নার্স, সেখান থেকে ডেসমন্ড অনুপ্রাণিত হন প্যারামেডিক হিসেবে কাজ করার। যোগ দেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীতে।
তিনি নিজস্ব কিছু বিশ্বাসের কারণে অস্ত্র ব্যবহার করতেন না কখনই, তার মতে অস্ত্র দিয়ে জীবন নাশ করাটা স্রষ্টার চোখে মহাপাপ (conscience objector)। তিনি ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিতে অন্য সব সেক্টরে অনেক ভালো স্কোর করলেও, রাইফেল রেঞ্জে অস্ত্র না ধরার কারণে ফেইল করেছিলেন। সিনিয়র অফিসাররা বারবার তাকে অস্ত্র ধরতে বললেও তিনি বিনীতভাবে প্রত্যাখান করেন। এর কারণে তাঁকে কোর্ট-মার্শালের মুখোমুখি হতে হয়। পরে তাঁর বাবা (উনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত সৈনিক ছিলেন) সিনিয়র অফিসারদের কাছ থেকে প্রত্যায়ন এনে দেন যে ডেসমন্ড একজন প্যারামেডিক হিসেবে থাকবেন, তাঁকে কোন অস্ত্র ধরতে হবে না। তিনি ছাড়া পান কোর্ট মার্শাল থেকে।
প্রথমে সবাই তাকে দেখে অবাক হত, কিছুটা অবজ্ঞাও করত শীর্ণ দেহ দেখে। কিন্তু ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি৷ প্রথম বড় মিশন হিসেবে জাপানের ওকিনাওয়ার “হ্যাক স’ রিজ” দখলের মিশনে অংশ নেন তিনি প্যারামেডিক হিসেবে৷ সে সময় কোন দল হ্যাক স’ রিজ দখল করতে পারেনি৷
যুদ্ধে জাপানিদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে প্রচুর আহত ও নিহত সৈনিকদের রেখেই মার্কিন সৈন্যদল হ্যাক স’ রিজ থেকে পালিয়ে যায়, কিন্তু ডেসমন্ড ডস রয়ে যান পেছনে। তিনি কৌশলে প্রায় সকল আহত সৈনিককে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হন, বেশ কয়েকবার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বেঁচে যান এই নির্ভীক যোদ্ধা। যুদ্ধক্ষেত্রে অসীম সাহসিকতার জন্য মার্কিন সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সামরিক পদক “Medel Of Honor” দিয়ে সম্মানিত করে।
ছবিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান, প্রাইভেট ডেসমন্ড ডসকে পদক পরিয়ে দিচ্ছেন৷
ওনার কমান্ডিং অফিসার ওনাকে বলেছিলেন, “জীবনে কোনদিন মানুষ চিনতে ভুল করিনি, কিন্তু তোমার শীর্ণ দেহ দেখে আমি এতো বড় ভুল কিভাবে করলাম জানি না। এই দেহ দেখে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম, আসলে এর মাঝে আমাদের সবার চেয়ে সাহসী একটা মানুষ বাস করে।”
নিজের সম্পর্কে ডেসমন্ড বলেন, “মানুষকে বাঁচানোর ইচ্ছা, মানুষের করুণ আর্তনাদই আমার অনুপ্রেরণা ছিল। ওকিনাওয়াতে আমার একেক সহকর্মীকে নিরাপদে পাঠানোর পর আমি প্রার্থনা করতাম, ” ঈশ্বর আমাকে আরেকজন আহতকে বাঁচাতে দাও” (“God Help Me Get One More”)…… ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শুনেছিলেন বলেই আমি চেষ্টা করতে পেরেছিলাম”।
আরও বলেন, “যুদ্ধে সৈনিকরা অস্ত্র হাতে যায় দেশের মানুষকে বাঁচাতে, আমি দেখাতে চেষ্টা করেছিলাম অস্ত্র হাতে না নিয়েও কিভাবে যুদ্ধ জয় করা যায়।”……
মানবসেবার এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে তাঁর নাম আজও ইতিহাসে জাজ্জ্বল্যমান।
যারা ওনার ইতিহাস জানতে আগ্রহী, তারা Hacksaw Ridge ইংরেজি মুভিটা দেখতে পারেন।
অনেক ধন্যবাদ