প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৭ এপ্রিল, ২০২১, মঙ্গলবার
শোকগাঁথা
————–
করোনা যুদ্ধে সংগ্রামী বীরশ্রেষ্ঠ
আমার একান্ত প্রিয়জন
প্রিয় মানুষ
আত্মার চেয়ে আপন অভিভাবক
প্রয়াত আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান তুষার
স্যারের স্মরণে শোকগাঁথা
লেখাঃ ডা. মোঃ বায়জিদ বিন মুনির
এমবিবিএস, এমডি (মাইক্রোবায়োলজি), বিএসএমএমইউ
বিসিএস(স্বাস্থ্য)
“তোমাকে খুব বেশী চেনা হয়নি,
যেভাবে চিনেছিলেন তোমার সমবয়সীরা;
তোমার পরিবারের সদস্যেরা,
আমার হয়তো সেরুপ চেনার সময়টা
হয়ে উঠেনি।
হয়ে উঠেনি বলেই জানতে পারিনি
কেমন ছিল তোমার শৈশব,
কেমন ছিল তোমার যৌবন
তবুও প্রায়শই তুমি
প্রজ্ঞার আবরণ ভেংগে;
চকমকি পাথরের মত
অনির্বাণ আলোয় কত না অজানা
জানিয়ে দিতে আমায়।
আমি অবাক হয়ে ভাবতাম
তুমি কেমন করে এত কিছু পারো?
কেমন করে আলোর দ্রোহে
অন্ধকারকে করো অবহেলা।
প্রতিভা আর নৈতিকতার চিরন্তন সাহসে
ছিন্ন করো মিথ্যের অচলায়তন।।
তোমাকে খুব বেশি জানা হয়নি,
যেভাবে তোমার বন্ধুরা জানতেন;
যাদের সাথে তোমার অজস্র স্মৃতি
যাদের সংগে তুমি কাটিয়েছ সন্ধ্যারাত
কিংবা রাত ঘনঘোর।
তবুও মাঝে মাঝে একদম হঠাৎ করে;
সরলতার স্ফুরনে তুমি মেতে উঠতে,
আমায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে অনেকটা সময়।
যেন প্রিয় কবির কবিতার ঘোর।।
তোমার কথা বলার ধরন,
তোমার চিঠি লিখার মূর্ছনা,
সবটাই যেন দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য্যের আকর।
আমি সেথায় শুধুই বিমুগ্ধ সহচর।।
দৃশ্যপট যখন কুয়াশায় ঢাকা
অবিরাম অধঃপতনে যখন চারদিক শুন্য,
সবাই যখন হাপিত্যেশ করছে
এক্টুখানি আলোর প্রত্যাশে,
তখন শুধুই কবিতা লেখার খেরোখাতা ফেলে
তুমি এলে,
তুমি এলে শুকনো মরুভূমির বুকে ফুল ফোটাতে,
সাথে নিজের চিরায়ত উদ্দীপনায়;
সাথে করে নিয়ে এলে
কয়েকজন অকুতোভয় প্রাণ।
যে যুদ্ধে সবাই ভয় পায়
সেথায় তুমি বাজালে সাহসের জয়গান।।
বিড়ম্বিত ভাগ্যের করালগ্রাসে
আমি যখন নিরুপায়,
অনৈতিক অপরাধের লেলিহান শিখায়
যখন পুড়ে যাচ্ছে নীতির বিশুদ্ধতা।
মিথ্যে অভিযোগ আর ক্ষমতার দাপটে
যখন খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছে
অভাজনের অহর্নিশ শ্রম আর সততা।
তখনই তুমি মহীরুহের মতো
স্থির হয়ে রইলে এক প্রত্যুষে,
নিজের দীর্ঘ শিকড় ছড়িয়ে বাধ দিলে
ফুসে উঠা অতলান্তিক বেনোজলে।।
ঠিক তখন থেকেই আমি বুঝতে পেরেছি
আমরা দুজন একই ধুলো মাখা পথের পথিক
আমাদের দুজনের কণ্ঠে একই শ্লোগান
কখনো মর্সিয়া কখনো দুরন্ত আশার ধ্বনি
হে বন্ধু, হে প্রিয়
তোমার সঙ্গে বোধের সদৃশতা দেখে
বার বার চমকে গিয়েছি
ভেবেছি আরেক্টু পরিণত হলে
দৈহিক মিলের সাথে সাথে
চিন্তায় ও চেতনায়ও এক ও অনন্য হয়ে যাবো।
জীবনের চলার পথের বাঁকে বাঁকে
কত কিছু দেখার হয়তো আছে বাকি।
আমি জানি আরো প্রলয় আসবে,
সুখের দিন ক্ষণিকে ফুরাবে,
তবুও তুমি যে শিখিয়েছ দুর্জয় সাহস।
তোমার কাছ থেকে পাওয়া
সত্যের দুর্মর অহংকার,
কূপমণ্ডুক এই আমার হৃদয়কে করেছে
নতুন অরুণের সোনালী গরবে বলিয়ান।।
অথচ সঞ্চয় করা শুরুর আগেই,
প্রস্তুতির প্রারম্ভেই আচমকা এলো ঝড়।
যখন ভাবছি এলোমেলো এই জীবন;
যেন পেলো এক বটবৃক্ষের আশ্রয়।
ভীষন খরায় পাখিটা খুঁজে পেলো
জ্ঞান আর অভিজ্ঞতায় পূর্ণ সরোবর।।
ঠিক তখনই বলা নেই, কওয়া নেই
দুম্ করে তুমি চলে গেলে অগোচরে।
এই জাতি কি জানবে কি হারালো তারা,
দেশের কথা কে ভাববে তোমার মতো করে?
তোমাকে আলিংগন করলো যে মাটি
সে কি জানে তোমার কীর্তির কথা?
কি করে ভুলি হায় এই অসময়ে
তোমাকে হারানোর ব্যাথা।
তোমায় আজন্ম স্মরিব
বিমুগ্ধ স্মৃতিচারণে
তুমি আছ তুমি থাকবে
আমার লেখা কবিতার উচ্চারণে।।