প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১
আমাদের সমাজে চিকিৎসকরা ঈশ্বরের একটি রূপ হিসেবে বিবেচিত হন কারণ তাঁরা রোগ নিরাময় করে মানুষকে নবজীবন দান করেন। যখন আমরা জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে হেরে যেতে শুরু করি, তখন নিজের জীবন বাজি রেখে যারা পাশে এসে দাঁড়ান তারাই চিকিৎসক। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের আবিভার্বের আগে থেকেই সকল আন্দোলনে যেমন ৫২’ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যূত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী প্রগতিশীল আন্দোলনে চিকিৎসকদের ভূমিকা বরাবরই অতুলনীয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পরবর্তী সময়ে এই দেশের চিকিৎসকরা সবকিছু গুছিয়ে আনা থেকে শুরু করে অনেক কম পরিমাণ রসদ নিয়েও দেশের স্বাস্থ্যখাতকে এক উন্নত অবস্থানে নিয়ে গিয়েছেন যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। বর্তমানে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সবাই যখন আতঙ্কে জর্জরিত, তখন সমস্ত রোগীর সেবা করতে এগিয়ে এসেছেন এই ডাক্তার, নার্সরাই। নিজেদের জীবনের প্রতি মায়া ত্যাগ করে তাঁরা লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পৃথিবীতে ডাক্তারদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত ঠিকই, তবে এই করোনা ভাইরাস মহামারীর সময় তাদের ভূমিকা আবারও প্রমাণ করে দিল যে, তাঁরা ছাড়া সমগ্র মানবজাতি অচল এবং তাঁরা আছেন বলেই আমরা সুস্থভাবে বেঁচে আছি। করোনার আতঙ্কের অভিঘাত সামলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় যাঁরা সর্বাত্মক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর বিনম্র কৃতজ্ঞতা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব, সীমিত পরীক্ষা ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসামগ্রী সত্ত্বেও বাংলাদেশের চিকিৎসক ও অন্যান্য চিকিৎসা পেশাকর্মীরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেছেন। প্ল্যাটফর্মের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ১৭৭ জন চিকিৎসক (২৭ মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত) এই করোনা যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই চিকিৎসকদের কার্যক্রম ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের সর্ববৃহৎ মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকদের সংগঠন “প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি” ও “বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট” তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বিত সভায় ১ এপ্রিল হতে ৭ এপ্রিল, ২০২১ পর্যন্ত “চিকিৎসক সপ্তাহ” উৎযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো – “স্বাস্থ্যখাতের সকল অংশে চিকিৎসকদের সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত এক আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত।”
উল্লেখ্য, ১ এপ্রিল চিকিৎসক সমাজের প্রবাদ পুরুষ জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম এর জন্মবার্ষিকী। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের পোস্টগ্র্যাজুয়েট চিকিৎসা ব্যবস্থার স্থপতি এই কিংবদন্তি চিকিৎসক গোটা জীবন ধরে চিকিৎসা গবেষণা, শিক্ষকতা, নিয়মানুবর্তিতা ও প্রশাসনিক বিচক্ষণতায় এক নজির স্থাপন করে গেছেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন তৎকালীন আইপিজিএমআর (বর্তমান শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) এ পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬০ সালের শেষের দিকে ডা. নুরুল ইসলামের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অনুষদ খোলা হয়। ১৯৮২ সালে ঔষধনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে তিনি ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় ঔষধের ব্যবহার বন্ধে কাজ করেছিলেন। চিকিৎসাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক (১৯৬৩), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৭), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০৩) ইত্যাদি নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। চিকিৎসক সপ্তাহের শেষ দিন ৭ এপ্রিল হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। সারা বিশ্বজুড়ে এই দিনটি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালিত হয়। এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি উৎযাপনের মাধ্যমেই চিকিৎসক সপ্তাহের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের এই সাফল্য ধরে রাখতে প্রয়োজন যথার্থ অনুপ্রেরণা। তাই উপরোক্ত দুই সংগঠনই প্রতি বছর চিকিৎসক সপ্তাহে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ “চিকিৎসক পদক’ প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতের বিভিন্ন অঙ্গনে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখা সকল চিকিৎসক এবং অন্যান্য যাঁরা এই চিকিৎসা খাতে গুরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁদেরকে এই চিকিৎসক পদক প্রদান করা হবে।
প্ল্যাটফর্ম এবং বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট চিকিৎসক সপ্তাহ- ২০২১ উপলক্ষ্যে সকল কর্মসূচি অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ‘Platform’ এবং ‘Channel H1’ এর ফেসবুক পেইজ এবং ‘Platform’ এবং ‘Channel H1’ এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে। ১ এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯.০০ – ১০.০০ ঘটিকায় অনলাইনে চিকিৎসক সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. মোঃ রোকন উদ্দিন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট), অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা, (সহ-সভাপতি, ট্রাস্টি বোর্ড, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েল্ফেয়ার ট্রাস্ট), ডা. শেখ আহমেদুল হক (সদস্য, গভর্নিং পরিষদ, প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি) এবং ডা. ফয়সাল বিন সালেহ (সভাপতি, কেন্দ্রীয় পরিষদ, প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দিলোয়ারা ইয়াসমিন প্রিয়া (সদস্য, প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি)। পরবর্তী আকর্ষণ হিসেবে রাত ১০.০০-১১.০০ ঘটিকায় অনলাইনেই পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চিকিৎসক সপ্তাহের ২য় দিনে ২ এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮.০০ – ৯.০০ ঘটিকায় আলোচনা সভা: মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা; অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। উক্ত অনলাইন ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা হিসেবে ছিলেন ডা. সামান্তা রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন যথাক্রমেঃ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল জলিল চৌধুরী (সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, মেডিসিন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও রিউম্যাটোলজিস্ট, সাবেক চেয়ারম্যান, রিউম্যাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়) এবং অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমান (প্রধান গবেষক, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ রিসার্চ সেন্টার, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ)। আলোচনা পর্বে একে একে অতিথিবৃন্দ তাদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। ঘন্টাব্যপী আলোচনা পর্বের সম্পূর্ণ সময় জুড়ে অতিথিবৃন্দগণ বাংলাদেশ মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এর নানা ভালো দিক ও সংকটাবস্থা, মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সমাধান তুলে ধরেছিলেন তাদের বক্তব্যে।
পরবর্তীতে রাত ৯.০০ – ১০.০০ ঘটিকায় ডা. মোশাররাত রহমান মৌ(সদস্য, প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি) এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় “স্বাস্থ্যব্যবস্থা; দেশ ও বিদেশ” নিয়ে আলোচনা সভা। যেখানে অতিথি হিসেবে দেশ এবং বিদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে নানান জানা অজানা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. শাহ মো. সারওয়ার জাহান (অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রংপুর), ডা. ইসমত কবির (জেরিআট্রিশিয়ান বিশেষজ্ঞ, ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস, ইংল্যান্ড) এবং ডা. এস কে ফরিদ আহমেদ (জেনারেল এন্ড অনক্লোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জন উইকম্ব জেনারেল হাসপাতাল, বাকিংহামশায়ার হেল্থ কেয়ার এনএইচএস ট্রাস্ট, ইংল্যান্ড কনসালট্যান্ট, ব্রেস্ট সার্জারি বিআরবি হসপিটালস লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল ঢাকা।)
একই দিন রাত ১০.০০ – ১১.০০ ঘটিকায় বিশ্ব অটিজম দিবস উপলক্ষে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে Let the sunshine team ও প্ল্যাটফর্ম গাজীপুর জোনের পক্ষ থেকে অটিজম সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদানে একটি সচেতনতামূলক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চিকিৎসক সপ্তাহের ৩য় দিন ৩ এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮.০০ – ৯.০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভাঃ “বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা: সম্ভাবনা ও শঙ্কা”- যেটি সঞ্চালনা করেন ডা. সামান্তা রহমান (সদস্য, প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি)। অনুষ্ঠানটিতে অতিথি হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ (মাননীয় সংসদ সদস্য, সিরাজগঞ্জ-০৩, সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি), অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অধ্যক্ষ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) এবং অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু (অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, নিওনেটাল সার্জারি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রজেক্ট ডিরেক্টর, ন্যাশনাল চিলড্রেন হসপিটাল এন্ড ইন্সটিটিউট সেক্রেটারী জেনারেল এসোসিয়েশন অফ পেডিয়াট্রিক্স সার্জনস অফ বাংলাদেশ)। একই দিনে রাত ৯.০০ – ১০.০০ ঘটিকায় করোনায় শহীদ চিকিৎসকদের নিয়ে প্রদর্শন করা হয় ডকুমেন্টারি। যেখানে গত বছর দেশে করোনা মহামারী উদ্ভবের সময় হতে এখন পর্যন্ত করোনাযুদ্ধে শহীদ নানান চিকিৎসকদের নাম ও ছবি প্রকাশের মাধ্যমে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ স্মৃতিচারণ করা হয়।
৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসকদের নিয়ে প্ল্যাটফর্মের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ(https://www.facebook.com/Platform.med.org/) থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো হয় এবং রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এ বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও করোনা যুদ্ধে শহীদ সকল চিকিৎসকদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এদিন রাত ৮টা থেকে ৯টায় “মেডিকেল রিসার্চ ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট” বিষয়ক একটি আলোচনা সভা অনুঠিত হয় অনলাইনে। অতিথি হিসেবে ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দীপক মিত্র, ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মনির হোসেন এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক ডা. মো. শেখ শহীদ উল্লাহ্। একইদিনে প্রদীপ প্রজ্বলন করে করোনায় মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকদের স্মরণ করে সর্বস্তরের চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।
৬ এপ্রিল রাত ৮টায় অনলাইনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরপর রাত ৯টা থেকে ১০টা পর বিভিন্ন শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন দেশের নানা সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ, পরিচালকগণ এবং বাংলাদেশ টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সম্মানিত সদস্যগণ।
অনলাইন ভিত্তিক নানান আয়োজন ও দেশের মেডিকেল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মেডিকেল রিসার্চ বা গবেষণা কার্যক্রম প্রভৃতি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা সভায় মুখরিত ও আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে গত ৬ দিন যাবৎ পালিত “চিকিৎসক সপ্তাহ ২০২১” এর “সমাপনী ও চিকিৎসক পদক-২০২১ ঘোষণা” অনুষ্ঠানটি ৭ ই এপ্রিল ২০২১ রাত ৯:৩০ এ প্ল্যাটফর্মের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ হতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. মাে. এহতেশামুল হক চৌধুরী (মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল এসােসিয়েশন), ড. ফেরদৌসী কাদরী (সিনিয়র সাইন্টিস্ট ও হেড, মিউকোসাল ইমিউনোলজি ও ভ্যাক্সিনোলজি ইউনিট, সংক্রামক রোগ বিভাগ, আইসিডিডিআর, বি), অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা (সহ-সভাপতি, ট্রাস্টি বাের্ড, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট), অধ্যাপক ডা. মাে. রােকন উদ্দীন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট) এবং ডা. ফয়সাল বিন সালেহ (সভাপতি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সােসাইটি)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন দিলোয়ারা ইয়াসমিন প্রিয়া (সদস্য, প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি)।
উক্ত অনুষ্ঠানে চিকিৎসা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও ভূমিকার জন্য ১৬ জন ব্যক্তি ও ৩টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে প্ল্যাটফর্ম ও বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পক্ষ থেকে চিকিৎসক পদক প্রদান করা হয়। ১৬ জন ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন ১৪ জন চিকিৎসক, ১ জন আইনজীবী ও ১ জন সাংবাদিক। পদক প্রদানের ক্ষেত্রসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. অধ্যাপক ডা. খন্দকার মানজারে শামীম
চিকিৎসক
ব্যসিক এন্ড এলায়েড
২. অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম
চিকিৎসক
ব্যসিক এন্ড এলায়েড
৩. অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক
চিকিৎসক
মেডিসিন এন্ড এলায়েড
৪. অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক
চিকিৎসক
মেডিসিন এন্ড এলায়েড
৫. অধ্যাপক ডা. এ জেড এন মাইদুল ইসলাম
চিকিৎসক
মেডিসিন এন্ড এলায়েড
৬. অধ্যাপক ডা. মো. খলিলুর রহমান
চিকিৎসক
সার্জারি এন্ড এলায়েড
৭. ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী
চিকিৎসক
সার্জারি এন্ড এলায়েড
৮. অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী
চিকিৎসক
গাইনোকোলজি এন্ড এলায়েড
৯. অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম
চিকিৎসক
গাইনোকোলজি এন্ড এলায়েড
১০. অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার
চিকিৎসক
পেডিয়াট্রিক্স এন্ড এলায়েড
১১. অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ
চিকিৎসক
চিকিৎসা গবেষণা
১২. অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানু
চিকিৎসক
চিকিৎসা গবেষণা
১৩. অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা
চিকিৎসক
ডেন্ট্রিস্ট্রি এন্ড এলায়েড
১৪. অধ্যাপক ডা. এম মনির হোসেন
চিকিৎসক
সমাজসেবা
১৫. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
হাসপাতাল
সরকারি পর্যায়
১৬. বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল
হাসপাতাল
বেসরকারি পর্যায়
১৭. হাইপারটেনশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার, রংপুর
সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান
সমাজসেবা
১৮. জেড আই খান (পান্না)
আইনজীবী
আইন
১৯. মোহসীন-উল হাকিম
সাংবাদিক
সাংবাদিকতা
বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড. ফেরদৌস কাদরী বলেন,
“চিকিৎসকদের প্রচেষ্টার কারণেই এখনো দেশে মৃত্যুহার কম রয়েছে। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে তাঁরা যে পরিমাণ অবদান রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়।”
এছাড়াও প্ল্যাটফর্মের সদস্য তরুণ চিকিৎসকদের অবদান ও কার্যক্রম নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। পরিশেষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
উপস্থিত ডা. গুলশান আরা বলেন,
“আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবতী মনে করছি যে চিকিৎসক সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরেছিলাম। দেশে প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত যে ১৭৯ জন চিকিৎসক করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। প্যান্ডেমিকের সময়ও চিকিৎসকরা যেভাবে নানান প্রতিকূলতা পার করে কাজ করে যাচ্ছে তা অবশ্যই অতুলনীয়। আমি অত্যন্ত গর্বিত এবং আনন্দিত যে চিকিৎসক পদকের মাধ্যমে আমরা কয়েকজন চিকিৎসককে সম্মানিত করতে পারছি।”
প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফয়সাল বিন সালেহ বলেন,
“আজ আমাদের জন্য অনেক আনন্দের একটি দিন। মুক্তিযুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সময়ে এমনকি করোনাকালেও চিকিৎসকদের অনেক অবদান ছিল। তাই ১-৭ তারিখ প্ল্যাটফর্ম এবং বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফার ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়। এরকম পদক প্রদান চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে কমন ছিলো না। আমরাই মনে হয় প্রথম শুরু করেছি। আমরা আরো যে চিকিৎসক সংগঠন আছে তাদের সাথে কথা বলে এটাকে কিভাবে মডিফাই করা যায় তা নিয়ে কাজ করবো।”
পরবর্তীতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সম্মানিত মহাসচিব ডা. মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন,
“অনুষ্ঠানটির আয়োজক প্রতিষ্ঠান একটি চমৎকার কাজ করেছেন। যারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। একটি বিষয় সবার নজরে আনতে চাই, বাংলাদেশের সমসাময়িক করোনা ব্যবস্থাসহ ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের অনেক চিকিৎসক নিয়োজিত ছিল, এমনকি অনেক হাসপাতালের পরিচালকও অবদান রাখেন। তাই মাঠপর্যায়ে কাজ করা এসব চিকিৎসকদেরকে যাতে ভবিষ্যতে সম্মানিত করা হয় সে আশা করি।”
তিনি আরো বলেন,
“দেশের মানুষের কাছে আশা ব্যক্ত করছি আমরা যারা এ অসময়ে কাজ করে যাচ্ছি তাদেরকে সাহায্য করবেন। শুধু দু:সময়ে না, সুসময়েও চিকিৎসকদের স্মরণ করবেন। সরকারের কাছে আবেদন করবো, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যাতে অনেক অর্থ ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া হয়। আমি বলবো এ সরকার সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছে স্বাস্থ্যখাতে অবদানের জন্য, তাই আমরা বাংলাদেশে এমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করবো যা বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে দাঁড়াবে।”
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মাে. রােকন উদ্দীন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট) বলেন,
“মুজিবশতবর্ষে এবং স্বাধীনতার ৫০ তম বর্ষপূর্তিতে প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি ও বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর উদ্যোগে “চিকিৎসক সপ্তাহ-২০২১” আয়োজনের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে অন্তরের অন্তঃস্তল হতে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডা. মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী স্যারকে (মহাসচিব, বিএমএ); অভিনন্দন জানাচ্ছি সহ-সভাপতি, ট্রাস্টি বোর্ড, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা ম্যামকে; বিশেষ অতিথি সিনিয়র সাইন্টিস্ট ও হেড, মিউকোসাল ইমিউনোলজি ও ভ্যাক্সিনোলজি ইউনিট, সংক্রামক রোগ বিভাগ, ড. ফেরদৌস কাদরী ম্যাম এবং সভাপতি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, প্ল্যাটফর্ম- ডা. ফয়সাল বিন সালেহকে। এছাড়াও গত ৭ দিন ব্যাপী দিন রাত পরিশ্রমের মাধ্যমে যারা “চিকিৎসক সপ্তাহ -২০২১” কে সাফল্যমন্ডিত করতে নিরলস চেষ্টা করে গিয়েছেন “প্ল্যাটফর্ম” এবং “বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট” এর সে সকল সদস্য, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আরো অভিনন্দন জানাচ্ছি চিকিৎসক পদক-২০২১ প্রাপ্তদের বাছাই করবার কঠিন ও দুঃসাধ্য কাজটি যারা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন উক্ত কমিটিকে।”
তিনি আরো বলেন,
“আমি আশা রাখি, ভবিষ্যতে আমাদের চিকিৎসক সমাজের অভিভাবক সংগঠন “বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন” ও দেশের অন্যান্য চিকিৎসক সংগঠন “চিকিৎসক সপ্তাহ-২০২১” এর মতো কার্যকরী ও ফলপ্রসূ অনুষ্ঠান আয়োজনে এগিয়ে আসবে। সেই সাথে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে মতাদর্শের পার্থক্য থাকলেও সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের চিকিৎসকসমাজের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সর্বশেষে চিকিৎসক পদক-২০২১ এর জন্য নির্বাচিত সকল চিকিৎসক, প্রতিষ্ঠান, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ।”