প্ল্যাব নিয়ে যত কথা: পর্ব ৬ (ECFMG verification)

লিখেছেন: ডা. সামিয়া ফারহিন

২৩ মে, ২০২০

ECFMG / EPIC কি?
খুব সহজ কথায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের গ্রাজুয়েশন অথেনটিক কি না, জাস্টিফায়েড করে ফরেইন মেডিকেল অর্গানাইজেশনদের কাছে প্রেজেন্ট করা। এপিক থার্ড পার্টি হিসেবে ভ্যারিফিকেশনের কাজ করে দেয়। এরা GMC এর অংগ প্রতিষ্ঠান নয়। ভ্যারিফিকেশন খুব হাংগামার এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। কেউ এই প্যারা নিতে চায় না। তাই ECFMG এর হাতে এইসব কাজ ছেড়ে দিয়ে এরা নিশ্চিন্ত থাকে।

কাদের ভ্যারিফিকেশন করা প্রয়োজন?
যারা GMC registration এর জন্যে এপ্লাই করবেন, তাদের। এপিক ভ্যারিফিকেশন ছাড়া GMC কখনোই আপনার এপ্লিকেশন প্রসিড করবে না। এছাড়াও আরোও অনেক অর্গানাইজেশন আছে, যাদের ভ্যারিফিকেশন এপিক করে দেয়। জিএমসি ছাড়া অন্যান্য অর্গানাইজেশনের রিকোয়ারমেন্ট শিডিউলে যদি এপিক ভ্যারিফিকেশন প্রসিডিউর থাকে, তাহলে তাদের জন্যেও এই পোস্ট হেল্পফুল হবে আশা করি।

কখন প্রসিডিউর শুরু করবেন?
আপনি যখনই আপনার এমবিবিএস সার্টিফিকেট হাতে পাবেন, তখনই শুরু করতে পারবেন। আমি এপিকের কাজ শুরু করেছিলাম প্লাব দেয়া শেষ করে, হাত পা ঝাড়া হয়ে। ভেবেছিলাম ২ সপ্তাহের কাজ, কি-ই বা আর সময় লাগবে! আমার পুরো প্রসিডিওর শেষ হতে ৬ মাস সময় লেগেছিল।

কি কি পেপারস প্রয়োজন?
১। আপনার নিজের পাসপোর্ট সাইজ ফটোগ্রাফ, ২ MB, JPEG file। খেয়াল রাখবেন এটা যেন লাস্ট তিন মাসের মধ্যে তোলা হয়।
২৷ পাসপোর্ট স্ক্যান কপি, ২ MB সাইজ, JPEG ফাইল
৩। এমবিবিএস সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপি

পেপার কালেক্ট শেষ, এখন কি করবেন?
এবার ECFMG ওয়েবসাইটে যান।
https://epic.ecfmgepic.org/Registration.aspx
স্টেপ বাই স্টেপ আপনার ইনফরমেশন গুলো ফিল আপ করুন, খুবই ব্যাসিক ইনফো। কোন হ্যাজার্ড হবে না আশা করি। তবে ঠিকানা লেখার সময়, County এর জায়গায় country name দিবেন না। কাউন্টি এবং কান্ট্রি এক নয়, বাংলাদেশের কোন কাউন্টি নাই, মনে রাখবেন। এই স্পেস টা ব্ল্যাংক রাখবেন।

এবার আপনার মেডিকেল স্কুল ইনফো ফিল আপ করুন। এখানে কিছু বিষয় ক্লিয়ার করে দিচ্ছি,

১। আপনার মেডিকেল স্কুলের স্টার্ট ডেট হল জানুয়ারির ১ তারিখ, এবং ফিনিশ ডেট হল ঠিক ৫ বছর পরের ৩১ ডিসেম্বর। এখন আপনি সাপ্লি পেয়ে যদি ডিলেও হয়, সেটা ব্যাপার না। কোর্স আপনার ৫ বছরের, এটা মুখ্য।

২। আপনার গ্রাজুয়েশন ডেট হল যেদিন আপনার ফাইনাল প্রফের পাশ করার রেজাল্ট দিয়েছে। এটা এমবিবিএস সার্টিফিকেট এর ডেটও না, আবার ইন্টার্নিতে জয়েন করার ডেটও না৷

৩। আপনি যে-ই অর্গানাইজেশনের জন্যেই এপ্লাই করেন না কেন, আপনি বিএমডিসি রেজিস্টার্ড ডক্টর সবার আগে, সেটা লিখবেন। লিখে, আপনি জিএমসি ভেরিফিকেশনের জন্যে এপ্লাই করেছেন, সুতরাং এটা মাস্ট লিখে দিবেন।

৪। পেমেন্ট সেকশনে গিয়ে পেমেন্ট কনফার্ম করুন। 125 USD লাগবে। এখন একটু বেশিও হতে পারে। ECFMG আপনাকে তখন একটা ইমেইল দিবে যে পেমেন্ট কনফার্ম, আপনার একাউন্ট এস্টাবলিশড করতে ৩ দিন সময় লাগতে পারে। আমার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই একাউন্ট একটিভ হয়ে গিয়েছিল।

একাউন্ট ডান, এবার কি করতে হবে?
এবার আপনার নোটারি ক্যাম থেকে ভ্যারিফাই করতে হবে। আপনার একাউন্টে লগইন করে নোটারী ক্যাম ওয়েবসাইটে এপিক আইডি নাম্বার দিয়ে ভেরিফিকেশন রিকোয়েস্ট করুন।
www.notarycam.com/ecfmg
একজন নোটারী পাবলিক অফিসার আপনাকে ফিরতি ইমেইল করে টাইম, ডেট এবং লাইভ ভিডিও ভ্যারিফিকেশন এপয়েন্টমেন্টের এর ডিটেইল জানাবেন। কানেকশনের আগে চেক করবেন আপনার ডিভাইসের ভিডিও ক্যাম, মাইক্রোফোন ঠিক আছে কি না, এবং আপনাকে সাবমিটেড ফটোগ্রাফের মত দেখাচ্ছে কি না। আপনি পিক আপলোড দিলেন বরিস জনসনের, আর ভিডিও কলে আপনাকে দেখা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত, এমনটা যাতে না হয়।

লাইভ ভিডিও চ্যাটে নোটারী অফিসার আপনার অরিজিনাল পাসপোর্ট দেখতে চাইবেন, আপনার ব্যাসিক ইনফোগুলো জানতে চাইবেন। কম্পলিট হয়ে গেলে আপনার এপিক একাউন্টে আপডেট পেয়ে যাবেন।

নোটারী শেষ, এখন কি করব?
এখন আপনার ক্রেডেনশিয়াল আপলোড দিবেন। ক্রেডেনশিয়ালস হল, যে পেপার আপনি ভ্যারিফাই করতে চান। GMC শুধুমাত্র ভ্যারিফায়েড এমিবিবিএস সার্টিফিকেট চায়। ECFMG আপনার সার্টিফিকেট আপনার মেডিকেলে পাঠাবে, সেজন্যে আপনাকে ভ্যারিফিকেশন ফি 90 USD পে করতে হবে। এরপর আপনাকে জিজ্ঞেস করবে আপনি রেগুলার কুরিয়ার চান, নাকি এক্সপ্রেস। রেগুলার ফ্রি, এক্সপ্রেসে আপনাকে 30 USD পে করতে হবে। এখন টাকার এমাউন্ট একটু বেশি-কম হতে পারে। এরপর ECFMG আপনাকে টাইম টু টাইম আপডেট দিবে আপনার একাউন্টে যে আপনার পেপার ওরা পাঠিয়েছে কি না।

মেডিকেল কলেজে পেপার পৌঁছেছে, এবার কি করবেন?
আপনার হয়রানি এবার হল শুরু। কলেজে পেপার আসার পরে আপনি নিজে যাবেন। আপনার কলেজকে ECFMG ৩ টা জিনিস দিবে।
১। EIF form
২। MBBS certificate
৩। One non pay envelope

EIF form এ ৩ টা পৃষ্ঠা থাকে। প্রথম পাতা হল একটা চিঠি, আপনার বিস্তারিত বর্ননা দিয়ে সাইন করানোর জন্যে একটা অনুরোধের চিঠি। ২য় পাতায়, যিনি সাইন করবেন তার ডিটেইল, প্রিন্সিপালের পুরো নাম, সিগনেচার, ডেসিগনেশন, অফিসিয়াল ইমেইল লিখতে হবে। হাতে-লেখা। প্রিন্টের কাজ কারবার নাই। ৩য় পাতায়, আপনার নোটারি ভ্যারিফায়েড ফর্ম থাকবে যেখানে আপনার ছবি দেয়া আছে।

খুব সহজ শুনতে, তাইনা??? গ্যাঞ্জামের পয়েন্ট আমি আপনাকে ক্লিয়ার করে দিচ্ছি।

১। আপনার ফর্ম একমাত্র এবং একমাত্র প্রিন্সিপাল সাইন করতে পারবেন। ফুল প্রিন্সিপাল, যার আপডেট কলেজ ওয়েবসাইটেও আছে। ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল, হসপিটাল এমডি কেউ পারবে না। যদি একান্তই কেউ সাইন করেন, তাহলে এপিককে অফিসিয়াল প্যাডে উনারা একটা চিঠি লিখবেন যে প্রিন্সিপালের অবর্তমানে উনিই এখন কলেজের হাইয়েস্ট প্রপার অথরিটি যিনি গ্রাজুয়েটদের পেপার সাইন করতে পারেন। উনার অফিসিয়াল সিল এবং সিগনেচার অথেনটিক।

এই চিঠি ছাড়া আপনার EIF form ফেরত পাঠানো হল টোটাল ওয়েস্ট। আপনি মাসের পর মাস ঘুরতে থাকবেন, আর কেন ঘুরছেন তা জানতেও পারবেন না।

২। EIF form এর ২য় এবং ৩য় পাতার প্রত্যেকটায় এবং MBBS certificate এ প্রিন্সিপালের সিগনেচার ও তারিখ এবং প্রিন্সিপালের অফিসিয়াল সিল, কলেজের অফিসিয়াল সিল, ” verified and found correct” সিল ; এই চারটা জিনিস অবশ্যই অবশ্যই থাকতে হবে। একটাও মিস হলে আপনার গ্যাঞ্জামের গ্যারান্টি ৫০-৫০। খেয়াল রাখবেন, আপনার প্রিন্সিপালের সিল এ যে ডেসিগনেশন দেয়া, সেটা যাতে কলেজের ওয়েবসাইটের সাথে সাথে আপডেটেড থাকে।

৩। আপনাকে ECFMG একটা অন এয়ার মেইল এনভেলপ দিবে। এই এনভেলপের উপরে কলেজের অফিসিয়াল সিল দিতে হবে। এই খামের ভিতর EIF form, MBBS certificate এবং যদি কোন অফিসিয়াল চিঠি দিতে হয় দিয়ে খামের মুখের আঠা ভালভাবে লাগাবেন। খামের মুখে আবার আরেকটা অফিসিয়াল সিল দিবেন।

কলেজের কাজ শেষ, এবার কি করবেন?
এবার এই খাম নিয়ে ফেডেক্স অথবা ডিএইচেলের ব্রাঞ্চে যাবেন। আপনার এন আইডির ফটোকপি নিয়ে যাবেন, এটা ফরেইন পার্সেল পাঠাতে ওদের লাগে। স্টুডেন্ট ডকুমেন্ট এর অলওয়েজ ডিসকাউন্ট আছে। আমি সবসময় পেয়েছি। ওদের ফর্মে সেন্ডার এড্রেস কলেজের নাম ঠিকানা দিবেন। পুরো পার্সেলের কোথাও আপনার নাম ঠিকানা যাতে না থাকে।

আপনি জিপিও থেকে রেজিস্টার্ড মেইলেও চিঠি পাঠাতে পারেন৷ ওনলি ১ সপ্তাহ লাগে যেতে, খরচ খুবই কম। ওজন করে যা আসে, ৩০০ টাকার মত। পার্থক্য হল, জিপিও থেকে ট্র‍্যাক করা যায় না, এইটুকুই।

ডকুমেন্টস পাঠানো শেষ, এখন কি করা যায়?
আপনার ডকুমেন্টস এপিক রিসিভ করেছে কি না জানতে এপিক একাউন্টে চেক করবেন। রিসিভ করার পরে সব পেপারস অথেনটিক হলে এপিক আপনাকে ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে কনফার্ম করবে, এবং কংগ্রাচুলেশনস ইমেইল করবে। আপনার ভ্যারিফায়েড ডকুমেন্টস এপিক নিজেই GMC কে পাঠিয়ে দিবে। এটার আপডেট আর আপনার লাগবে না। একদম যখন GMC full registration & licence এর জন্যে এপ্লাই করবেন, তখন GMC নিজেই ভ্যারিফাই বলে দিবে।

ডা. সামিয়া ফারহিন
তায়েরুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সেশন: ২০১০-২০১১

Fahmida Hoque Miti

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

দুস্থ পরিবারের মাঝে 'ইদ-উপহার' বিতরন করল 'প্ল্যাটফর্ম সিলেট জোন'

Sat May 23 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজঃ ২৩ মে, ২০২০, শনিবার   করোনার এই সংকটকালীন মুহূর্তে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা যেখানে অনেকটাই থমকে গিয়েছে, সেখানে একদম নিম্ন আয়ের মানুষজনের অবস্থা আরও বেগতিক। আয়ের উৎস প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দু-বেলার আহার ঠিকমতো যোগাতে পারছেন না যারা, ইদের দিন যেন তাদের মুখে হাসি থাকে, সে চেষ্টাই করেছে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo