ফ্যাটি লিভার হলো লিভার বা যকৃতে চর্বি বা ফ্যাট জমা থাকা। ফ্যাটি লিভারের আরেক নাম “হেপাটিক স্টোটোসিস”। আমাদের দেশে প্রায় ২৫% মানুষের মধ্যে এই রোগ আক্রান্ত। বিশ্বে প্রায় প্রতি হাজারে ৪৭ জন ফ্যাটি লিভারের আক্রান্ত হচ্ছে।
ফ্যাটি লিভার ২ প্রকার। যথা:
১) অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
২) নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার: যাদের অনেক দিন ধরে মদ্য পানের অভ্যাস আছে, তাদের অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হয়৷ ৮০ বা ৯০ দশকে বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভার হলে চিকিৎসকরা অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার মনে করতো।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার: যারা ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খায়, অতিরিক্ত চিনি খাই, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভাসের কারণে এই ধরণের লিভার হয়ে থাকে। কখনো কখনো স্টেরয়েড জাতীয় ঔষুধ সেবণের মাধ্যমে হতে পারে।
লক্ষণ:
১) পেট ব্যথা হয়।
২) কালো রংয়ের প্রস্রাব বের হয়।
৩) চোখের সাদা অংশে বা চামড়াতে হলুদাভ রং দেখা দেয়। (জন্ডিস)
৪) পেট ফুলে যায়।
৫) যকৃত ও প্লীহা (Spleen) বড় হয়ে যায়।
কারণ:
অনেক কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। বাংলাদেশে ৪ টি কারণে ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে।
১) উচ্চ রক্তচাপ।
২) স্থুলতা।
৩) রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি।
৪) টাইপ ২ ডায়বেটিস।
এসব কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে৷
জটিলতা:
ফ্যাটি লিভারের রোগ নিরাময় করা না যায়, সেক্ষেত্রে লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সমস্যা দেখা দিবে।যেমন: নন অ্যালকোহলিক স্টোটোহেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, লিভার ফাইব্রোসিস ইত্যাদি হতে পারে। অনেক সময় লিভারের ক্যান্সার হতে পারে।
রোগ নির্ণয়:
রোগ নির্ণয় জন্য লিপিড প্রোফাইল এবং লিভার এনজাইম টেস্ট করতে হবে। এমআরআই বা আলট্রাসাউন্ড করে রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য লিভার বায়োপসি করা হয়। এই লিভার বায়োপসি পরে মাইক্রোস্কোপ মাধ্যমে বুঝা যায় যে রোগী ফ্যাটি লিভারের আক্রান্ত কি না।
চিকিৎসা:
ফ্যাটি লিভারের কোনো ঔষুধ নাই। তবে সম্প্রতি এক সূত্রে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন ঔষুধ আবিষ্কার করেছে। ঔষুধের নাম হলো রেসমেটিরম। তবে এই ঔষুধের গবেষণা চলছে। তাই ঔষুধ বাংলাদেশে আসে নাই। তবে কিছু পদক্ষেপ নিলে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
১) তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকবেন।
২) নিয়মিত শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করবেন। যেমন: দিনে ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাঁটা ইত্যাদি
৩) চিনি যত টুকু সম্ভব কম খাবেন৷
৪) শাক সবজী বা ফলমূল বেশি খাবেন, বিশেষ করে ফাইবার যুক্ত।
৫) অ্যালকোহল সেবন বন্ধ করতে হবে।
৬) যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত, তারা ডাক্তারের পরামর্শ ঔষুধ সেবন করবেন।
প্রতিবেদক: এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন