#ঘটনা ০১ –
তখন আমি পাকিস্তানে মেডিকেলে পড়ি । ফোর্থ ইয়ার । রমজান মাসের সাত তারিখ এবং প্লেসমেন্ট ছিল গাঈনী ওয়ার্ডে ।
আমাদের সময়কার প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন দারুন কড়া লোক । আমার প্লেসমেন্টের সময় নিয়ম ছিল একমাস টানা গাঈনী ওয়ার্ড । ক্লাস বাদে বাকি সময় ওয়ার্ডে । যদি ক্লাস টাইমের বাইরে কাউকে বাইরে পাওয়া যেত তাহলে আবার একমাস এক্সটেনশন দেয়া হত । একরুমে চারজনের প্লেসমেন্ট সাথে রোগী ।
তো সাত রমজান , ইফতারীর আগের সময় । এক পেশেন্টর লেবারের পেইন উঠছে । পেশেন্টের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে দেখি আমার ক্লাসমেটও নাই আবার সিস্টারও নাই । পেশেন্টের অবস্থাও সঙ্গীন ।
ভাবলাম আমিও চলে যাই । কিন্তু আবার ভাবলাম , আমি যদি চলে যাই তাহলে বাচ্চা এবং মায়ের অবস্থা খারাপ হইলে নিজেকে কখনোই মাফ করতে পারব না । এই অপরাধ বোধ আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে সারাজীবন ।
এদিকে রোজাও ছিলাম । ইফতারির সময় হয়ে যাচ্ছে । হাতের কাছে পানিও নাই । এমন অবস্থায় ……… এমন অবস্থায় ……… আযান পড়ল , আমি পেশেন্টের কাছে । হটাত করে আমার মুখের উপর পানি এসে পড়ল । ভাবলাম আল্লাহ বোধ করি আমার অবস্থা দেখে দয়াপরবশ হয়ে পানি পাঠিয়েছেন ।
তারপর মুখে হাত দিলাম । কিন্তু এ কি !!! পানি ঠিক আছে কিন্তু আঠা আঠা লাগে ক্যান ??? gasp emoticon gasp emoticon
ভুল ভাংলো । তাকিয়ে দেখি বাচ্চার বেরিয়ে আসার তীব্র তাড়নায় wink emoticon tongue emoticon মেমব্রেন ছিড়ে গিয়ে বাচ্চার থলের ভিতরকার পানি এসে আমার মুখে লেগেছে । gasp emoticon gasp emoticon
সাময়িক গা টা ঘীন ঘীন করে উঠেছিল । কিন্তু যখন বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে মায়ের পাশে নিয়ে দাড়ালাম , তখন মায়ের মুখে আমার প্রতি যে কৃতজ্ঞতার বহি:প্রকাশ দেখেছিলাম তাতে আমার ঘীন ঘীনে অনুভূতিটা যেন স্বর্গীয় সুখে পরিণত হয়েছিল ।
মনে হয়েছিল , আমার ডাক্তারি পড়তে আসা স্বার্থক ; আমার জীবনটাই সফল ।
পরে সেই মা আমার সাথে দেখা করে বলেছিলেন , “ম্যাডাম , আপনি আমার মেয়ের নাম রেখে দিবেন । ” ( যদিও মহিলা উর্দু ভাষী ছিলেন )
একজনের ডাক্তারের জীবনে এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে !!!!!!!!
#ঘটনা ০২-
তখন আমি পিজিতে হাউজ মেডিকেল অফিসার । আমি ছিলাম আমার শ্রদ্ধেয় স্যার জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার নুরুল ইসলাম স্যারের অধীনে । স্যার এমন একজন মানুষ ছিলেন যাকে শুধু শ্রদ্ধাই করে যেতে ইচ্ছা করে । আজ আমি যা , আমার যা জ্ঞান , আমার যা অর্জন , আমার যে খ্যাতি তার পিছনে যে মানুষটির অবদান সেটি none other than one and only Professor Nurul Islam স্যার ।
তো সেই সময় আমার যে ওয়ার্ডে ডিউটি সেখানে একটা পেশেন্ট ভর্তি ছিল । সমস্যা লাং এবসেস ( ফুসফুসে ঘা হয়ে পুজ জমা হয়েছে এমন ) ।
আমাদের সময় নিয়ম ছিল রাতেও রাউন্ড । এমন এক ডিউটি রাতে আমার দাওয়াত ছিল আমার ছোটখালার বাসায় , বিশাল আয়োজন ।
চিন্তায় পড়ে গেলাম । রাউন্ডে না গেলে স্যার ক্ষেপে যাবে । আবার খালার বাসায়ও যেতে হবে । দোটানায় পড়ে গেলাম ।
সিদ্ধান্ত নিলাম একবারে গোছগাছ করে বের হয়ে রাউন্ড দিয়ে তারপর খালার বাসায় যাব ।
তো , বাসা থেকে বেশ সেজেগুজে বের হলাম পিজির উদ্দেশ্যে ।
পৌছাতে সামান্য দেরী হলো । পেশেন্টের সামনে গিয়ে “আসসালামু আলাইকুম , ক্যামন আছেন ?? ” জিজ্ঞেস করলাম ………………
আর সাথে সাথেই উনি ভক করে অনেক খানি কাশি উঠিয়ে দিলেন , আর সেটা এসে পড়ল আমার উপর । সিস্টার দৌড়ে এল , কিন্তু ততোদিনে আমি শিখে গেছি আমার যে পেশা এখানে রাগের কোনো অস্তিত্ব নেই ।
এখন পড়লাম বিপাকে । হাতে এতটা সময়ও নাই যে আমি আবার বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করে তারপর খালার বাসায় যাব ।
তাই এই অবস্থায় চলে গেলাম খালার বাসায় । খালা আমাকে দেখে “এহ , হে কি অবস্থা তোর ??? শিঘ্রী যা , এই নে শাড়ি । চেঞ্জ করে নে । ”
খালার দেয়া শাড়িটা আজও আমার কাছে আছে , সেটা আর তিনি ফেরত নেন নাই ।
তাই ভাবি মাঝে মাঝে , সামান্য একটু কফের কারনে যদি নতুন দামী শাড়ি পাওয়া যায় তাহলে তো কফই ভাল । grin emoticon grin emoticon tongue emoticon tongue emoticon
ঘটনা দুইটির পর —
আসলে ডাক্তারি এমন একটা পেশা যেখানে ঘৃণা , রাগ , অহংকার এইগুলার কোনো স্থান নেই । অহংকার হলো আল্লাহর চাদর । আমরা তার সৃস্টি হয়ে যদি অহংকার করি তাহলে আল্লাহর চাদরে টান পড়বে , আর সেটা আল্লাহ পছন্দ করেন না ।
ডাক্তারি শুধুই একটা পেশা না , এটা অবশ্যই অবশ্যই হতে হবে নেশা । যদি তোমরা যারা নতুন ডাক্তার হচ্ছো তারা এটাকে নেশা হিসেবে নিতে পারো তাহলে এই পেশা তোমাকে দিবে খ্যাতি , সমৃদ্ধি এবং সফলতা ………… All the very best to all of you smile emoticon
প্রফেসর ডা: নাসিম আক্তার চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান , ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিন
ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ।
ম্যাম এর আজকের লেকচার থেকে …
লেখকঃ নাসিম অনি