প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ আগষ্ট ২০২০, শনিবার
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধুই চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড মর্যাদা দিয়েছিলেন। এর আগে চিকিৎসকরা প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসার হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন না।
ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর কারণেই চিকিৎসকদের আজকের এই অবস্থান হয়েছে। তিনি যেমন চিকিৎসকদের মর্যাদা দিয়েছিলেন, তেমনি চিকিৎসকদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থাও করেছিলেন।
উপমহাদেশের খ্যাতনামা এই চিকিৎসক বলেন, আগে বাংলাদেশে চিকিৎসকদের জন্যে উচ্চ শিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না এবং উচ্চ শিক্ষার জন্যে তাঁদেরকে লন্ডন বা বিদেশের কোন দেশে যেতে হতো। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশেও এই বিষয়টি নিয়ে ভেবেছিলেন এবং এই কারণে আজকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বা তৎকালীন পিজি হাসপাতালকে তিনি উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এই উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন বলেই আজ প্রচুর চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ হিসেবে বের হচ্ছেন এবং জনগনকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য প্রচুর চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী দরকার এবং স্বাধীনতার পরপরই তিনি এই উদ্যোগটি এই কারণে গ্রহণ করেছিলেন।
ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন চিকিৎসকরা গরীবের সেবা করুক, জনগনের সেবা করুক এবং তাঁদের মাঝে একটি মানবিক বোধ জাগ্রত হোক। যদি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেখা হয়, তাহলে দেখা যায় যে, সেখানে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, “কার টাকায় তুমি ডাক্তার, কার টাকায় তুমি ইঞ্জিনিয়ার?” গরীব মানুষের টাকায় এবং গরীব মানুষের জন্যে তিনি চিকিৎসকদের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু একদিকে যেমন চেয়েছিলেন চিকিৎসকরা মর্যাদা পাক, চিকিৎসকরা দক্ষ হয়ে উঠুক, বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠুক। পাশাপাশি তিনি চেয়েছিলেন যে, এই চিকিৎসকরা যেন গরীব মানুষের জন্যে কাজ করে, গরীব মানুষের সেবা করেন। আর এজন্যেই বঙ্গবন্ধু একদিকে তৃণমূল পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবাকে বিস্তৃত করতে চেয়েছিলেন, অন্যদিকে তিনি বিশেষায়িত হাসপাতালের ব্যাপারেও পরিকল্পনা করেছিলেন।
ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধু কতটা বিচক্ষণ ছিলেন যে, তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকে বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বিষয়টা ভেবেছিলেন। আবার বঙ্গবন্ধু থানা হেলথ কমপ্লেক্স যেটাকে আমরা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স বলি, সেটিরও পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সেটিও গঠন করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো তৃণমূলে আরো স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছরের সময়ের জন্য সেটি করতে পারেননি। তাঁর এই তৃণমূলে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতেন। আর এ কারণেই তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছেন।
ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ আরও বলেন, জাতির পিতার স্বাস্থ্য ভাবনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো জনগন। তিনি চেয়েছিলেন প্রচুর ডাক্তার হবে। ডাক্তাররা মর্যাদাবান হবেন। ডাক্তারদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই ডাক্তাররা প্রান্তিক পর্যায়ের জনগনকে বিনামূল্যে সেবা দেবেন। রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। আর এটির জন্যই তিনি এক সুবিন্যস্ত কর্মপরিকল্পনা এঁকেছিলেন। কিন্তু সেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করার আগেই পঁচাত্তরের ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেত।