প্ল্যাটফর্ম নিউজ,
রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে করোনায় ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। দিনদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন মিলছে নতুন নতুন রোগীর সন্ধান।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় নতুন করে আরো ১৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগটিতে এখন পর্যন্ত মোট ৮৯ জন রোগী শনাক্ত হলেন। আক্রান্ত এই ৮৯ জনের মধ্যে ১৬ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন।
করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে এবার সংযোজন করা হলো ১৮ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (ICU)। এই ICU টিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহকৃত নতুন ভেন্টিলেটর স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে হাসপাতালটিতে আগের ১০ টি শয্যাসহ মোট ২৮ শয্যার ICU ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হলো।
হাসপাতাল সূত্র জানায়,
” গত ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকের নতুন দুইতলা ভবনটির নিচতলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (ICU) চালু করা হয়। তখন ১০টি শয্যার জন্য ১০টি বড় আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, ৩ টি ছোট আকারের ভেন্টিলেটর ও মনিটর সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ICU ওয়ার্ড চালু করা হলেও স্থায়ী জনবল নিয়োগের অভাবে ওয়ার্ডটিতে থাকা দীর্ঘদিন অব্যবহৃত সবগুলো ভেন্টিলেটরসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি একে একে বিকল হয়ে যায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে আটটি ভেন্টিলেটর মেরামত করতে পারলেও দুটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়।”
অতি সম্প্রতি দেশব্যাপী করোনা পরিস্থিতির এই ভয়াবহতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হসপিটালটিতে নতুন আরও ২০টি ভেন্টিলেটর সরবরাহ করে। তার মধ্যে ২টি পুরোনো ICU ওয়ার্ডে এবং বাকি ১৮টি ভেন্টিলেটর করোনা ইউনিটে স্থাপন করা হয়। গত শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) উক্ত ১৮টি ভেন্টিলেটর ও শয্যা স্থাপনের কাজ শেষ হয়।
হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়,
” বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ২০১৭ সালে ICU ওয়ার্ড চালু হলেও এত বছরেও এখানে জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুমোদন হয়নি। অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসক-নার্সদের দিয়ে এখন ICU সেবা চালু রাখা হবে। করোনা ওয়ার্ডের জন্য প্রস্তুতকৃত আইসিইউ ইউনিট পরিচালনার সুবিধার্থে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক-নার্সদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়েছে যার মধ্যে ৪ জন চিকিৎসক ও ৩০ জন নার্স রয়েছেন। প্রতি শিফটে একজন চিকিৎসক ও একজন নার্স এখানে দায়িত্ব পালন করবেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা যায়,
“করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সংকটাপন্ন রোগীদের ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার জন্য ICU’র প্রয়োজন হয়। তবে বিভাগে দুটি মেডিকেল কলেজসহ জেলা-উপজেলা মিলিয়ে ৪৬টি সরকারি হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৫৫৮টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।”
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. বাকির হোসেন বলেন,
“হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের তৃতীয় তলায় এই ১৮টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের মূল ১০ শয্যার ICU ইউনিটের সবকিছু ঠিক করা হয়েছ। এখন মোট ২৮টি ICU শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। কোনো রোগীর সমস্যা গুরুতর হলে এগুলো ব্যবহার করা যাবে।”
প্রসঙ্গত, গত ৯ এপ্রিল বরিশাল বিভাগে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত বিভাগটির ছয় জেলায় মোট ৮৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক-নার্সসহ ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন, যা আশঙ্কাজনক।
জানা যায়, পুরো বরিশাল বিভাগের মধ্যে শুধু বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ICU’র সুবিধা আছে। ২৮ শয্যাবিশিষ্ট এই ICU টি পুরো বিভাগের প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল!
নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়