প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৪ আগস্ট, ২০২০, মঙ্গলবার
ইদের আগে পরে বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম ও আড্ডায় মেতে উঠার চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম নগরীর সর্বত্র। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার প্রবণতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি কি এর কারণ? কোভিড কি আসলেই অনেক কমে গেছে?
চট্টগ্রাম জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, লাশ সৎকারে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর তথ্য মতে কোভিড-১৯ ও এর উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা এখনও খুব একটা কমে নি।
চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় দুই মাস আগে, গত ইদের পর কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। হাসপাতাল বেড কিংবা আইসিউইউ সংকট ছিল চরম পর্যায়ে। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সংখ্যাটি অনেকটাই কমে এসেছে। পবিত্র ইদ উল আজহার আগে, গত ২৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই এর রিপোর্ট অনুযায়ী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৭৪ জন। এর মধ্যে গত ৩১ জুলাই কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে ১১২ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যার তুলনায় মৃতের সংখ্যা চট্টগ্রাম জেলায় অনেক কম। রিপোর্ট অনুযায়ী ২৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই, এক সপ্তাহে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৫ জন। গত ৩১ জুলাই উপজেলায় মারা গিয়েছেন ২ জন। চট্টগ্রাম মহানগরে করোনাকালীন (৩১ জুলাই পর্যন্ত) মৃত্যু ২৩৩।
মাঠ পর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর অভিজ্ঞতায় ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে লাশ দাফনে কাজ করা সংগঠনগুলোয়।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে লাশ দাফনের সংখ্যা ৫০৫, যা গত ৩১ জুলাই এসে দাঁড়িয়েছে ৫৫৩ জনে। এক সপ্তাহে মোট ৪৮ টি লাশ দাফন করে এই সংস্থার কর্মীরা।
চট্টগ্রামে লাশ দাফনে কাজ করা আরেকটি সংগঠন আল মানাহিলের হিসাবে, গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত অথবা এর উপসর্গ নিয়ে দাফন করা লাশের সংখ্যা ছিল ৩৫৬ টি, যা ২৯ জুলাই পর্যন্ত হয় ৩৮০ টি। অর্থাৎ ৫ দিনে ২৪টি লাশ দাফন করে এই সংস্থার কর্মীরা। এ ব্যাপারে সংস্থাটির ফেইসবুক পেইজ থেকে জানা যায় (২৯ জুলাইয়ের পোস্ট),
“আমরা খেয়াল করে দেখেছি যে, নগরীর সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোর আইসিও তে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে কোভিড-১৯ এ অথবা সাস্পেকটেড হিসেবেও মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। টানা দ্বিতীয় দিনের মত আমরা ১০ এর অধিক লাশ দাফন করেছি। এ পর্যন্ত সর্বমোট ৩৮০ জনকে দাফন কাফন করেছে আল মানাহিল।”
চট্টগ্রাম জেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী একদিকে কমছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা, খালি হচ্ছে হাসপাতাল বেড, সংকট কমেছে আইসিইউ এর। আবার সরেজমিনে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভিন্ন লাশ দাফনকাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর।
চট্টগ্রাম জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে অথবা এর উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা নিয়ে হিসাবের ভিন্নতা হয়তো প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরছে না। সংখ্যা যাই হোক, সর্বস্তরে সচেতনতা ও সাবধানতা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যেসব দেশ কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য ব্যবস্থা শিথিল করেছিল, তারাই আবার হঠাৎ অনেক আক্রান্ত রোগী সামলাতে হিমশিম খেয়েছে। তারা আবারও বহু মৃত্যুর সাক্ষী। এসব ঘটনা আমাদের সতর্ক হতে শিক্ষা দেয়। প্রত্যেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, এটাই প্রত্যাশা।