সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা বিজ্ঞান যেমন দুর্বোধ্য তেমনি রহস্য হয়ে থাকে।
তৈরি হয় অনেক গল্প, আপনার জীবনের গল্প, রোগ শোক থেকে ফিরে এসে চায়ের দোকানে বসে বলা কিছু সাফল্যের গল্প। কোন মিথ্যে সংবাদ বা ভুল ধারণা ছড়ায় আরও দ্রুত।
বেশ কয়েক বছর আগে, কলেরা রোগে গ্রামের পর গ্রাম শুন্য হয়ে যেত বিনা চিকিৎসায়। তখন, মানুষ বিশ্বাস করত, কলেরা মানেই ওলা বিবির কেচ্ছা। একজন দুই জন করেই তো এই ওলা বিবিদের গল্প ছড়ায়।
এই ধারণাকে পুঁজি করে ফেসবুকে গড়ে উঠেছে আধুনিক সময়ের কিছু ওলা বিবি!
মেয়েদের নামের পূর্বে “ডাক্তার” বসিয়ে ফেসবুকে কিছু জনপ্রিয় পেজ রয়েছে, যা স্বাস্থ্য এর ন্যায় একটি জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়ে উদ্ভট তথ্য পোস্ট করে। সাধারণ মানুষ জনের চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা না থাকার জন্য এই ধরনের স্বাস্থ্যতথ্য বিশ্বাস করে ও শেয়ার করে। এমনকি এই টিপস বা অপবিজ্ঞান নিজ চিকিৎসায় প্রয়োগও করে।
যখন একজন রোগীকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে গেলেই জীবন বাঁচানো সম্ভব, সেখানে ঘরে বসে ফেসবুকে পাওয়া টিপস প্রয়োগ করতে যেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারাও যাচ্ছে অনেকে।
সে হতে পারে আপনারই কোন আপনজন। তাই, এই ধরনের ফেসবুক পেজ গুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। বেশ কিছু পেজের, তিন লক্ষ, পাঁচ লক্ষ ফলোয়ার! এই মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন এই সব বেনামী পেজ থেকে। সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রাট।
কিছুদিন আগে লক্ষাধিক ব্যক্তি কর্তৃক শেয়ার হওয়া একটি তথ্য হল,
“আইসিইউ থেকে মৃত রোগি বের করার সময় ভালভাবে দেখতে হবে, তার বগলে কোন ফুটা আছে কি না। কারণ ওই ফুটা দিয়ে গরুকে দেয়া ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে ২৮ দিন পর্যন্ত মৃত রোগি বাঁচিয়ে রেখে টাকা আদায় করা হয়”
সাধারণ মানুষের আইসিইউ সম্পর্কে ধারণার গন্ডি, বাংলা সিনেমার পর্দায় আইসিইউ পর্যন্তই, যে আইসিইউ তে নায়িকার গানে নায়ক আবার জীবন ফিরে পায়! তাই আইসিইউ নিয়ে যেকোন তথ্যই মানুষ বিশ্বাস করে শেয়ার করবে।
সত্যিকারের তথ্য জানতে হলে, আমাদের শুধু একটা টার্ম শিখতে হবে “Central Venous Catheter Line”.
অজ্ঞান এবং মুমূর্ষু রোগীর সকল খাদ্য উপাদান ও মেডিসিন সরবরাহ করার জন্য বুকের উপরের দিকে মূল শিরায় সেন্ট্রাল চ্যানেল বানানো হয় এবং সেরকমই রাখা হয় যতদিন পর্যন্ত না রোগীর উন্নতি হয়।
যারা কখনও হাসপাতালে গিয়েছেন, দেখবেন, হাতে ক্যানুলা করা হয়, রক্ত বা ঔষুধ দেয়ার জন্য। এই ব্যাপারটা সেরকমই, তবে সংকটাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে করা হয়। জীবন বাচানোর জন্য খুবই দরকারি স্টেপ এটা।
আইসিইউ মানেই সেখানে সংকটাপন্ন রোগীকেই রাখা হয়।
কিন্তু “ডাক্তার অমুক” পেজ থেকে এই বিভ্রাট এবং ভুল তথ্য, ডাক্তার-রোগী সম্পর্কে অবিশ্বাস বাড়িয়েছে। একটি ভুল তথ্যই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।
নিচে ছবির মাধ্যমে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গজিয়ে ওঠা কয়েকটি পেজের নাম উল্লেখ করা হল, আপনার পরিবার বা বন্ধুদের সচেতন করুন।
এই রকম অনেক মনগড়া থেরাপি এই পেজ গুলো থেকে শেয়ার হচ্ছে- যেমন, স্ট্রোকে মরিচ থেরাপি, হার্ট অ্যাটাকে আঙুল কাটা থেরাপি। চমকপ্রদ এই ভুয়া থেরাপির উপর বিশ্বাস এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, ভুল ভাঙানো কঠিন হয়ে যায়।
মেডিকেল চিকিৎসা নিয়ে এই সব ভুয়া পেজ বন্ধে অচিরেই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে সরকারের ICT ডিভিশনের এই ভুয়া ফেসবুক পেজ বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে জরুরি দরকারি বিষয় হল, স্বাস্থ্য বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা।
কোন টিপস বা থেরাপি একটু চমক প্রদ হলেই শেয়ার করবেন না। যাচাই করুন। আপনার একটি শেয়ার থেকে আরও দশজনের ভিতরে মিথ্যে ভুয়া তথ্য প্রচার হবে।
ফেসবুকেই যেহেতু এই সময়ের ভুঁইফোড় আধুনিক ওলা বিবি পেজ গুলোর সৃষ্টি, তাই প্রতিহত করুন ফেসবুকেও।
দিন দিন এই সমস্ত পেজের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই সব পেজ যে ভুয়া তা জনসাধারণকে বোঝানোর দায়িত্ব আমাদেরই। সঠিক তথ্য জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
(এই নিউজটি সরাসরি বা কপি করে আপনার ওয়ালে বা বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে সঠিক তথ্য জানতে সাহায্য করুন)
https://www.facebook.com/physio.Drsaiful/
Unar post gulo porle mone hoy Uni Professor level er kew!!! Doctor ra taar vaat mere khacche tai unar raag… back pain holei tar kache refer korun ???