প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৬ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরেই করোনা টেস্টের সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। যার ফলে শনাক্তের সংখ্যাও কমেছে। এই টেস্ট কমার কারণে দেশের করোনা পরিস্থিতি আসলে কোথায় আছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। অনেকেই প্রশ্ন করছেন টেস্ট কেন কম করা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন, টেস্ট কমার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। আগে লক্ষণ না থাকলেও অনেকেই করোনা টেস্ট করতে আসতো, একজনের সঙ্গে আরও কয়েকজন এসে লাইনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করে যেতেন। ফলে ভিড় অনেক বেশি হত। এখন তেমনটা হচ্ছে না। লক্ষণ ছাড়া তেমন কেউ এখন টেস্ট করাতে আসছে না। মানুষ টেস্ট বিমুখ হয়ে পড়েছে। একটা বা দুটো কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, বরং এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, টেস্ট না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এর ফলে মানুষের মধ্যে টেস্টের ব্যাপারে একটা আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এই আস্থার সংকটের কারণে করোনা টেস্ট কমছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, মানুষ এখন করোনাকে আগের মতো আর ভয় পাচ্ছে না। মানুষের মাঝে করোনা নিয়ে একটা ভয়ডরহীন ভাব চলে এসেছে। এজন্যেও টেস্ট কমেছে।
কিছুদিন ধরে টেস্ট কমার পেছনে আরেকটি কারণ হিসেবে ডা. আব্দুল্লাহ মনে করেন যে, স্পষ্টভাবেই এখন বলা হচ্ছে যে, যাদের শুধু লক্ষণ থাকবে, তারাই কেবল টেস্ট করবে, অন্যদের টেস্ট করার দরকার নেই। এ কারণে টেস্টের সংখ্যা কমেছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই ব্যক্তিগত চিকিৎসক ধারনা করেন যে, করোনার টেস্ট কমার প্রধান একটি কারণ হলো, টেস্টে ফি ধার্য করা। ২০০ বা ৫০০ যেটাই হোক না কেন, অনেকেই এই টাকাটা টেস্টের পেছনে খরচ করতে চাইছে না। করোনার কারণে বহু মানুষ কর্মহীন হয়েছে। এমন অবস্থায় দেশের বড় একটা অংশের কাছে টাকা দিয়ে টেস্ট করানোটা বাড়তি খরচ বলে মনে হচ্ছে।
ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, আগে করোনা পজিটিভ হওয়ার পর কয়েক দফায় সবাই টেস্ট করতো, এখন সেই হারটা কমে গেছে। ১৪ দিন পার হয়ে গেলে কেউ যদি সুস্থ হয়ে যায়, তার যদি কোনো লক্ষণ বা অসুস্থতা না থাকে, তারা আর দ্বিতীয়বার টেস্ট করাতে যাচ্ছেন না। ফলে টেস্টের সংখ্যা কমছে।
বন্যাও করোনার টেস্ট কমার একটা বড় কারণ বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বড় একটা অংশ এখন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার মানুষজন পানিবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছে। দুবেলা, দুমুঠো খাবার জোটাতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা টেস্ট করতে আসতে তারা খুব একটা আগ্রহী হচ্ছে না এটাই স্বাভাবিক।
টেস্ট কমার কারণ হিসেবে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ আরও বলেন যে, ঘরে করোনা চিকিৎসার পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষের এখন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। গরম পানি খাওয়া, গার্গল করা, ভাপ নেওয়া এগুলো তো আছেই, সেই সঙ্গে কিছু ওষুধ পত্রের নামও মানুষ এখন জানে। করোনার লক্ষ্মণ দেখা দিলে তারা টেস্ট করাটাকে ঝামেলা মনে করছে। এর থেকে বাসায় বসে চিকিৎসা করাটাকেই মানুষ ঝামেলাহীন মনে করছে এবং সেই পথেই হাঁটছে, ফলে টেস্ট কমছে। তাছাড়া টেস্টের জন্য লম্বা লাইন ধরা, রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়া এবং নানা হয়রানি এবং সময়ক্ষেপন এড়াতেও মানুষ এখন করোনা টেস্ট করতে ততটা আগ্রহী হচ্ছে না বলে মনে করেন এই প্রবীণ চিকিৎসক।
তবে তিনি সবাইকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, লক্ষণ না থাকলে টেস্ট না করা অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু যাদের লক্ষণ উপসর্গ আছে, তাদের অবশ্যই টেস্ট করাতে হবে। সেই সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।