শুরু হতে যাচ্ছে জেনেটিক/বংশগত রোগ নির্ণয়ে নিউবর্ণ স্ক্রিনিং।
কপালের লিখন না যায় খন্ডন! লেখালেখির জন্য কপাল অনেক ছোট যায়গা মনে হলেও এর চেয়ে লক্ষগুণ ছোট যে যায়গায় আমাদের সারাজীবনের রূপরেখা তথা ব্লু প্রিন্ট লেখা আছে সেটা হলো DNA। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব বেশি ভাগ্যবান মনে হয় এই ভেবে যে আমি আপাতদৃষ্টিতে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ, জন্মগ্রহন করেছিলাম কোন রকম জেনেটিক ত্রুটি ছাড়াই সেই দেশে যে দেশে থ্যালাসেমিয়ার বাহক ১ কোটিরও বেশি, যে দেশে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজম (বংশগতভাবে থাইরয়েড হরমোনের অভাব জনিত রোগ) নিয়ে প্রতি ১৩০০ জনে ১ জন শিশু জন্মগ্রহন করে। এছাড়াও আরো কত জেনেটিক সমস্যা নিয়ে শিশুরা জন্মগ্রহন করছে তার কোন তথ্যই আমাদের কাছে নেই অথচ আশেপাশে দেশের তথ্য বলে এমন রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে মোটেও কম নয়।
জেনোমিক মেডিসিন চিকিৎসা বিজ্ঞানের সেই বিভাগ যা এ ধরনের রোগ নিয়ে চিন্তা করে, তার নির্ণয় পদ্ধতি ও চিকিৎসা নিয়ে গবেষনা করে ও সে অনুসারে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও অনেক আগে থেকেই মেডিসিনের এই বিভাগে যথেস্ট উন্নতি লাভ করেছে এবং সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরমর্শ দিয়েছে যেসব দেশে শিশুমৃত্যুর হার ৫০ এর কম সেসব দেশে জেনেটিক সেবা কার্যক্রম চালু করা উচিত। সে হিসেবে বাংলাদেশ এই কার্যক্রম চালুর অন্যতম দাবিদার কেননা বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার বর্তমানে প্রতি হাজারে ৩২.৯।
Newborn Screening জেনোমিক মেডিসিন এর একটি অংশ যার মাধ্যমে শিশুর জন্মের পরপরেই নির্দিষ্ট কিছু বংশগত রোগের বিশেষ করে যেগুলোর চিকিৎসা আগে আগে শুরু করলে সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব সেসব রোগের জন্য পরীক্ষা করে দেখা হয়। বহু আগে থেকেই যুক্তরাস্ট্রে ৩০টি রোগ, যুক্তরাজ্যে ৯টি, ফ্রান্সে ৫টি, জার্মানিতে ৭টি, নেদারল্যান্ডে ৪টি, ইরানে ৩টি, কাতারে ২টি রোগ এবং মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশে আরো কিছু রোগের জন্য নিয়মিত নিউবর্ন স্ক্রিনিং করা হয়। এসব দেশে এটি করা হয় প্রতিটি শিশুর জন্যই, সরকারি ভাবে। সম্প্রতি ভারতে ৪টি রোগের জন্য সরকারি ভাবে নিউবর্ণ স্ক্রিনিং চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিক সমিতি এদেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রনে উন্নত চিকিৎসা ও প্রযুক্তির ব্যাবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিলো ৬০ বছর আগে। সম্প্রতি এরই ধারাবাহিকতায় তারা যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান National Health Service (NHS) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এদেশে জেনোমিক মেডিসিন এর ভিত্তি তৈরির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নে। এ চুক্তির আলোকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি , NHS এর সহায়তায় নিউবর্ণ স্ক্রিনিং প্রকল্প শুরু করেছে। সহজ কথায় নিউবর্ণ স্ক্রিনিং হলো, শিশুর জন্মের পরপরেই তার শরীর থেকে কয়েক ফোটা রক্ত সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কিছু রোগের পরীক্ষা করা। উদ্দেশ্য হলো যদি রোগ ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে জন্মের ২য় বা ৩য় সপ্তাহ থেকেই চিকিতসা শুরু করা যেন রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হবার আগেই চিকিতসা আরম্ভ করা যায়, ফলে স্বাভাবিকভাবে বড় হতে পারে ও সুস্থ থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় দেরী হলে খুব বেশি ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই যত আগে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো।
যুক্তরাজ্যে ১৯৬০ সালে প্রথম Newborn Screening যে রোগটি দিয়ে তার নাম Phenyl Ketone Uria (PKU)।
এটি একটি জেনেটিক রোগ যার কারনে শরীরে একটি এনজাইম এর অভাব হয় যার ফলশ্রুতিতে শিশুর বিকাশ বিশেষ করে মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় মারাত্নকভাবে। অথচ আগে আগে নির্ণয় করা গেলে সামান্য কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এর মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। বিষয়টি অনুধাবন করে যুক্তরাজ্য এই রোগের জন্য প্রতিটি শিশুকেই জন্মের পরপরই পরীক্ষা করা আরম্ভ করে এবং পরবর্তীতে আরো ৮টি রোগ এই তালিকায় যুক্ত হয় যার মধ্যে আছে Congenital Hypothyroidism, Cystic Fibrosis, Sickle Cell Disease ইত্যাদি।
যদিও এধরনের রোগের ল্যাবরেটরি টেস্ট এর জন্য উন্নত মানের ল্যাবরেটেরি প্রয়োজন যা বেশ খরচ সাপেক্ষ কিন্তু সারা দেশের জন্য নিয়মিত ব্যবহার করা হলে খরচ অনেকাংশেই কমে আসে। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে এসব টেস্ট এর জন্য Rapid Diagnostic Kit তৈরি করা সম্ভব অনেকটা প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর মত যার জন্য কোন উন্নত ল্যাবরেটরি স্থাপনের প্রয়োজন নেই। এ ধরনের ডিভাইস কে বলা হচ্ছে Point of Care ডিভাইস অর্থাৎ রোগ নির্ণয় সেখানে বসেই চিকিৎসা সেবা। Congenital Hypothyroidism এর জন্য ইতিমধ্যে এমন ডিভাইস আবিষ্কৃত হয়েছে।
মাসখানেক পুর্বেই NHS Foundation Trust এর অধীন Sheffield Child Hospital এর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ Dr. Paul Dimitri, BIRDEM হাসপাতালে এই পয়েন্ট অফ কেয়ার ডিভাইস এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং তার দীর্ঘমেয়াদী ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন (চিকিৎসা নির্দেশনা) ও ফলোআপ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
NHS এর সহায়তায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি দেশব্যাপী তাদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে Congenital Hypothyroidism এর জন্য Newborn Screening প্রকল্প চালু করেছে। আপাতত মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অধীন BIHS হাসপাতালে সেবাটি দেয়া হচ্ছে। সেবার আওতায় স্বল্প খরচে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা ও ২ বছর পর্যন্ত ফলোআপ এর ক্লিনিক্যাল কেয়ার অন্তর্ভূক্ত। এরই মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত জেনেটিক রোগ নির্ণয় এর Newborn Screening বিস্তৃত আকারে শুরু হলো যা বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ছাড়াও NHS এর সহায়তায় সরকারি ভাবে Center for Medical Biotechnology এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইলট প্রকল্প শুরু করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সরকারি প্রচেস্টার অংশ হিসেবে আমরা The University of Sheffield, University if Bradford, NHS এবং অন্যান্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত সহযোগীতায় দ্রুতই দেশে নিউবর্ণ স্ক্রিনিং ও চিকিতসা সেবা কর্মকান্ড শুরু করবো। প্রাথমিক ভাবে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজম এবং থ্যালাসেমিয়ার জন্য ক্যারিয়ার স্ক্রিনিং কার্যক্রম এর উপর জোর দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রিভ্যালেন্স অনুসারে অন্যান্য জেনেটিক ডিজিজ যেমন Cystic Fibrosis, Inborn errors of Metabolism, DMD ইত্যাদি স্ক্রিনিং করা হবে।
লিখেছেন: ডা. মারুফুর রহমান অপু
Kothay kothay newborn screening hoçce,address ta dile valo hoy
Excellent
I worked with this team before when they first came to BD , I got the chance to be with them ….
Cost/test?
Accurate Life Care Bangladesh Limited is conducting Newborn Screening for 130+ conditions, most expanded NBS programme in Southeast Asia under license from PreventiNe Life Care Limited.
Contact:
Accurate Life Care Bangladesh Limited
Corporate Office:
Sky Touch, 43/R, 5/C West Panthapath
DHAKA 1215, BANGLADESH
Phone: 01755604304