সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
দেশে প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছ ‘স্কিন ব্যাংক’। গুরুতর দগ্ধ রোগীদের জন্য যা নতুন আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চারজন দাতার চামড়া ব্যবহার করে দু’জন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনও সম্পন্ন হয়েছে। রোগীদের শারীরিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ‘স্কিন ব্যাংক’ উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্কিন ব্যাংক গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন দুই বছরের শিশু হামিদা ও আট বছর বয়সী মরিয়মের শরীরে চামড়া প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।
হামিদার শরীরের ৩৫২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর গরম পানিতে পুড়ে তার শরীরের ৪২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তার রক্তে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ (সেপ্টিসেমিয়া) দেখা দেয় এবং ক্ষত থেকে ক্রমাগত রক্ত ও পুঁজ বের হচ্ছিল। চিকিৎসকরা ১৪ জানুয়ারি স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া প্রতিস্থাপন করলে সংক্রমণ কমতে শুরু করে।
মরিয়মের শরীরের ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে স্কিন ব্যাংকের সংরক্ষিত চামড়া দিয়ে। গ্যাসের চুলার আগুনে পুড়ে মরিয়মের শরীরের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চামড়া প্রতিস্থাপনের পর তার অবস্থারও উন্নতি হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক কীভাবে কাজ করে?
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গুরুতর দগ্ধ হলে শরীর থেকে পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ দ্রুত বেরিয়ে যায়। যদি পোড়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং রোগীর শরীর থেকে চামড়া নেওয়া সম্ভব না হয়, তখন স্কিন ব্যাংক থেকে সংরক্ষিত চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে এবং দ্রুত নতুন চামড়া তৈরি হতে সহায়তা করে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কিন ব্যাংক একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে এটি দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে।
কীভাবে দান করবেন চামড়া?
স্কিন ব্যাংকের কো-অর্ডিনেটর ডা. মাহবুব হাসান জানান, সুস্থ ব্যক্তি জীবদ্দশায় একাধিকবার চামড়া দান করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করা হয়। বিশেষ ডার্মাটম যন্ত্রের সাহায্যে শরীরের সুবিধামতো স্থান থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। দাতার হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই, ১৪ দিনের মধ্যেই শরীরে নতুন চামড়া তৈরি হয়ে যায়।
মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব, যদি লাশ সংরক্ষিত থাকে। সাধারণত পিঠ ও পা থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, ‘চামড়া দানে আইনগত কোনো বাধা নেই। স্কিন ব্যাংকের মাধ্যমে দান করা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপন পুরোপুরি নিরাপদ।’
স্কিন ব্যাংকের ইনচার্জ তামান্না সুলতানা বলেন, বার্ন ইনস্টিটিউটের ১২৩৯ নম্বর কক্ষে স্কিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এখানে উন্নত প্রযুক্তির ৮টি বিশেষ ফ্রিজের মাধ্যমে সংরক্ষণ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে স্কিন ব্যাংকের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হলে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা অনেক সহজ হবে। পর্যাপ্ত দাতার অংশগ্রহণ থাকলে এটি দগ্ধ রোগীদের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস