দেশে প্রথম বারে ৫ জন রোগীর রিও ভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। এই ভাইরাস নিশ্চিত ভাবে শনাক্ত করেছে ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলোজি ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)। তবে তেমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয় নি এবং রোগীরা নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে গেছে। তবে আমাদের দেশে রিও ভাইরাস প্রথমবার শনাক্ত হওয়ায় আমরা জানবো এই ভাইরাসটি সম্পর্কে।
রিও ভাইরাস (Reovirus) হলো ডিএসআরএনএ (ডাবল-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ) ভাইরাসের একটি পরিবার, যা প্রাণী, উদ্ভিদ এবং ছত্রাকসহ বিভিন্ন জীবকে সংক্রমিত করতে পারে। “রিও” শব্দটি এসেছে “Respiratory Enteric Orphan” থেকে, যা নির্দেশ করে যে এই ভাইরাসগুলি শ্বাসযন্ত্র ও অন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করতে পারে, তবে অনেক সময় তারা রোগ সৃষ্টি না করেও সংক্রমিত থাকে।
রিও ভাইরাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটির ডিএসআরএনএ জিনোম। এটি একটি সেগমেন্টেড জিনোম যা ১০টি সেগমেন্টে বিভক্ত। এদের কিউবিক আকৃতির ক্যাপসিড (প্রোটিন আবরণ) রয়েছে, যা ভাইরাসকে বিভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে। রিও ভাইরাস সাধারণত উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং খাদ্য, পানি কিংবা সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
লক্ষণ
রিও ভাইরাস প্রাথমিকভাবে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (পাকস্থলী ও অন্ত্র) এবং শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। এটি মানবদেহে প্রবেশের পর অন্ত্রের কোষে বৃদ্ধি পায় এবং সংক্রমণ ঘটায়। যদিও অনেক সময় রিও ভাইরাস উপসর্গহীন থাকে, কিছু ক্ষেত্রে এটি ডায়রিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং বমির মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। শিশু এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমসম্পন্ন ব্যক্তিরা রিও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:
বর্তমানে রিও ভাইরাস সংক্রমণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। সাধারণত সংক্রমণ স্বাভাবিকভাবেই নিরাময় হয়। তবে, জটিল সংক্রমণের ক্ষেত্রে লক্ষণ নির্ভর চিকিৎসা (যেমন ডায়রিয়ার জন্য স্যালাইন দেওয়া) করা হয়। ভাইরাস প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং নিরাপদ খাবার ও পানি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রিও ভাইরাস একটি বহুমুখী ভাইরাস যা বিভিন্ন প্রজাতির জীবকে সংক্রমিত করতে সক্ষম। এটি সাধারণত গুরুতর রোগ সৃষ্টি করে না, তবে কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণীয় স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় এর ভূমিকা ভবিষ্যতে ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। রিও ভাইরাস সম্পর্কে আরও গভীর গবেষণা ভাইরাসটির কার্যকারিতা এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
প্রতিবেদক: এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন