যুদ্ধ কিংবা জাতিগত দাঙ্গা একটি মানবিক বিপর্যয়। দিনশেষে তাতে মানুষই মরে। গত কিছুদিন ধরে মায়ানমারে রোহিংগা সম্প্রদায় ও সরকার পক্ষের সংঘাতে প্রচুর মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আসছে। তাই সমস্যাটি এখন শুধু মায়ানমারে সীমাবদ্ধ নয়, বাংলাদেশ এতে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও জড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের তাদের সাহায্য করা উচিত কি উচিত নয় সে প্রসঙ্গে না যেয়ে বরং একটু ভিন্ন আঙ্গিকে বলি, সেটা হলো স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সমতল ভূমি এবং ইমিউনাইজেশন পলিসি খুব শক্ত হওয়ায় বাংলাদেশে ভ্যাক্সিন প্রতিরোধযোগ্য রোগের প্রকোপ কম। আমরা পোলিওমুক্ত হয়েছি ২০১৪ সালে। কিন্তু মায়ানমারে অবস্থা এমন নয়।
পোলিওসহ, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস, মিজেলস, মামপস, হুপিং কফ ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কভারেজ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে ৭০-৮০%। সুতরাং অনুপ্রবেশকারীদের অনেকেই এই রোগ নিয়ে আসছেন। তারা যদি নির্দিষ্ট ক্যাম্পে থাকেন তাতে ঝুকি কিছুটা কমে। তবে যারা লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছেন তাদের মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক।
তাই সীমান্ত উপকূলবর্তী যে সকল এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং আরো যে সকল এলাকায় এই অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে সে সকল অঞ্চলে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিশেষ করে শিশুদের অনেক সংক্রামক রোগ যা আমরা ইতিমধ্যেই নির্মূল করেছি বা নির্মূল করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। এই অনুপ্রবেশের কারনে সেখানে সকল রোগের প্রাদুর্ভাব বা পুনঃসংক্রমণ এর সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে।
এ ধরনের অনাকাঙ্খিত কোন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ বদ্ধপরিকর ও অগ্রীম সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
– ইতিমধ্যেই টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি সহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিশেষ টিম গঠন করে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ইমিউনাজেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আর সিভিল সার্জনগণ স্টেশনে অবস্থান করে বিষয়টি তদারকি করছেন।
– স্থানীয় মাঠ কর্মীরা ইতিমিধ্যেই নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শিশুদের সনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন।
ভ্যাক্সিনেশন ও চিকিৎসাঃ
আমাদের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে আমরা এইসব শিশুদেরকে ২ টি ভ্যাক্সিন (যথাঃ ১। ওপিভি – ওরাল পোলিও ভ্যাক্সিনঃ ২ ফোঁটা এবং ২। এমআর ভ্যাক্সিন – হাম ও রুবেলা ভ্যাক্সিন) এবং এর সাথে ভিটামিন এ ক্যাপসুল (১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য – ১ লক্ষ ইউনিটের নীল ক্যাপসুল এবং ১ থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত ২ লক্ষ ইউনিট এর লাল ক্যাপসুল) দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং তা বিতরন শুরু হচ্ছে।
– উপকূলবর্তী এ সকল এলাকায় ভ্যাক্সিন ও ঔষধের যথেষ্ট মজুদ নিশ্চিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ভান্ডারকে প্রস্তুত ও সতর্ক রাখা হয়েছে।
– ইতিমধ্যেই এই সব এলাকার স্বাস্থ্য কর্মীদের ছুটি সীমিত করা হয়েছে এবং সমন্বয় সভার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বেশ কিছু উন্নয়ন সহকর্মী সংগঠন এ ব্যাপারে সহায়তা করছেন। International Organization for Migration Bangladesh এর হয়ে চিকিতসকদের সোশাল মিডিয়া গ্রুপ প্ল্যাটফর্ম এডমিন Dr. Tasnuba Nourin প্রচন্ড নিরাপত্তা ঝুঁকির মাঝেও টেকনাফে কাজ করছেন। তিনি সহ সকল চিকিতসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জানাই অশেষ শ্রদ্ধা।
এ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য জানতে / জানাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বাতায়নের বিশেষ নম্বরটি আপনাদের জন্য ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে। নম্বরটিঃ ‘১৬২৬৩’ (মনে রাখুন এক_বাষট্টি_তেষট্টি)। স্বাস্থ্য বাতায়নে ফোন করে রোগের চিকিৎসা, বিবরণ ও যে কোন স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়া যাবে।
এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের নম্বরে (০১৭৫৯-১১৪৪৮৮) এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।
যে কোন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
সেবা নিন, সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্র: ডাঃ রাজীব দে সরকার
সম্পাদনায় ঃ ডাঃ মারুফুর রহমান অপু
ছবি ঃ NEW YORK TIMES