ডাঃ সাইফুল ইসলাম (প্রবাসী লেখক, IGMH – Indira Gandhi Memorial Hospital, মালদ্বীপ)
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি বিশেষ করে ফেসবুকের অতি জনপ্রিয়তার দরুন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে আমাদের নিরীহ ভালমানুষ সাংবাদিক ভাইয়েরা।
মেডিক্যাল কলেজের প্রথমবর্ষের ঘটনা। হাসপাতাল কর্মচারী
– ডাক্তার-ছাত্র আর রোগীর লোকজনের মাঝে এক এলাহি কাণ্ড ঘটে গেল। ছবিসহ পরদিন সকালে প্রথম আলোতে নিউজ আসল। পুরো লেখা পরে থ হয়ে গেলাম; আসল ঘটনার ধারে কাছেও নেই। এমনকি ছবিতে যে ক্যাপশন দিয়েছে সেটাও ভুল। হাসপাতালের এক তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীকে বলেছে রোগীর লোক আর রোগীর লোককে বলেছে মেডিক্যাল ছাত্র। সাংবাদিক ভাইজান আসল ঘটনা থেকে তিন আঙ্গুলের এক চিমটি নিয়ে এক মুঠো পাটালি গুড় দিয়ে স্যালাইন বানিয়েছেন। দেশের পাঠক জনতা আয়েশ করে সেই স্যালাইন খেয়ে ঢেঁকুর তুলেছেন।
পত্রিকায় ছাপা হওয়া যে কোন খবরের আসল ঘটনা কেউ চাক্ষুষ দেখেছেন এরকম প্রতিটি মানুষেরই বোধ করি এই অভিজ্ঞতা আছে। ঘটনা এক খবর একান্ন। সম্ভবত সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজকে এক টক শোতে বলতে শুনেছিলাম – একটা খবর পড়ে বা শুনে তার নাকি প্রথম যে কথাটা মনে হয় তা হল ‘ঘটনা আসলে কি ঘটেছিল?’। এই হল সাংবাদিকতার হাল।
সুতরাং একথা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় যে মিডফোর্ডে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক ভাইয়েরা বার্জার কালার ব্যাংকের সব রঙ ঢেলে দিয়ে গল্প ফাঁদবেন। আসল ঘটনা আরামছে পাশ কাটিয়ে এমনভাবে সাহিত্য রচিবেন যে মনে হবে সাংবাদিক ভাইয়েরা ফিডার খাওয়া শিশুর চেয়ে নিষ্পাপ। আর সেই খবর পড়ে দেশের বিদগ্ধ নাগরিকবৃন্দের মানবতাবোধ এদিক-ওদিক দিয়ে উঁকি দেবে। এখানে একটা ছোট্ট সমস্যা আছে। ঐ যে শুরুতেই বললাম ফেসবুকের কথা, সমস্যাটা এখানেই। যেখানেই যে ঘটনা ঘটুক না কেন কেউ না কেউ আসল ঘটনার সাক্ষী থেকেই যায়; আর সেটা অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
উত্তম মধ্যম খেয়ে সাংবাদিক ভাইজানেরা এখন যত বড় উপন্যাসই রচনা করুক না কেন আমি ব্যক্তিগত ভাবে একটা যায়গায় খুশি। একজন মেডিক্যাল অধ্যাপকের জামার কলার চেপে ধরাটা যে কত বড় আস্পর্ধা সেটা ওদের জানা ছিলনা, এখন থেকে আশা করি বুঝতে শিখবে। আর পরে যদি কোনদিন ভুলেও যায় তবে পাছায় হাত দিলেই সামান্য আদর আপ্যায়নের কথা মনে পড়বে। মনে পড়বে- যে লোকের কলারে হাত দিতে যাওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিল, যে অধ্যাপক ডাক্তারকে চিকিৎসা শেখাতে গিয়েছিল তার চুলের ডগার সমান যোগ্যতা অর্জন করতে হলে তাকে আরও কয়েকবার জন্ম নিতে হবে।
আমি সাধারণত ভায়োলেন্সের পক্ষে নই। কিন্তু কেউ যখন স্বেচ্ছাচারিতার শেষ সীমানায় পৌঁছে যায় তখন যে মানুষগুলোর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে তাদের রুখে দাঁড়ানোর অধিকারকে আমি অবশ্যই সমর্থন করি। মিডফোর্ডের ছোটভাইয়েরা আমার তরফ থেকে একটা সাধুবাদ রইল তোমাদের জন্যে। রোগীর জন্যে নিজের জীবন প্রয়োজনে উজাড় করে দাও, সেইসাথে ধান্দাবাজ-সুবিধাবাদীদের দৌড়ের উপরে রাখ।