প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৭ জানুয়ারি, ২০২১, বুধবার
ডা. আসির মোসাদ্দেক সাকিব
ডেন্টাল সার্জন,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
বাচ্চাদের আঁকাআঁকি দেখে মানসিক অবস্থা নির্ণয়ঃ
বাচ্চাদের আঁকাআঁকি দেখে বিশাল জিনিস বুঝতে পারবেন। বাচ্চাদের ৭ বছরের পরে বিষয়ভিত্তিক আঁকার ক্ষমতা আসে। যেমনঃ সমুদ্র ও এর ভেতরের বিভিন্ন মাছ, বাড়ির ভেতরে বিভিন্ন ফার্নিচার, ফ্যামিলি মেম্বার ইত্যাদি। এসময় মেয়ে শিশুরা গোল দাগ দিয়ে বস্তু আঁকতে বেশি পছন্দ করে আর ছেলে শিশু সোজা দাগের জিনিস গুলো। মেয়ে বাচ্চারা রঙ শুরু করে উজ্জ্বল ও উষ্ণতা বোঝানোর রঙ গুলো দিয়ে যেমন গোলাপি, হলুদ, কমলা ইত্যাদি। আর ছেলে বাচ্চা করে শীতলতা ও অন্ধকার বোঝানোর গাঢ় রঙ যেমন নীল, খয়েরী, কালো, গাঢ় সবুজ ইত্যাদি দিয়ে।
এগুলো স্বাভাবিক কথা বললাম।
এবারে আচরণের কথায় আসি। ছেলে মেয়ে সবার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে এসব।
১. যারা কালো আর পার্পল রঙ বেশি ইউজ করে এরা পরের লাইফে বেশি চাহিদাসম্পন্ন হয়। খালি বায়না করে ঘন ঘন।
২. নীল বেশি ইউজ করলে যত্নশীল ও বন্ধুবৎসল হয়
৩. লাল বেশি ইউজ করলে এরা খুব আনুষ্ঠানিকতা প্রিয় হয়। প্রত্যেক প্রোগ্রামে এরা জয়েন করে, এক্সট্রোভার্ট হয়।
৪. গোলাপি হলো ভবিষ্যৎ প্রেমাকাঙ্ক্ষীদের প্রিয় রঙ।
৫. সবুজ বেশি দিলে এরা জ্ঞানপিপাসু,অনুসন্ধিৎসু আর কল্পনাপ্রিয় হয়।
৬. হলুদ প্রিয় বাচ্চারা খুব বুদ্ধিমান আর চালাক হয় পরবর্তীতে।
এবারে আসি খাতায় আঁকার পজিশন কী বলে আচরণ নিয়ে?
১. ফ্যামিলির ছবি খাতায় আঁকলে যে ক্যারেক্টর কে সে পৃষ্ঠার বামে রাখে বোঝা যাবে তাকে নিয়ে অতীতের স্মৃতি ভালো ও নিজেকে আগলে রাখার জন্য তাকে প্রয়োজন ভাবে বাচ্চা।
২. পৃষ্ঠার ডানের জনকে নিয়ে বাচ্চা ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন দেখে ও তার সাথে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ রাখতে চায় বাচ্চা।
৩. পৃষ্ঠার মাঝের ক্যারেক্টর গুলাকে সে সুরক্ষিত ভাবছে।
৪. যদি সে নিজেকে পৃষ্ঠার কোণায় আঁকে তবে বাচ্চা নিজেকে ফ্যামিলিতে নিরাপত্তাহীন ভাবছে।
৫. কোন পরিবারের সদস্যকে আগে আঁকা মানে সে তাকেই বেশি পছন্দ করে।
৬. কাউকে তুলনামূলক বড় সাইজ করে আঁকলে বুঝবেন তাকে বাচ্চাটা ফ্যামিলিতে কর্তা ভাবে।
৭. কোন সদস্যকে যদি না আঁকে তবে বুঝবেন যে তাকে মন থেকে বাচ্চা পছন্দ করে না।
এরপরে শুধু একটা নির্দিষ্ট মানুষের ছবি (বাবা, মা, ভাই/ বোন, দাদাদাদী…ইত্যাদি) আঁকতে দিলে সেখান থেকে কী বুঝবেন?
১. বাচ্চা যদি কানবিহীন মানুষ আঁকে তবে বুঝবেন যে বাচ্চা সেই লোককে পাত্তা না দেয়ার স্বভাব পেতে যাচ্ছে।
২. ঠোঁট বিহীন করে আঁকলে বাচ্চা ওই লোকের বিরুদ্ধে মনের ভেতরে না বলা অনেক কথা পুষে রেখেছে। এরকম ছবি আঁকতে দেখলে বাচ্চার সাথে আরো ফ্রি হোন।
৩. অঙ্কিত লোকের যদি হাতের তালু বিশাল করে আঁকে তবে বাচ্চা বুঝে যে ওই লোক ফ্যামিলির চেয়ে বাইরে সময় বেশি দেয়।
৪. বাচ্চা হাতের বাহু খাটো করে আঁকা মানে ওই লোককে সে ইমেচিউর ভাবে দেখে।
বাচ্চাকে গাছের ছবি আঁকতে বললে-
১. যদি আঁকতে না চায় তবে বাচ্চা খুব মানসিক কষ্টে আছে
২. গাছের ডালপালা বড় করে আঁকার অর্থ হলো বাচ্চা খুব মিশুক হবে সবার সাথে।
৩. ডালপালা ছোট কিন্তু কান্ড বড় গাছ আঁকলে বাচ্চা ভীতু, ইন্ট্রোভার্ট হবে।
৪. ফুল ফল সমৃদ্ধ গাছ আঁকা বাচ্চারা সুপার ক্লাসি আর কল্পনাপ্রবণ হবে।
ঘর আঁকতে দিলে-
১. দরজা জানালা দেয়া ঘর আঁকলে ও দরজার সামনে রাস্তা লাগানো আঁকলে এরা এক্সট্রোভার্ট ও ভ্রমণপিয়াসী হবে ভবিষ্যতে।
২. আর খুব ডিটেইলস ভাবে অর্থাৎ ঘরের পাশের সব জিনিসসহ আঁকলে এরা খুবই খুশি মনের হয় ও দুঃখ সহজেই কাটাতে জানবে।
৩. বৃষ্টি সহ ঘরের জানালা দরজা বন্ধ করা আঁকলে বোঝা যাবে তার ডিপ্রেশন বেশি হবে, আর রোদ আঁকলে তার উল্টো।
এবার সব মিলিয়ে বলিঃ
আবেগী বাচ্চা আঁকবেঃ- ঘাড় বিহীন বিশাল মানুষ ও মিল বিহীন হাত পা।
টেনশন যুক্ত বাচ্চা আঁকবেঃ- মেঘ, উড়ন্ত পাখি ও চোখ বিহীন মানুষ।
লাজুক বাচ্চা আঁকবেঃ- ছোট সাইজের মানুষ, নাক বিহীন মানুষ, ছোট হাত পা ওয়ালা মানুষ।
রাগী বাচ্চারা আঁকবেঃ- দাঁত ওয়ালা মানুষ, বিশাল ও লম্বা হাত যুক্ত মানুষ, ট্যারা চোখের মানুষ। এরা খাতায় খুব প্রেশার দিয়ে আঁকে যার ছাপ দুই তিন পেজ পরেও দেখা যায়।
নিরাপত্তাহীন অসহায় বাচ্চা আঁকবেঃ- দৈত্যের মতো মানুষ, দীর্ঘ মানুষ, হাতবিহীন ও ক্ষুদ্র মাথা ওয়ালা মানুষ।
সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা বাচ্চারাঃ- একটানে কিছু আঁকতে পারে না, টুকরো টুকরো লাইনে হালকা ভাবে আঁকে।
পরিশেষে বলি বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্য বুঝতে চাইলে আপনি এদের আঁকাআঁকির দিকেও খেয়াল দিতে পারেন।