রমজান মাস তাই রাত্রে আগমন । বিরক্ত করব কিছুক্ষন । গলা শুকিয়ে গেলে পানি খাবেন , ক্ষিদা লাগলে ভাত । আশা করি পড়বেন , বাস্তবে মিলিয়ে নিবেন এবং ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন ।
ব্যাস , প্রোমশন শেষ । বকবক শুরু করি তাহলে । . কিছুদিন আগে একটা অনলাইন জরিপে অংশ নিয়েছিলাম । সেখানে একটা প্রশ্ন ছিল , “ক্যারিয়ার সিলেকশনের সঠিক সময় কোনটি ??? ফার্স্ট /সেকেন্ড / থার্ড / ফোর্থ / ফাইনাল ইয়ার নাকি ইন্টার্নী !!!! নাকি নতুন ডাক্তার !!!! ”
আজ বকবকানিটা এই প্রশ্নটার আলোকেই ।
সবার স্বপ্ন বড় ডাক্তার । স্বপ্নে ভাল ডাক্তার হতে কয়জন চায় সেটা একটা প্রশ্ন !!!
” দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষাকাল ” হাদিসটির বাস্তব প্রয়োগ মনে হয় ডাক্তারি বিদ্যায় । মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় । শুরু হয়ে যায় বড় ডাক্তার হবার প্রচেষ্টা । চলতে থাকে নিরন্তর ।
ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ার কেটে যায় আইটেমে “আমি আট পাইছি , ও পাইছে ছয় ” এই আনন্দে আর বিষাদে । ডাক্তার হবো , এটাই মূল প্রতিপাদ্য বিষয় এসময়টাতে । একচ্যুয়ালী এর বেশি ভাবনাটা পাকনামোর আওতাতেও ফেলেন অনেকে । তাই সেদিকে হাটে না পিচ্চিগুলো বা হাটলেও বলে না ।
জরিপের ফলাফলে তাই ফোকাসড হয়েছিল থার্ড ইয়ার এবং ফোর্থ ইয়ারের সময়টাকে । এসময় একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট মোটামুটি বুঝে যায় মেডিকেল প্রফেশন বা এডুকেশন সিস্টেম সম্পর্কে । কারন , এসময়টাতে একাধারে প্যারা ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল ক্লাস সাইমুলটেনাসলি চলে ।
সেই হিসেবে এই সময়টাতে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট এর উচিত প্রাথমিক একটা লক্ষ্য ঠিক করে ফেলা যে সে কোন দিকে নিবে তার ক্যারিয়ার । কোন দিকে গেলে হবে যে বড় ডাক্তার । সে কি আজিজুল কাহার স্যার হবে , নাকি নাসিম আক্তার চৌধুরী হবে !!! সে কি মহসিন খলিল স্যার হবে , নাকি আকরাম স্যার হবে !!! নাকি সে ওহাব স্যার বা শহিদ স্যার হবে !!!
বড় হতে ইচ্ছা লাগে । ইচ্ছাটাকে ফোকাসড করা লাগে । ফোকাসের দিকে ডেসপারেটনেস লাগে । হুট করে হয়ে যায় না কোনো কিছুই ।
ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে ” মুখ দিয়েছেন যিনি , আহার দিবেন তিনি ” এই প্রবাদ খাটে না । তার উপর , ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং টাইম ইজ মানি ।
সময় যত নষ্ট , আপনার বড় ডাক্তার হওয়াটাও ততোই বিলম্বিত ।
ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে যদি তোমার ডেড বডি , ভিসেরা , ফরমালিন , ডিসেকশন , বোনস এর সাথে প্রেম হয়েই যায় তাহলে তুমি তোমার লক্ষ্য সেদিকেই ঠিক করে ফেলো । Anatomy is the subject of choice for ur carrier . পরে মত বদলাবে না ,এটা আমি বলছি না । তবে প্রথম ভালবাসা বলে একটা কথা কিন্তু থেকেই যায় । প্রি-ক্লিনিক্যাল বলে অনেকেই অনুতসাহিত করতে পারে । কিন্তু তাতে কি ??? তুমি কি সেটা তুমি নিজেই জানো । মহসিন খলিল স্যার বা হারুন স্যার , ইনারা কিন্তু প্রি-ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টেই দেশ নন্দিত । টাকা না হয় তোমার কম হবে , কিন্তু মনের প্রশান্তিটা হবে অনাবিল । সময় থাকবে পরিবারের জন্য, গবেষনার জন্য ।
ফিজিওলজি তোমার ভাল লাগত এটা তুমি বুঝছো থার্ড ইয়ারে প্যাথোলজি পড়তে গিয়ে । প্যাথলজির ইন্টারেস্ট, ফিজিওলজির প্রতি ভালবাসা সহায়ক মেডিসিনের জন্য । একঢিলে তিন পাখি তোমার হাতে ।
ফিজিও প্রি-ক্লিনিক্যাল সাবজেক্ট , প্যাথো প্যারা-ক্লিনিক্যাল । আর মেডিসিন সোললি ক্লিনিক্যাল । তুমি যদি নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ হও তাহলে ফোকাসড হও ফিজিওলজিতে । টিচিং হলো নির্ঝঞ্ঝাট পেশা, আসবা – ক্লাস নিবা – বাসায় ফিরে যাবা ; ঝামেলা মুক্ত জীবন । প্যাথোলজির ইন্টারেস্ট তোমাকে দুই দিকেই লাভবান করবে । এটা একাডেমিক এবং ক্লিনিক্যাল দুই দিকেই এ্যাপ্লিকেশন আছে । এখানে তুমি শেখানোর পাশাপাশি ডিল করতে পারবা হসপিটালাইজড পেশেন্ট । আর যদি তুমি ব্যস্ততাকে ভালবাসো , অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ পছন্দ করো তাহলে ফিজিও আর প্যাথোর কম্বো প্যাক মেডিসিন তো থাকছেই । choice is urs .
ল্যাবে কাজ করার আগ্রহ যদি হয় সহজাত , তাহলে ইউ শুড ট্রাই ফর বায়োকেমিস্ট্রি ।
রক্ত , কাটা , ফাটা , ভাঙ্গাচোরা এসমস্ত জিনিসে যদি তোমার গা গুলিয়ে না ওঠে বা আর্টিস্ট হিসেবে মনে করো নিজেকে তাহলে সার্জারি হবে তোমার ডেস্টিনেশন । হতে পারে সেটা জেনারেল সার্জারি বা অর্থোপেডিক্স সার্জারি । কারন , সার্জনরা হলো সুনিপুণ আর্টিস্ট ।
আমাদের সার্জারির প্রফেসর স্যারের বক্তব্য হলো , ” সার্জারিতে ক্যারিয়ার সময়ের দাবি বুঝে সেট করা উচিত । এখন জেনারেল এর চেয়ে সুপারস্পেশিয়ালিটিতে মনোযোগ দেয়া উচিত বেশি । ”
থার্ড -ফোর্থ ইয়ারে এতটুকু যদি ভেবে রাখতে পারো তাহলেও অনেকটা কাজ এগিয়ে থাকবে । এট লিস্ট পাজেলড হবার চান্স কমে যাবে পরবর্তীতে ।
ফাইনাল ইয়ারে উঠে জাস্ট মোডিফিকেশন অফ প্রিভিয়াস থিংকিং । কারন , এখানে সব ওয়ার্ডে প্লেসমেন্ট । জাস্ট ভাল লাগাটাকে বাস্তবতা দিয়ে মিলিয়ে দেখাটা , নতুবা নতুন করে ভাল লাগাতেও পারো ।
আপনি যদি চশমা ছাড়া চোখে কম দেখেন , তাহলে কিন্তু অপথ্যালমোলজির কথাটা মাথায় রাখতে পারেন । কম দেখার কস্টটা আপনার চেয়ে কে ভাল বুঝবে বলেন !!!পেশেন্টের সাইকোলজি এবং পেশেন্টের ডিপেন্ডেন্সি দুইটাই আপনার পক্ষে থাকবে.
যারা জীবনে অনেক ছ্যাকা খেয়েছেন তাদের অবশ্যই কার্ডিওলজিয়ে যাওয়া উচিত। হৃদয় ঘটিত ব্যাপার আপনার চেয়ে ভাল কে আর বুঝবে বলুন !!!
বাচ্চাকাচ্চার শখ থাকলে ( মানে বাচ্চা কাচ্চাদের ক্যাচক্যাচানি ভাল লাগলে) পেডিয়াট্রিক্স ভাল ক্লিক করবে ।
অজ্ঞানপার্টির হাতে কোনোদিন অজ্ঞান হয়ে থাকলে এনেস্থেসিয়াতে গেলে কিন্তু মন্দ হবে না । তবে অনেক কস্ট , আর সাধারন লোকজন অজ্ঞান করা ডাক্তার বলে ডাকবে কিন্তু। .
বাংলালিংকের “নতুন কিছু করো” তে যদি বিশ্বাস থাকে তাহলে অনকোলজি , প্যালিয়েটিভ মেডিসিন , ফিজিক্যাল মেডিসিন, ফ্যামিলি মেডিসিন সহ আরো এমন নতুন অনেক সাবজেক্ট আছে বড় ডাক্তার হবার জন্য ।
ইন্টার্নীতে স্পেসিফিকেশন । “হ্যা , আমি এটাতেই যাবো । ” অন্য কোনোটাতেই নয় , এই মানসিকতা সেট করে ফেলতে পারেন ।
তবে অবশ্যই ডাক্তার হয়ে যাওয়ার আগে গোল সেট করাটা উচিত বলে সিনিয়র ভাইয়া আপুদের অভিমত । না হলে দু একটা fcps part 1 উদ্দেশ্যহীনভাবেই চলে যেতে পারে। সাথে সাত হাজার করে দু একবার।
ফাইনাল প্রফ দিয়ে দুই মাসে আরেকবার নিজের ইচ্ছাকে ঝালিয়ে নিতে চাইলে ভ্রমনে বের হোন নিম্নোক্ত হাসপাতালগুলোতে ………………
* পঙ্গু হাসপাতাল
* শিশু হাসপাতাল
* NICVD
* NIKDU
*NIO
* বক্ষব্যাধি হাসপাতাল , মহাখালি
* ক্যান্সার রিসার্স ইন্সটিটিউট
* ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
এর ভেতর দিয়ে আজকের মত বকবকানি শেষ করছি , তবে করছি না । বিশেষ অজ্ঞের বকবকানি নিয়ে লিখব সামনে আবার কোনো একদিন , নতুন কোনো কিছু নিয়ে …………… সেই পর্যন্ত ধন্যবাদ । আর কস্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না আপনাকে ।
লিখেছেনঃ নাসিম অনি